• NEWS PORTAL

  • বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫

Drama: Jamai Bou Chor
Drama: Jamai Bou Chor

বহিষ্কৃত অধ্যক্ষের দাপটে আতঙ্কে শিক্ষকরা, বিঘ্নিত পাঠদান (ভিডিও)

সাদ্দাম হোসাইন

প্রকাশিত: ১৬:৩৪, ৩০ জুলাই ২০২২

আপডেট: ২২:০৭, ৬ আগস্ট ২০২২

ফন্ট সাইজ

রাজধানীর মিরপুর কলেজের বহিষ্কৃত অধ্যক্ষ গোলাম ওয়াদুদ। তার বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ, অনিয়ম, দুর্নীতি আর যৌন হয়রানিসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। এসব কারণে তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বাতিল হয়েছে তার এমপিও। এরপরও কলেজে প্রভাব বিস্তার করে শিক্ষকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়ানো এবং পাঠদানে বিঘ্ন ঘটানোর অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।

কলেজটিতে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছেন এইচ এম মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘গোলাম ওয়াদুদকে কলেজ থেকে বহিষ্কার করা হলেও তার অনুসারী কিছু শিক্ষক কলেজ পরিচালনায় নানাভাবে বিঘ্ন সৃষ্টি করে আসছেন। যে কারণে গোলাম ওয়াদুদ থাকা অবস্থায় যেমন দুর্নীতি, অনিয়ম এবং যৌন হয়রানির মতো ঘটনা ঘটেছে। কলেজে তার অনুপস্থিতিতেও সে পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হয়নি। তার অনুসারীরা সব সময় সব কাজে হস্তক্ষেপ করে। তাদের মাধ্যমে তিনি কলেজে আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি করে রেখেছেন। এতে পাঠদানেও বিঘ্ন ঘটছে।’ ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেল সরেজমিনে।

বাংলাভিশনের কাছে অভিযোগ ছিল, মিরপুর কলেজের বহিষ্কৃত অধ্যক্ষ গোলাম ওয়াদুদ দায়িত্ব পালনকালে কলেজের অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। সেই সঙ্গে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ এবং যৌন হয়রানির মতো ঘটনার অভিযোগও আছে তার বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগের বিষয়ে কলেজটিতে তথ্য সংগ্রহে গেলে নানাভাবে বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করেন কলেজে থাকা গোলাম ওয়াদুদের অনুসারীরা।

এ প্রতিবেদকের সামনেই অধ্যক্ষ গোলাম ওয়াদুদের অনিয়ম-দুর্নীতি আর যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া কয়েকজন সাধারণ শিক্ষককে শাসাতে শুরু করেন গোলাম ওয়াদুদের অনুসারীরা। এই প্রতিবেদক অভিযোগকারী কয়েকজন সহকারী অধ্যাপকের বক্তব্য ধারণ করতে গেলে হট্টগোল বাঁধানোর চেষ্টা করেন বহিষ্কৃত অধ্যক্ষ গোলাম ওয়াদুদের অনুসারী কয়েকজন প্রভাষক ও অভিবাবক প্রতিনিধিদের একজন সদস্য। 

জানা যায়, কলেজের অভিভাবক প্রতিনিধিদের ওই সদস্যের নাম নুরুল ইসলাম। নিয়ম অনুযায়ী তার কাজ- কলেজের কোনো অনিয়ম হলে সেগুলোর বিষয়ে গর্ভনিং বডির মিটিংয়ে উপস্থাপন করে সমাধানের ব্যবস্থা করা। কিন্তু তা না করে তিনি এই প্রতিবেদকের উপস্থিতিতে সহকারী অধ্যাপকদের উপর চোটপাট দেখাচ্ছিলেন। এই নুরুল ইসলাম এবং প্রভাষক শাহরিয়ার আল মামুন ও নুরুন নাহার পারভীনদের দাপটে অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন খোদ ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এইচ এম মাহবুবুর রহমান। তিনি সেই মুহূর্তে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করে।

পরে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে এই নুরুল ইসলামদের কাছে শিক্ষকরা কতটা অসহায় সে কথা বলেন এইচ এম মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘সে সময় আমার আশপাশে যারা ছিল তাদের সামনে সব বিষয়ে কথা বলার মতো পরিবেশ ছিল না। তারা সব সময় বিনা প্রয়োজনে আমাদের অফিসে এসে বসে থাকে। তাদেরকে বার বার চলে যেদে বললেও তারা যায় না। তাদেরকে কিছু করা যায় না।’

অনুসন্ধান বলছে- ২০১২ সালে অবৈধভাবে অধ্যক্ষের দায়িত্ব পাওয়ার পর ২০২১ সাল পর্যন্ত নানা অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন বহিষ্কৃত অধ্যক্ষ গোলাম ওয়াদুদ। তার এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে সাধারণ কয়েকজন শিক্ষক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করেন। সেই অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্ত করেন পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর। তদন্তে বহিষ্কৃত ওই অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে- জালিয়াতির মাধ্যমে অধ্যক্ষ পদ দখলে নেওয়া, শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম, ভুয়া বিল ভাউচার দিয়ে টাকা উত্তোলন, কলেজ সংস্কার কাজের ব্যয় দেখিয়ে অধিক অর্থ আত্মসাৎ, শিক্ষার্থীদের পোশাক তৈরির নামে অর্থ আত্মসাৎ এবং বিভিন্ন ভুয়া সভা সেমিনারের নামে ভুয়া বিল ভাউচার দেখিয়ে অর্থ আত্মসাৎসহ ৩৪টি সুনির্দিষ্ট অনিয়মে  প্রায় ২৬ কোটি টাকা লুটপাটের প্রমান মিলেছে। 

এই তদন্তের পর গত বছরের ১৭ আগস্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর গোলাম ওয়াদুদের বেতন-ভাতা সাময়িক স্থগিত করে। সেই সঙ্গে তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করার নির্দেশ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে সাত দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। 

এর দুমাস পর ১৭ নভেম্বর অপর এক চিঠিতে তার এমপিও স্থায়ীভাবে বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপর চলতি বছরের মার্চে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর তাদের তালিকা থেকে ওয়াদুদের নাম মুছে ফেলে। সেই সঙ্গে তাকে স্থায়ীভাবে চাকরি থেকে অপসারণ এবং ফৌজদারি মামলার মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয় গভর্নিং বডিকে।

অভিযোগ রয়েছে, এরপর গত ২৫ জুন দুপুরে স্থানীয় কিছু সন্ত্রাসীকে সঙ্গে নিয়ে কলেজে এসে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের কাছ থেকে জোরপূর্বক দায়িত্ব কেড়ে নেয় গোলাম ওয়াদুদ। এ সময় কলেজের সিসি ক্যামেরাও নিজের নিয়ন্ত্রণে নেন তিনি। এ ঘটনার পর থানায় এ সংক্রান্ত কয়েকটি জিডি করেন শিক্ষকরা।

বহিষ্কৃত অধ্যক্ষ গোলাম ওয়াদুদকে নির্দোষ প্রমাণে ঠিক যেন উঠে পড়ে লেগেছেন তার অনুসারী কয়েকজন শিক্ষক। এজন্য অনিয়মের প্রতিবাদকারী শিক্ষকদের জামাত শিবির বলেও আখ্যা দিচ্ছেন তারা।

অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে বহিষ্কৃত গোলাম ওয়াদুদের বিরুদ্ধে একাধিক শিক্ষিকাকে যৌন হয়রানির অভিযোগও রয়েছে। নিজেদের সম্মানহানীর ভয়ে ওই ভুক্তভোগীরা দীর্ঘদিন চুপ ছিলেন। সম্প্রতি গোলাম ওয়াদুদ পুনরায় কলেজ দখলের পাঁয়তারা করায় এখন মুখ খুলছেন ভুক্তভোগীরা।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বহিষ্কৃত অধ্যক্ষ গোলাম ওয়াদুদ। উল্টো- মন্ত্রণালয়ের তদন্ত প্রতিবেদনকে অসত্য দাবি করে তিনি জানান, আদালতের মাধ্যমে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করবেন।

এসব অনিয়মের বিষয়ে কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতির বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

প্রায় ৮ হাজার শিক্ষার্থীর এই কলেজে এমন অনিয়মের কারণে স্বাভাবিক পাঠদান বিঘ্নিত হচ্ছে। তাই শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে দ্রুত এই সমস্যার সমাধান চান কলেজের সাধারণ শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

বিভি/এনএ

মন্তব্য করুন:

সর্বাধিক পঠিত
Drama Branding Details R2
Drama Branding Details R2