• NEWS PORTAL

  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

অনলাইন জুয়ায় এইচএসসি পড়ুয়া রাতুলের অবৈধ আয় শত কোটি টাকা!

প্রকাশিত: ১৪:৫৮, ২৯ অক্টোবর ২০২২

আপডেট: ১৫:২১, ২৯ অক্টোবর ২০২২

ফন্ট সাইজ
অনলাইন জুয়ায় এইচএসসি পড়ুয়া রাতুলের অবৈধ আয় শত কোটি টাকা!

পাবনা জেলার আমিনপুর থানার বাঁশতলা গ্রামের আজিবুর রহমানের ছেলে রাতুল। রাজধানীর সিটি কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী। মেলবেট নামক একটি অনলাইন জুয়ার বাংলাদেশি মূল এজেন্ট হিসেবে কাজ করতো সে। সেই সঙ্গে আরও কয়েকটি জুয়ার সাইটও পরিচালনা করতো। বাবা সামান্য মুহুরির কাজ করেন। তবুও ৫০ লাখ টাকা দামের প্রাইভেট কারে চলাফেরা করে রাতুল। রয়েছে এক ডজন আর-১৫ ভার্সন মোটরবাইক। যার একেকটির মূল্য প্রায় ৫ লাখ টাকা।

বড় ভাইকে কিনে দিয়েছেন তিনটি এক্সক্যাভেটর (মাটি কাটা মেশিন)। সুবাস্তুতে কয়েক কোটি টাকার পার্টনারশিপে একটা বিদেশি পণ্যের শোরুমেরও চলছে কাজ। থাকেন ধানমন্ডির একটি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টে। তার ব্যবহৃত পাঁচটি মোবাইল ফোনের একেকটির মূল্য প্রায় ২ লাখ বা তারও বেশি। মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে অনলাইন জুয়ায় শত কোটি টাবার অবৈধ আয়ে বদলে গেছে রাতুল ও তার পরিবারের জীবন-যাপন।

গত মঙ্গলবার অবৈধ পথে শতকোটি কামানো রাতুলসহ তিনজনকে গ্রেফতারের পর এসব তথ্য জেনেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। গ্রেফতার অন্য দুজন হলেন মুন্না ও ইয়াসিন। তাদের বুধবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার ক্রাইমের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) মনিরুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘গ্রেফতার তিনজনের বাইরে রয়েছে আরও দুজন। এরা হলো নবাব ও মুকুল। এদের আটক করার অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’

আরও পড়ুন: ১০ হাজারের জন্য দুই কোটি টাকার রিস্ক কে নিবে: বাস বন্ধ প্রসঙ্গে রাঙ্গা

ডিবি সূত্র জানায়, রাতুল সম্প্রতি আজারবাইজানের একটা জুয়া কোম্পানির ২০০ কোটি টাকা মূল্যের এজেন্সি কেনার আলোচনা করছে এবং পরীক্ষা শেষ করে আজারবাইজান যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এত কিছু তার জুয়ার সাইট পরিচালনা করে। রাতুল তার বাবার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করতো। তার বাবার কয়েকটি অ্যাকাউন্টে কয়েক কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাতুল তার সহযোগীদের দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে এ চক্র গড়ে তোলে। অনলাইন গেইমের মাধ্যমে অন্তত কয়েকশ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ডলার বিজনেসের মাধ্যমে এ টাকা বিদেশে পাচারও করে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, অনলাইনে বেটিং ধরতে গিয়ে প্রথমে ৩ হাজার পরে ৫ হাজার টাকা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ধরা হয়। এরপর আসক্তি বাড়লে ১০ হাজার থেকে লাখ টাকা পর্যন্ত চলে যায়। আর এভাবেই টাকা শেষ হতে থাকে। জুয়ার এসব সাইটের অধিকাংশ পরিচালনা করা হচ্ছে রাশিয়া, ফিলিপাইন, ম্যাকাও, ভারত, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, নেপাল, আজারবাইজান, বেলারুশ, ইন্দোনেশিয়া প্রভৃতি দেশ থেকে। এসব সাইটে বাংলাদেশিদের ফাঁদে ফেলছে এদেশীয় এজেন্টরা।

রাতুলের ফাঁদে পড়ে নিঃস্ব কয়েকজন ভুক্তভোগী জানান, তার কথায় বিনিয়োগে দ্বিগুণ হওয়ার প্রলোভনে তিনি কয়েকবার প্রায় আড়াই কোটি টাকা বিনিয়োগ করেন। কিন্তু পরবর্তী সময় তিনি আর কিছুই পাননি। যেহেতু তিনি কাজটি অন্যায় করেছেন সেহেতু তিনি এ বিষয়ে অভিযোগও করতে পারছেন না। এ নিয়ে তাদের পরিবারে অশান্তি চলছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জুয়াড়ি বলেন, আজ থেকে বছর পাঁচেক আগেও এই অনলাইন বাজি ছিল এ দেশের সমাজের মুষ্টিমেয় ব্যক্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ। এখন সারা দেশের প্রতিটি শ্রেণি-পেশার সাধারণ মানুষ অনলাইনে বাজিতে বুঁদ হয়ে থাকে। ফুটপাতের চা-দোকানি থেকে শুরু করে সেলুন দোকানদার, হকার, বাড়ির নিরাপত্তা প্রহরী, বিক্রয় কর্মী থেকে শুরু করে ভবঘুরে, বাস-ট্রাকের চালক-হেলপার, সিএনজিচালক, নির্মাণ শ্রমিক, গৃহপরিচারিকা, রিকশাচালক ও দিনমজুর শ্রেণির মতো একেবারে নিম্ন আয়ের মানুষ এখন দিনের একটা সময় অনলাইনে বাজি ধরতেই ব্যস্ত থাকে। ১ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত এই শ্রেণির মানুষ বাজি ধরে। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তো রয়েছেই, স্কুলের নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরাও অনলাইনে বাজি ধরতে বেশ পটু।

আরও পড়ুন: প্রথম সন্তানের বাবা হলেন গায়ক ইলিয়াস হোসাইন

বিভি/এসএইচ/এনএ

বিভি/এনএ

মন্তব্য করুন: