• NEWS PORTAL

  • বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫

Drama: Jamai Bou Chor
Drama: Jamai Bou Chor

অবৈধপথে ইউরোপ যাত্রা থামছেই না, গডফাদাররা ধরাছোঁয়ার বাইরে

ফরিদ উদ্দিন মুফতি, মাদারীপুর

প্রকাশিত: ১৯:৩২, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

ফন্ট সাইজ
অবৈধপথে ইউরোপ যাত্রা থামছেই না, গডফাদাররা ধরাছোঁয়ার বাইরে

দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে লাখ-লাখ টাকা দিয়ে জীবন বাজি রেখে অবৈধভাবে ইউরোপযাত্রা কোনভাবেই থামছেই না মাদারীপুরে। যুবকদেরকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাঠানোর কথা বলে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। দালালরা লিবিয়ায় নিয়ে আরো টাকা আদায় করতে তাদের উপর চালাচ্ছে অমানবিক নির্যাতন। নির্যাতনের ভিডিও পাঠিয়ে পরিবারের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। 

একাধিক মাফিয়া চক্রের হাতে পড়ে গুনতে হয় চুক্তির চেয়েও দুই-তিন গুন টাকা। লিবিয়া হয়ে ইতালীসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যাওয়ার পথে কথিত গেম বা পাতা ভিসার মাধ্যমে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছে বহু কিশোর যুবক। লাশ হয়ে ফিরেছে অনেকে। ট্রলার ডুবিতে অনেকের সলিল সমাধি হয়েছে ভূমধ্যসাগরে। অনেকে নিখোঁজ রয়েছে ১০-১২ বছর ধরে। তাদের কোন সন্ধান পায়নি তাদের পরিবার। তারা বেঁচে আছে নাকি তাদেরও সলিল সমাধি হয়েছে তাও জানে না পরিবার। 

মাদারীপুর জেলা অবৈধ মানব পাচারের অন্যতম উল্লেখযোগ্য জায়গা হিসেবে পরিচিত।অবৈধভাবে সমুদ্রপথে বিদেশ যাত্রাকালে নৌকা ডুবিতে মারা গেছে মাদারীপুরের ৫ উপজেলার প্রায় অর্ধশত কিশোর-যুবক। এখনো নিখোঁজ রয়েছে অনেকে। তাদের পরিবারের সাথে কোনো যোগাযোগ নেই। তারা জীবিত না মৃত তাও জানে না পরিবার। বিভিন্ন কারণে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলো আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে যেতে অনীহা প্রকাশ করে তারা। যে কারণে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না। 

লোভে পড়ে গ্রামের সহজ-সরল পরিবারগুলো তাদের সন্তানদের তুলে দিচ্ছেন মানব পাচারকারী দালাল চক্রের হাতে। দালালদের চাহিদা মতো টাকা দিতে না পারলে লিবিয়ার বেনগাজীসহ বিভিন্ন মাফিয়াদের টর্চার সেলে শারীরিক নির্যাতন করে সেই নির্যাতনের ভিডিও পরিবারের কাছে পাঠিয়ে টাকা দিতে বাধ্য করে। গত কয়েকবছরে ৩৫৩ জনের বিরুদ্ধে মানব পাচার আইনে মামলা হয়েছে। গ্রেফতার হয়েছে ৬৬ জন। আদালতে অভিযোগপত্র জমা হয়েছে ৩৫টি। লিবিয়া থেকে মাদারীপুরের বিভিন্ন উপজেলায় লাশ হয়ে ফিরেছে অনেক যুবক।

পেয়ারপুর ইউনিয়নের মহিলা ইউপি সদস্য সানজিদা আক্তার তানিয়া জানান, ইতালি যাওয়ার উদ্দেশে ২০১৮ সালের এপ্রিলে দেশ ছাড়েন মাদারীপুরের সদর উপজেলার মধ্য পেয়ারপুর গ্রামের তরিকুল (২২)। জুনের শেষের দিকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে অন্যদের সঙ্গে লিবীয় উপকূল থেকে নৌকায় চেপে বসেন তরিকুল। তবে সাগরের অপর পারে ‘স্বপ্নের দেশ’ ইতালি পৌঁছার আগেই তাদের নৌকাটি ডুবে যায়। আরও কয়েক জনের সঙ্গে নিখোঁজ হন তরিকুল। এ পর্যন্ত তার খোঁজ পায়নি পরিবার।

একই নৌকাডুবির ঘটনায় সাগরে নিখোঁজ হন মধ্য পেয়ারপুর গ্রামের আরেক তরুণ রুবেল তালুকদার। ‘তাদের কোন খোজ মেলেনি আজও। ২০১৯ সালের মে মাসে নিখোঁজ হন মাদারীপুর সদর উপজেলার মনির হোসেন মাতুব্বর (২২) নাদিম মাতুব্বর (১৭), সাইফুল সলাম (২৪) ও রাজৈর উপজেলার নাঈম সিকদার (১৯) নামের ৪ যুবক। ওই বছর নিহত হন শিবচর উপজেলার জাকির হোসেন ও সদর উপজেলার সজিব হোসেন।২০২১ সালের জুলাই মাসে ৫ যুবকের মৃত্যু হয়। ২০২২ সালের জানুয়ারী মাসে মাদারীপুরের পাঁচ যুবক নিহত হয়।নিহত পাঁচজন হলো, সদর উপজেলার পেয়ারপুর ইউনিয়নের পশ্চিম পেয়ারপুর গ্রামের শাজাহান হাওলাদারের ছেলে ইমরান হোসেন, মস্তফাপুর ইউনিয়নের চতুরপাড় গ্রামের শাহাজালালের ছেলে জহিরুল, ঘটকচর এলাকার কাশেম মোল্লার ছেলে সাফায়েত, পেয়ারপুর ইউনিয়নের বড়াইলবাড়ি গ্রামের প্রেমানন্দ তালুকদারের ছেলে জয় তালুকদার রতন। জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা আইওএম ২০২১ সালের তথ্য মতে ২০১৪ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে নিখোঁজ বা মারা গেছেন ২২ হাজার ৮৪৫ জন। যার মধ্যে বেশির ভাগেরই মরদেহ উদ্ধারকরা সম্ভব হয় না। আবার উদ্ধার হলেও পাসপোর্ট না থাকায় অধিকাংশের পরিচয় নিশ্চিত করা যায় না। মাদারীপুরের সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সভাপতি ইয়াকুব খান শিশির এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

মাদারীপুর সদরের উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মাইনউদ্দিন জানান উপজেলা প্রশাসনের প্রত্যয়নের মাধ্যমে দেশে লাশ কিংবা জীবিত ফেরৎ আনা হয়েছে অনেককে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য মাদারীপুর পৌরসভার  মোহাম্মদ আলী, মস্তফাপুর ইউনিয়ন মোঃ দেলোয়ার হোসেন, কাজীবশির, খোয়াজপুর ইউনিয়ন মৃত কার্ত্তিক সরকার, কুনিয়া ইউনিয়ন রুবেল মাতুব্বর, মফিজ বেগ, কালিকাপুর ইউনিয়ন মোঃসবুজ, পেয়ারপুর ইউনিয়ন মৃত নাফিস মুন্সী, মৃত মোশারেফ হোসেন। 

মাদারীপুরের জেলাপ্রশাসক ড.রহিমা খাতুন জানান, এ সমস্যা সমাধানের জন্য সরকারীভাবে প্রশিক্ষণ দিয়ে বৈধ পথে বিদেশ গমন ও জনসচেতনতা বৃদ্ধিই সমাধান। তাই মাদারীপুর জেলাও সদর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সরকারীভাবে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে কারিগরি প্রশিক্ষক কেন্দ্রে। পাশাপাশি জনসচেতনতার জন্য বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের নিয়ে করা হচ্ছে জনসচেতনতামূলক সভা সেমিনার।

মাদারীপুরের পুলিশ সুপার মো. মাসুদ আলম জানান, মানব পাচারকারীরা বারবার রুট বদল করায় এবং তালিকায় তাদের আসল পরিচয় না থাকায় ব্যবস্থা নিতে পারছে না প্রশাসন। ত ব সংশ্লিষ্ট অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা, আটক নাগরিকদের ফিরিয়ে এনে তাদের বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা, যারা বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্ত তাদের যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা করছে প্রশাসন। জনসচেতনতা বাড়ানো ও সরকারিভাবে বৈধ পথে বিদেশ গমনের ব্যবস্থা করছে সরকার। 

দালালদের দৌরাত্ম্য কমাতে সবাইকে সচেতন হতে হবে ও প্রশাসনের পরামর্শে বিদেশ গমন করবে মাদারীপুরবাসী এমনটাই প্রত্যাশা সচেতন মহল ও প্রশাসনের।

বিভি/এজেড

মন্তব্য করুন:

Drama Branding Details R2
Drama Branding Details R2