• NEWS PORTAL

  • শনিবার, ০৪ মে ২০২৪

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

প্রবাসী বাড়লেও কমছে রেমিট্যান্স !

প্রকাশিত: ১৬:৪৯, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩

আপডেট: ২০:৪২, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩

ফন্ট সাইজ
প্রবাসী বাড়লেও কমছে রেমিট্যান্স !

আগষ্টে প্রবাসী আয়ে (রেমিট্যান্স) বড় ধরনের ধাক্কা লেগেছে। গত বছরের তুলনায় এবারের আগস্টে রেমিট্যান্স কমেছে ২১ শতাংশ। অথচ গত দুই বছরে কাজের জন্য দেশের বাইরে গেছেন ২০ লাখ নতুন কর্মী। তাই প্রশ্ন উঠেছে রেমিট্যান্স না বেড়ে উল্টো কমছে কেন। প্রবাসী আয় কোথায় যাচ্ছে? বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, ডলারের রেটসহ প্রচলিত কারণের বাইরে এই সময়ে নির্বাচনের আগে  অর্থ পাচার বেড়ে যাওয়ায় রেমিট্যান্স কমছে। যারা অর্থ পাচার করছেন তারা সংঘবদ্ধ হুন্ডি চক্রের মাধ্যমে প্রবাসী আয় বেশি রেট দিয়ে প্রবাসেই নিয়ে নিচ্ছেন।  সামনে তাই রেমিট্যান্স প্রবাহ আরো কমার আশঙ্কা করছেন তারা। আর এর ফলে রিজার্ভের ওপর চাপ আরো বাড়বে।

 বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, আগস্টে প্রবাসী বাংলাদেশীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে ১৫৯ কোটি ৯৪ লাখ ডলার দেশে পাঠিয়েছেন।  গত বছরের আগস্টে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ২০৩ কোটি ৬৯ লাখ ডলার। সে হিসেবে গত মাসে দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছে ২১.৪৮ শতাংশ।  জুলাইয়ে দেশে ১৯৭ কোটি ৩১ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স আসে যা গত বছরের একই মাসের তুলনায় ৫.৮৮ শতাংশ কম।  গত বছর জুলাইয়ে  প্রবাসী বাংলাদেশীরা ২০৯ কোটি ৬৩ লাখ ডলার রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছিলেন।
গত জুনে অবশ্য রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছিলে।  এর পরিমাণ ছিলো ২১৯ কোটি ৯০ লাখ ডলার। একক মাস হিসেবে সেটি ছিলো তিন বছরে সর্বোাচ্চ।  এরপরই রেমিট্যান্স কমতে শুরু করে।
কিন্তু বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি রপ্তানি বেড়েছে।  জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্যমতে, চলতি বছর জুন পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মী গেছেন ছয় লাখ ১৭ হাজার ৫৭৬ জন।  আর ২০২২ সালে প্রবাসে কর্মী গেছেন ১১ লাখ ৩৫ হাজার ৮৭৩ জন।  কিন্তু সেই অনুপাতে দেশের প্রবাসী আয় বাড়েনি।

এদিকে সরকার রেমিট্যান্সে প্রণোদনাও দিচ্ছে।  শতকরা দুই টাকা ৫০ পয়সা প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে। তারপরও প্রবাসী আয় বাড়ছে না।

যমুনা ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নুরুল আমিন বলেন, ‘‘প্রবাসী আয় কমে যাওয়ার কারণ হলো ব্যাংকিং চ্যানেলে তাদের আয় আনা যাচ্ছে না।  কারণ এখন বাইরে ১১৭ টাকা পর্যন্ত এক ডলার বিক্রি হচ্ছে।  প্রবাসী আয়ে এক ডলারে দেয়া হচ্ছে ১০৯ টাকা।  এরসঙ্গে শতকরা দুই টাকা ৫০ পয়সা প্রণোদনা যোগ করলে দাঁড়ায় ১১১ টাকা ৫০ পয়সা।  কিন্তু তারা হুন্ডি করে পাঠালে পায় ১১৭ টাকা। এক ডলারে ছয় টাকা বেশি পেলে কেন তারা ব্যাংকিং চ্যানেলে পাঠাবে।  এর ফলে ডলার বাইরেই থেকে যাচ্ছে।''
তার কথা, "এরপর ব্যাংক খাতে ব্যবস্থাপনার নানা সংকট আছে।  নানা অজুহাতে টাকা কাটা হয়।  যাদের বিএমইটি একাউন্ট নাই তাদের টাকা ব্যাংকিং চ্যানেলে আনার কোনো উদ্যোগ নাই।
তবে নির্বাচনের আগে এই সময়ে অর্থ পাচার বেড়ে গেছে বলে আমি মনে করি।  জুনে রেমিট্যান্স বেশি এসেছে ঈদের কারণে।  এটা কোনো সাধারণ ঘটনা নয়।  এখন যারা নির্বাচনের আগে অর্থ পাচার করছেন তারা হুন্ডি চক্রের মাধ্যমে প্রবাসী আয় দেশের বাইরেই রেখে দিচ্ছেন উচ্চ এক্সচেঞ্জ রেট দিয়ে। প্রাবাসীদের পরিবার দেশে টাকা পাচ্ছে।  কিন্তু ব্যাংকিং চ্যানেলে ডলার আসছে না,” বলেন এই ব্যাংকার।

আর সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান বলেন, "যারা অর্থ পাচার করেন তাদের পাচারটাই মূল টার্গেট।  তাদের কাছে মুদ্রার বিনিময় হার বিষয় নয়।  আমার মনে নির্বাচনের আগে টাকা পাচার বেড়ে গেছে।  এটা আরো বাড়তে পারে।  তারা প্রবাসী ভাই-বোনদের আয় উচ্চ রেটে দেশের বাইরে কিনে নিচ্ছেন।  ফলে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসী আয় কমছে।  সরকার চাইলে এই যে পাচারকারী, হুন্ডি চক্র তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে পারে।  এটা কোনো কঠিন ব্যাপার নয়।”
তার কথা,"ডলারের নানা ধরনের এক্সচেঞ্জ রেট, নীতির সমস্যা আছে।  এক্সচেঞ্জ রেট নিয়ন্ত্রণ করে টাকার মান ধরে রাখতে চাইছে।  কিন্তু তাতে তো কাজ হচ্ছে না।  কারণ বেধে দেয়া এক্সচেঞ্জ রেটের চেয়ে বাইরে ডলারের রেট বেশি।  ফলে প্রবাসীরা বেশি রেট পাওয়ায় তাদের একটি অংশ হুন্ডির মাধ্যমে দেশে অর্থ পাঠাতে পছন্দ করেন।  তাদের দায় দিয়ে লাভ নেই।  এক ডলারে চার-পাঁচ টাকা বেশি পাওয়া মানে অনেক।  তার ওপর আবার ব্যাংকে পাঠালে অনেক হিডেন চার্জ থাকে। নানা প্রক্রিয়াগত সমস্যা থাকে।''

তিনি বলেন, ‘‘নীতিগত সমস্যার কারণে এখন রিজার্ভের ওপর চাপ আরো বাড়বে।  গত দেড় বছরে রিজার্ভের পরিমাণ অর্ধেক হয়ে গেছে।  আর প্রতিমাসেই রিজার্ভ কমছে। সরকার যদি ফরেন এক্সচেঞ্জের নীতি কৌশল ও ব্যবস্থাপনা ঠিক করতে না পারে তাহলে রিজার্ভের পরিমাণ আরো কমতে পারে।  যা কোনেভাবেই আমাদের অর্থনীতির জন্য ভালো নয়।''
গত ৩০ আগস্ট আন্তর্জাতিক মানদণ্ড যা বিপিএম৬(ব্যালেন্স অব পেমেন্টে এন্ড ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট পজিশন ম্যানুয়াল-সিক্সথ এডিশন ) নামে পরিচিত সেই হিসাবে দেশের রিজার্ভ ছিল ২৩.৬ বিলিয়ন ডলার।  চলতি সপ্তাহেই বাংলাদেশ ব্যাংককে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) দায় পরিশোধ করতে হবে।  গত জুলাই-আগস্ট সময়ের জন্য সুদসহ এ দায় এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১১৫ কোটি ডলার।  তাই চলতি সপ্তাহেই দেশের রিজার্ভ ২২ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে যাবে ধারণা করা হচ্ছে।

‘প্রবাসী আয় কমার কারণ ব্যাংকিং চ্যানেলে তাদের আয় না আসা’

মো. নুরুল আমিন বলেন, ‘‘আমাদের রপ্তানি  আয় কমছে। আর রেমিট্যিান্স যদি মাসে দুই বিলিয়ন ডলারের টার্গেট করা না যায় তাহলে রিজার্ভের পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে।  আইএমএফ কমপক্ষে ২৪ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ থাকার প্রয়োজনীয়তার  কথা বলছে। আমরা এখানো সেটা পারিনি।  তারা লোনের পরবর্তী কিস্তির টাকা হয়তো দেবে, কিন্তু আমরা যদি রপ্তানি আয়, রেমিট্যান্স বাড়াতে না পারি তাহলে তো হবে না।''
 

মন্তব্য করুন: