চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্কে নতুন মাত্রা

চীনের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় ‘মোংলা বন্দরের সুবিধাদির সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়ন’ শীর্ষক একটি বড় প্রকল্প চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। ওই প্রকল্প বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে বদলে যাবে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের প্রাণকেন্দ্র মোংলা বন্দরের দৃশ্যপট। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ওই মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে আঞ্চলিক হাবে পরিণত হবে মোংলা বন্দর।
রাজধানী ঢাকার সঙ্গে সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকায় গত দুই বছর ধরে মোংলা বন্দরের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে আমদানি-রফতানিকারকদের। কিন্তু, জেটি সংকট, নদীর গভীরতা হ্রাস, আধুনিক অবকাঠামোর অভাবসহ নানা সীমাবদ্ধতায় এখনও পিছিয়ে আছে বন্দরটি। এসব সীমাবদ্ধতা বিবেচনায় নিয়ে বন্দরের উন্নয়নের লক্ষে ‘মোংলা বন্দরের সুবিধাদির সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়ন’ শীর্ষক একটি মেগা প্রকল্পের চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে চীনের সঙ্গে। জি-টু-জি ভিত্তিক এই প্রকল্পের আওতায় চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন করপোরেশনের সঙ্গে গেল ২৫ মার্চ চুক্তি স্বাক্ষর হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে ২০২৮ সালে। প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪২৮২.৭৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকার দিচ্ছে ৫০০.৩৯৯৭ কোটি টাকা এবং চীন সরকার প্রকল্প ঋণ হিসেবে দিচ্ছে ৩৭৮২.৩৬ কোটি টাকা।
মোংলা বন্দর কতৃপক্ষের পরিকল্পনা কর্মকর্তা জহিরুল হক জানান, চীনের সাথে হওয়া চুক্তি অনুযায়ী ওই প্রকল্পের আওতায় মোংলায় নির্মিত হবে দুইটি ৩৬৮ মিটার দীর্ঘ কন্টেইনার জেটি, আধুনিক কন্টেইনার টার্মিনাল, ডেলিভারি ইয়ার্ড, বহুতল কার ইয়ার্ড, ডুবন্ত রেক অপসারণ, প্রধান সড়ক উন্নয়ন ও শিট পাইলিংসহ নানা অবকাঠামো। পাশাপাশি আধুনিক ইকুইপমেন্ট ও অটোমেটেড অপারেশন সিস্টেম স্থাপন করা হবে, যা হবে বাংলাদেশে এই প্রথম মানুষবিহীন আধুনিক ক্রেনের মাধ্যমে পণ্য খালাসের সিস্টেম।
বন্দরের এ কর্মকর্তা আরও বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বার্ষিক কার্গো হ্যান্ডলিং সক্ষমতা ১.৫ কোটি টনে উন্নীত হবে। এছাড়াও, কন্টেইনার হ্যান্ডলিং সোয়া লাখ থেকে ৪ লাখ টিইইউস উন্নিত হবে যা এই বন্দরের সক্ষমতা এবং আঞ্চলিক গুরুত্ব বহুগুণে বাড়িয়ে দেবে। বন্দরের অপারেশনাল সময় কমে আসবে, দক্ষতা বাড়বে, ফলে আমদানি-রফতানি ব্যবসায় আরও গতি আসবে।
চীনের সাথে চুক্তি হওয়ায় এ অঞ্চলের অর্থনীতিতেও নতুন দিগন্ত উম্মোচিত হবে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও গবেষক মোঃ সামিউল হক বলেন, এই বিনিয়োগ শুধু অবকাঠামো নয় বরং এটি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও কৌশলগত সক্ষমতার অংশ। এতে দুই দেশের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্কে নতুন মাত্রা যোগ করবে। এই চুক্তির মাধ্যমে আমরা আমাদের কৌশলগত অবস্থানকে আরও সুসংহত করতে পারি। এছাড়া উপকূলীয় অঞ্চলে আধুনিক বাণিজ্যিক অবকাঠামো গড়ে ওঠার সম্ভাবনা বাড়বে যা দেশীয় বিনিয়োগ ও বিদেশি বিনিয়োগ উভয়কে আকৃষ্ট করবে। এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক হাবে পরিণত হবে মোংলা।
প্রসঙ্গত, সুন্দরবনের কোল ঘেঁষে পশুর নদীর পূর্ব তীরে ১৯৫০ সালে স্থাপিত মোংলা বন্দরে বর্তমানে পাঁচটি জেটিতে ২২টি নোঙর পয়েন্টে একসঙ্গে ৪৭টি জাহাজ ভিড়তে পারে। এসব উন্নয়ন কাজ শেষ হলে এই সক্ষমতা বহুগুণে বাড়বে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।
বিভি/পিএইচ
মন্তব্য করুন: