ইসলামি ব্যাংকগুলোর বিষয়ে নতুন পদক্ষেপ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের

ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান, পরিচালক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) পদে থাকা ব্যক্তিদের নিয়োগ বাতিল করে অস্থায়ীভাবে প্রশাসক নিয়োগ দিতে পারবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এদিকে ইসলামি ব্যাংকগুলোকে রেজ্যুলেশন বিষয়ে পরামর্শ দিতে নতুন পদক্ষেপ নিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এ ছাড়া অবসায়ন বা একীভূতকরণের তালিকাভুক্ত ব্যাংককে যে কোনো আদেশ-নির্দেশ দিতে পারবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সেগুলো সংশ্লিষ্ট ব্যাংক পরিপালন করতে বাধ্য। এমন সব বিধান রেখে অকার্যকর ব্যাংক অবসায়ন বা একীভূতকরণের লক্ষ্যে একটি নতুন নীতিমালা তৈরি করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ইতোমধ্যে নীতিমালার খসড়া তৈরি শেষ। এটি অচিরেই চূড়ান্ত করে সার্কুলার আকারে জারি করা হবে।
খসড়ায় বলা হয়, ইসলামি ব্যাংকগুলোকে রেজ্যুলেশন বিষয়ে পরামর্শ দিতে নিজস্ব শরিয়াহ বোর্ড গঠন করতে পারবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আলোচিত নীতিমালার আওতায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যাংক রেজ্যুলেশন অধ্যাদেশের আওতায় যে কোনো সময় যে কোনো বিধিবিধান যুক্ত করতে পারবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানায়, নীতিমালাটি এমনভাবে প্রণয়ন করা হচ্ছে যাতে যে কোনো ব্যাংক এটির সঙ্গে তাদের আর্থিক অবস্থার তুলনা করলেই বুঝতে পারবে কখন কোন স্তরে পৌঁছাবে। ব্যাংকটিকে কীভাবে তদারকি করা হবে। ব্যাংকগুলো যদি আগে থেকেই নিজেদের অবস্থা সম্পর্কে বুঝতে পেরে আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে পারে তবে তারা নিজেদের অবনতি রোধ করতে পারবে। সে লক্ষ্যে ব্যাংক রেজ্যুলেশন অধ্যাদেশ জারি হয়েছে। পাশাপাশি এর আওতায় নতুন নীতিমালা করা হচ্ছে।
খসড়ায় আরও বলা হয়েছে, যখন কোনো ব্যাংক আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে পারবে না, নিজস্ব ভিত্তিতে দৈনন্দিন কার্যক্রম চালাতে পারবে না, তখন ওই ব্যাংককে পুনর্গঠন, অন্য ব্যাংকের সঙ্গে একীভূতকরণ বা অবসায়নের পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এ পদক্ষেপ নেওয়ার আগে ব্যাংককে আর্থিক অবস্থার উন্নয়নের জন্য দুই মাস সময় দেওয়া হবে। এর মধ্যে ব্যাংক দৈনন্দিন কার্যক্রম চালাতে না পারলে ওইসব পদক্ষেপ নেওয়া হবে। কোনো ব্যাংক রেজ্যুলেশনের আওতায় এলে সেখানে প্রশাসক বসাতে পারবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকের পর্ষদের চেয়ারম্যান, পর্ষদ ও এমডি বা অন্য স্তরের যে কোনো কর্মকর্তার নিয়োগ বাতিল করতে পারবে। বিদ্যমান শেয়ারহোল্ডার বা নতুন শেয়ার সৃষ্টি করে মূলধন বাড়াতে পারবে। ব্যাংকের শেয়ার, সম্পদ ও দায় তৃতীয় পক্ষের কাছে হস্তান্তর করতে পারবে। ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডারদের শেয়ার বাজেয়াপ্ত করতে পারবে।
সূত্র জানায়, কোনো ব্যাংকের মৌলিক আর্থিক কিছু সূচকের অবনতি হতে থাকলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মনে করলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে সতর্ক করে চিঠি দেবে। এতে ব্যাংকগুলোর আর্থিক সূচকের উন্নয়নের জন্য সময় ও লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিতে পারবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হলে কিছুটা সময় বাড়ানোর সুযোগ দেওয়া হবে। এতেও লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের ব্যাংকিং কার্যক্রমে বিধিনিষেধ আরোপ করা হতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে নতুন শাখা খুলতে না দেওয়া, নতুন বৈদেশিক মুদ্রার লাইসেন্স না দেওয়া। ব্যাংকের অবস্থার আরও অবনতি হলে ঋণ বিতরণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারবে। ব্যাংকের সম্পদ ও দায়ের অনুপাতে ঘাটতি হলে আমানত সংগ্রহের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারবে।
এছাড়া খেলাপি ঋণের হার, প্রভিশন ঘাটতি, মূলধন পর্যাপ্ততা, কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বিধিবদ্ধ জমা সংরক্ষণ, অতিরিক্ত তারল্য সংরক্ষণ এসব সূচক দেশে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকই বুঝতে পারবে তারা কোনদিকে যাচ্ছে।
বিভি/টিটি
মন্তব্য করুন: