• NEWS PORTAL

  • বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪

ফার্নিচার খাতে নিজেদের গুটিয়ে নিচ্ছে চীন, ব্যাপক সম্ভাবনা বাংলাদেশের (ভিডিও)

আহসান হাবীব ও আনোয়ার হোসাইন সোহেল

প্রকাশিত: ২৩:০১, ৪ জানুয়ারি ২০২২

আপডেট: ১৬:৫৭, ৭ নভেম্বর ২০২২

ফন্ট সাইজ

তৈরীপোশাক খাতের পাশাপাশি দেশের বাইরে ক্রমশঃ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বাংলাদেশের ফার্নিচার শিল্প। গত ১০ বছরে এই খাতে রফতানি বেড়েছে প্রায় ১০গুণ। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো’র তথ্য মতে, দেশের ফার্নিচার শিল্প প্রায় প্রতিবছরই রফতানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করছে। বিনিমিয়ে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করলেও বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় নিজের অবস্থান সংহত করতে খাতটি হিমশিম খাচ্ছে।

বাংলাদেশের ফার্নিচার শিল্পের অন্যতম প্রতিষ্ঠান হাতিল-এর মার্কেটিং ডিরেক্টর মশিউর রহমান বলেন, কর কাঠামো পুনর্বিবেচনা, ঋণ সহায়তা, ফার্নিচার শিল্প পার্ক প্রতিষ্ঠা, ভ্যাট কাঠামো সহজীকরণ এবং উদ্যোক্তা ও কর্মীদের দক্ষতা বাড়ানো গেলে বিশ্ব ফার্নিচার বাজারের একটা বড় অংশ দখলে নিতে পারবে বাংলাদেশ। যার সিংহভাগই এখন চীনের হাতে।

প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, বিশ্বে ৪৮ হাজার ৭০ কোটি ডলারের ফার্নিচার বাজারের ৩১ দশমিক ৭ ভাগই চীনের দখলে। ২০২৫ নাগাদ এই বাজারের আকার হতে পারে ৬৫ হাজার ৪৬০ কোটি ডলার। ফর্নিচারের বিশ্ববাজারে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে মাত্র সাত কোটি ৪৭ লাখ ডলারের ফার্নিচার রফতানি করেছে বাংলাদেশ। এটি বাংলাদেশের মোট রফতানির শূন্য দশমিক এক আট ভাগ। তবে আশার বিষয় হলো- ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে দেশের মোট রফতানি ১০ দশমিক ৫৫ ভাগ বাড়লেও ফার্নিচার রফতানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৮ দশমিক ৫২ ভাগ।

এই খাতের অন্যতম প্রতিষ্ঠান আখতার গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে এম রিফাতুজ্জামান বলেন, বর্তমানে আসবাবপত্র রফতানিতে ১৫ শতাংশ নগদ সহায়তা পাচ্ছি আমরা। যদিও আসবাবপত্র তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জাম আমদানিতে গুণতে হচ্ছে ৭০-৮০ শতাংশ শুল্ক। রফতানি বাড়াতে বন্ডেড ওয়্যারহাউস সুবিধাসহ ফার্নিচার শিল্পকে আরও এগিয়ে নিতে কিছু প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে শুল্কহার কমানোর দাবি জানান তিনি।  

রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো’র তথ্য মতে, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে আসবাবপত্র রফতানির লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ছয় কোটি ১০ লাখ ডলার। এর বিপরীতে আয় হয়েছে ছয় কোটি ৩১ লাখ ডলার। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় যা ২১ লাখ ডলার বেশি।

বাংলাদেশ ফার্নিচার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার আব্দুর রৌফ বলেন, ২০২০-২০২১ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে ৭৯ দশমিক ৪৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের আসবাবপত্র রফতানি হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৪০ দশমিক ৫৬ শতাংশ বেশি। যদিও নানাবিধ কারণে ফার্নিচার খাত থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিচ্ছে বিশ্ব বাজারের প্রায় ৩২ শতাংশ নিয়ন্ত্রণকারী চীন। এই কারণেই শ্রমঘন এই শিল্পে পোশাক খাতের মতো সম্ভাবনা দেখছেন জানান রৌফ।

এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. মফিজুর রহমান বলেন, এই খাতের অন্যতম সমস্যা, দেশে মানসম্মত কাঠের অভাব। এছাড়া বিভিন্ন উপকরণ আমদানিতে ব্যয় বৃদ্ধির চ্যালেঞ্জ তো রয়েছেই। আছে সনাতনী যন্ত্রপাতি সংযোজনে পুঁজির সীমাবদ্ধতাও। মাত্র ৫ শতাংশ কারখানা আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করলেও বাকিরা এখনও পিছিয়ে আছেন। তাই এক্ষেত্রে প্রয়োজন আধুনিকায়নও। 

মূলতঃ এসব কারণেই ফার্নিচার শিল্প দেশের রফতানির শীর্ষ ভিত্তি হয়ে উঠতে পারছে না বলে মনে করেন তিনি। 

রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো’র ভাইস চেয়ারম্যান এ এইচ আহসান বলেন, আসবাবপত্রের  রফতানি বৃদ্ধির ধারাবাহিকতায় সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে সরকারও। শুল্ক আরোপে ইতিমধ্যে কিছু সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে, ব্যবসায়ীরা যৌক্তিক কারণ দেখিয়ে আরও কিছু ক্ষেত্রে শুল্ক-সুবিধা চাচ্ছেন। 

খাত সংশ্লিষ্ট সবার বক্তব্য, সরকারের যথাযথ সমর্থন পেলে ২০২২-এ দেশের ফার্নিচার রফতানি ১০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে।

বিভি/রিসি 

মন্তব্য করুন: