• NEWS PORTAL

  • বুধবার, ০১ মে ২০২৪

ঋণ খেলাপি এপেক্স ওয়েভিংয়ের উৎপাদন বন্ধ, তবুও বাড়ছে শেয়ারদর

আনোয়ার হোসাইন সোহেল 

প্রকাশিত: ২০:৫৯, ৫ জুন ২০২২

ফন্ট সাইজ
ঋণ খেলাপি এপেক্স ওয়েভিংয়ের উৎপাদন বন্ধ, তবুও বাড়ছে শেয়ারদর

লোকসানের কারণে উৎপাদন বন্ধ, বহু বছর ধরে লাভের দেখা নেই। তবুও শেয়ারদর বাড়ছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এসএমই প্লাটফর্মের কোম্পানি এপেক্স ওয়েভিং অ্যান্ড ফিনিশিং মিলস লিমিটেডের। 

গত বছর ওভার দ্যা কাউন্টার মার্কেট (ওটিসি) থেকে এসএমই বোর্ডে আসা কোম্পানিটির শেয়ার দর গত ১৮ মে থেকে ৫ জুন পর্যন্ত সময়ে বেড়ে ৩ টাকা ৮০ পয়সা। এর মধ্যে শুধু গত তিন কার্যদিবসে শেয়ারদর বেড়েছে ৩ টাকা ৬০ পয়সা বা ২৬ শতাংশ। 

রবিবার (৫ জুন) দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) কোম্পানিটির শেয়ার দর ৯ দশমিক ৬২ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ দশমিক ১০ টাকা।  

কোম্পানির উৎপাদন এখন বন্ধ, ধারাবাহিকভাবে লোকসান এবং দেশের শীর্ষ ঋণ খেলাপির তালিকায় নাম থাকা কোম্পানিটির শেয়ারদর এভাবে বাড়ার কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না বাজার সংশ্লিষ্টরা। 

কয়েকজন ব্যক্তির কারসাজি করে শেয়ারের দাম বাড়িয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। 

এবিষয়ে জানতে চাইলে অ্যাপেক্স ওয়েভিংয়ের কোম্পানি সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম বাংলাভিশনকে বলেন, গত দুই সপ্তাহ হলো বকেয়া বিল না দেওয়ায় কারখানার গ্যাস ও বিদ্যুৎ লাইন কেটে দেওয়া হয়েছে। এজন্য আপাতত কোম্পানির উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। তবে আমরা চেষ্টা করছি লাইন সংযোগ পেতে। কিন্তু এটার সঙ্গে শেয়ার দরের কোন সম্পর্ক নেই। কি কারণে শেয়ার দর এতো বাড়ছে তার নির্দিষ্ট কারণ জানা নেই।

অ্যাপেক্স ওয়েভিং কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, জানুয়ারি-মার্চ’২১ সময়ে কোম্পানিটির কর পরবর্তী লোকসান হয়েছে ১ কোটি ৬১ লাখ ২০ হাজার টাকা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে কোম্পানিটির কর পরবর্তী লোকসান ছিল ৩ কোটি ১৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা।

এসময়ে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ০ দশমিক ৪১ টাকা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান ছিল ০ দশমিক ৮২ টাকা।

এদিকে জুলাই, ২০২০-মার্চ, ২০২১ কোম্পানিটির কর পরবর্তী লোকসান হয়েছে ২ কোটি ১৯ লাখ ৬০ হাজার টাকা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে কোম্পানিটির কর পরবর্তী লোকসান ছিল ৩ কোটি ৫২ লাখ ৯০ হাজার টাকা। ৯ মাসে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ০ দশমিক ৫৭ টাকা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান ছিল ০ দশমিক ৯১ টাকা।

তথ্য মতে, ১৯৯৫ সালে অ্যাপেক্স ওয়েভিং দেশের স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত হয়। কোম্পানিটি প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে শেয়ার ছেড়ে শেয়ারবাজার থেকে ২৬ কোটি ৯৯ লাখ ৯০ হাজার সংগ্রহ করে। পরবর্তী সময়ে কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের নিয়মিত লভ্যাংশ না দেওয়ায় ২০০৯ সালের ওটিসি মার্কেটে স্থানান্তরিত হয়। 

এরপর দীর্ঘ ১১ বছরের বেশি সময় ধরে কোম্পানিটির ব্যবসায়িক কার্যক্রমে উন্নতি হয়নি। স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত থাকার পরও সিকিউরিটিজ আইন যথাযথভাবে পরিপালন করছে না কোম্পানিটি। বরং প্রতিনিয়তই আইন লঙ্ঘন করে যাচ্ছে। দীর্ঘ এ সময়ের মধ্যে আর্থিক অবস্থার উন্নতি না হওয়ার পেছনে কোম্পানিটির স্বতন্ত্র পরিচালকসহ পরিচালনা পর্ষদ সদস্যদের ব্যর্থতা রয়েছে বলে মনে করে বিএসইসি। গতবছর নিয়ন্ত্রক সংস্থা দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জের স্বল্পমূলধনী বা এসএমই বোর্ডে লেনদেনের অনুমোদন দেয়। 

প্রাপ্ত তথ্যমতে, ওটিসি মার্কেটে থাকা বস্ত্র খাতের কোম্পানি এপেক্স উইভিং অ্যান্ড ফিনিশিং। ২০০৬ সালে মালিকানা নিয়ে জটিলতায় পড়ে প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমান কর্ণধার হারুন অর রশিদ ও বিএনপি সরকারের সাবেক মন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন। শেষপর্যন্ত তা আদালত অবধি গড়ায়। এরপর রাজনৈতিক অস্থিরতা ও গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকটের কারণে কোম্পানিটির নতুন প্রকল্পও ভেস্তে যায়। 

এসব কারণে ২০০৯ সাল থেকে লোকসান গুনছে কোম্পানিটি। ওই বছরে প্রায় ১৯ কোটি ৮৬ লাখ টাকা লোকসান গুনেছে প্রতিষ্ঠানটি। সর্বশেষ ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরেও প্রায় চার কোটি ৭৮ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে কোম্পানিটির। ২০০৯ সাল থেকে এক দশকে এপেক্স উইভিংয়ের লোকসান ১০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। গত এক দশকের মধ্যে ২০১০ সালে সর্বোচ্চ ৪৬ কোটি ৫৭ লাখ টাকা লোকসান করেছে। অন্যদিকে ২০১৪-২০১৫ আর্থিক বছরে সর্বনিম্ন দুই কোটি ৪৯ লাখ টাকা লোকসান গুনেছে।

সেরা গ্রাহক হিসেবে সোনালী ব্যাংক থেকে ২০০৪ ও ২০০৬ সালে দুইবার পুরস্কার পায় এপেক্স উইভিং অ্যান্ড ফিনিশিং মিলস লিমিটেড। এর পাঁচ বছর পরই খেলাপির তালিকায় নাম লেখায় কোম্পানিটি। দীর্ঘ দুই যুগের গ্রাহকটি এখন দেশের শীর্ষ ১০০ খেলাপির তালিকায় স্থান পেয়েছে। আর সোনালী ব্যাংকে এপেক্স উইভিংয়ের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৩০ কোটি টাকা।

এপেক্স উইভিং অ্যান্ড ফিনিশিং মিলস সোনালী ব্যাংক থেকে অটো লুম প্রকল্পে ঋণ নিয়েছিল প্রায় ১২০ কোটি টাকা। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি নানা জটিলতার কারণে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারেনি। আর তাতে ঋণের ১৩০ কোটি টাকা খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। এতে ব্যাংকের এক সময়ের সেরা গ্রাহক এখন ঋণ খেলাপির তালিকায় স্থান পেয়েছে।

বিভি/এইচএস

মন্তব্য করুন: