• NEWS PORTAL

  • বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪

হঠাৎ ব্যাংকের কার্ডের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা খরচ অস্বাভাবিক বেড়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১২:১৬, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২

আপডেট: ১২:৩১, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২

ফন্ট সাইজ
হঠাৎ ব্যাংকের কার্ডের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা খরচ অস্বাভাবিক বেড়েছে

দেশে পাঁচ মাসের বেশি সময় ধরে বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে। ডলার বিক্রিসহ নানা পদক্ষেপ নিয়েও ডলারের দামের অস্থিরতা থামাতে পারছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরই মধ্যে ক্রেডিট কার্ডে অস্বাভাবিক লেনদেন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে চাপ আরও বাড়ছে। তারপরও বিদেশ ভ্রমণে কার্ডে ডলার নিয়ে যাওয়ার বিষয়টিকে বাংলাদেশ ব্যাংক উৎসাহিত করছে। তবে কেউ কার্ডে থাকা ডলার প্রয়োজন ছাড়া খরচ করছে কিনা সেটি নজরদারি করা হচ্ছে। সম্প্রতি কয়েকটি ব্যাংকের ৭১টি ক্রেডিট কার্ডে সীমার বেশি লেনদেনের প্রমাণ পায় ২৭ ব্যাংকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে ব্যাংক ও আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা। যদিও ব্যাংকগুলো জানিয়েছে,  করোনার পর চিকিৎসাসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে বিদেশ ভ্রমণ বেড়ে যাওয়ায় ক্রেডিড কার্ডে লেনদেন বেড়েছে। এ ছাড়া কার্ডে কম খরচে ডলার নেওয়ার সুযোগ থাকায়ও এ জাতীয় লেনদেন বাড়তে পারে। 

চলতি বছরের মে থেকে জুলাই এই তিনমাস হঠাৎ করে ব্যাংকের কার্ডের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রার (ডলারের) খরচ অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে। এটি গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২৪২ শতাংশ এবং আগের তিন মাসের চেয়ে ৫৪ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে জুলাই মাসেই লেনদেন হয়েছে প্রায় ৪৪২ কোটি টাকা, যা একক মাস হিসেবে এ যাবতকালের সর্বোচ্চ। আর গত তিনমাসে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকারও বেশি। 

আগেই ক্রেডিট কার্ডে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের অনুমোদন দেওয়া হয়। আর ২০২০ সালের জুনে ব্যাংকগুলোকে গ্রাহকদের হিসাবের বিপরীতে আন্তর্জাতিক ডেবিট কার্ড ইস্যুর অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। দ্বৈত মুদ্রার এসব কার্ড দিয়ে দেশে বসেই বিদেশের হোটেল বুকিং, নির্দিষ্ট পরিমাণের কেনাকাটাসহ নানা খরচ করা যাচ্ছে। এ ছাড়া বিদেশে যাওয়ার সময়ও অনেকে কার্ডেই বৈদেশিক মুদ্রা এন্ড্রোসমেন্ট করে নিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়মানুযায়ী, কার্ডে বছরে খরচ করা যাবে সর্বোচ্চ ১২ হাজার ডলার। গ্রাহকদের কাছে নগদে ও কার্ডে দুভাবেই ডলার বিক্রি করে ব্যাংক। এতোদিন নগদের চেয়ে কার্ডে ডলার নেওয়ার খরচ ছিল কম। তবে সম্প্রতি বাফেদা থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় কার্ডের ডলারের বিনিময় মূল্য হবে নগদ ডলারের মতোই।

অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স (এবিবি) বাংলাদেশের সাবেক চেয়ারম্যান ও বেসরকারি মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, করোনা পরিস্থিতি উন্নতি হওয়ার পর থেকে বিদেশ ভ্রমণ অনেক বেড়েছে। শুধু ট্যুরিস্টেই নয়, চিকিৎসা, শিক্ষা ও ব্যবসার কাজেও অনেকেই বিদেশে যাচ্ছেন। এর ফলে যারা বিদেশে যাচ্ছেন তারা কার্ডেও ডলার এন্ড্রোসমেন্ট করে নিয়ে যাচ্ছেন। এ ছাড়া এতদিন কার্ডে নিলে ডলারের খরচ কম পড়তো। এ কারণেও কার্ডে ডলার নেওয়ার পরিমাণ বাড়তে পারে। তবে এখন সিদ্ধান্ত হয়েছে, কার্ডে নেওয়া ডলারের দামও হবে ব্যাংকের ক্যাশ ডলারের বিনিময় মূল্যে। এর ফলে কার্ডে ডলার নেওয়ার খরচ ইতোমধ্যে বেড়ে গেছে। ফলে সামনে মাসগুলোতে কার্ডে ডলার নেওয়ার প্রবণতা কমতে পারে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, কার্ডে বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন গত এপ্রিল থেকে টানা বাড়ছে। ওই মাসে কার্ডে বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেনের পরিমাণ ছিল ২৪১ কোটি টাকা। এটি গত মে মাসে বেড়ে হয় ৩৫৮ কোটি ৬০ লাখ টাকা। এরপর জুনে আরও বেড়ে হয় ৩৯৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা। আর জুলাই মাসে তা ৪৪২ কোটি ছাড়িয়ে যায়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, প্রতি বছর যে পরিমাণ পর্যটক দেশে আসছেন, তার চেয়ে বহুগুন বেশি যাচ্ছেন। এছাড়াও অনেকেই বিভিন্ন প্রয়োজনে বিদেশে যাচ্ছেন। এ সময় তারা কার্ডের মাধ্যমেও ডলার নিয়ে নিচ্ছেন। এ কারণে কার্ডে বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন বাড়তে পারে।

সর্বশেষ গত বুধবার আন্তঃব্যাংকে ডলারের দাম আরও ৭৫ পয়সা বেড়ে ১০৬ টাকা ৯০ পয়সায় ওঠে। মাত্র দুদিনের ব্যবধানে আন্তঃব্যাংকে ডলারের দাম রেকর্ড ১১ টাকা বেড়েছে। এর ফলে আমদানিকারকদের এলসি নিষ্পত্তি খরচ আরও বেড়ে যায়। এলসি নিষ্পত্তি আমদানিকারকদের এখন ১০৭ থেকে ১১০ টাকা পর্যন্ত গুনতে হচ্ছে। খোলাবাজারে বা কার্ব মার্কেটে ডলারের দাম ১১৪ টাকা ছুঁয়েছে।

বিভি/এইচএস

মন্তব্য করুন: