• NEWS PORTAL

  • শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় রবিবার আসছে নতুন মুদ্রানীতি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৮:২৭, ১৪ জানুয়ারি ২০২৩

ফন্ট সাইজ
বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় রবিবার আসছে নতুন মুদ্রানীতি

ব্যবসায়ীদের মতকে প্রাধান্য দিয়ে নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এবারের মুদ্রানীতিতে বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জ রয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা। তারল্য সংকট দূর করা, সুদের হার নিয়ন্ত্রণ, ডলারের একক রেট চালু করা, খেলাপি ঋণ কমানো, মূল্যস্ফীতি এবং পণ্য আমদানি ও রপ্তানির আড়ালে অর্থ পাচার বন্ধে বাংলাদেশ ব্যাংক এবারের মুদ্রানীতিতে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দিয়েছে।

সরকারের জাতীয় বাজেট বাস্তবায়নে সহযোগিতা করা ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখার উদ্যোগ জানিয়ে প্রতিবছর নির্দিষ্ট সময়ে বাজারে কী পরিমাণ মুদ্রা সরবরাহ করা হবে তার একটি আগাম ধারণাপত্র দেয়া হয় মুদ্রানীতিতে।

বৈশ্বিক মহামারি করোনা পরবর্তী অর্থনৈতিক সংকট, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ নানা কারণে উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে ভুগছে বিশ্ব। এর ভয়াল থাবা থেকে বাদ পড়েনি বাংলাদেশও। এসব কারণে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার সংকট সামাল দেওয়াই এখন বড় চ্যালেঞ্জ।  

যদিও সংকট সমাধানে বাজারে নগদ ডলার সহায়তা দিয়ে তেমন কোনো ফল পায়নি কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এমন পরিস্থিতিতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের ওপর জোর দিয়ে চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের জানুয়ারি-জুন সময়ের জন্য নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

মুদ্রানীতি বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও তারল্য সরবরাহ ঠিক রাখা মুদ্রানীতির মূল কাজ। তবে মুদ্রানীতি প্রণয়নের কাজ শেষপর্যায়ে রয়েছে। আগামীকাল ১৫ জানুয়ারি রবিবার সবাইকে এ তথ্য জানাবো।

এনিয়ে শনিবার (৭ জানুয়ারি) বাংলাদেশ ব্যাংকের মনিটরি পলিসি নির্ধারণকারী কমিটির সঙ্গে তফসিলি ব্যাংক, অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের বৈঠক হয়। বৈঠকে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ঋণে সুদের হার বাজারভিত্তিক করার পরামর্শ দেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা। যদিও ব্যবসায়ীরা বিষয়টির বিরোধিতা করেন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার এবিষয়ে সভায় কোনো সিদ্ধান্ত জানাননি। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি সূত্র বলছে, ঋণে সুদের হার নির্ধারণের ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের মতকেই প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। সেক্ষেত্রে আপাতত ঋণের বিপরীতে সুদের যে হার নির্ধারিত আছে তা ওঠানোর সম্ভবনা নেই।

বৈঠকে উপস্থিত থাকা একজন ব্যবসায়ী নেতা বলেন, মুদ্রানীতি ও সুদের হার নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে। ব্যাংকারদের পক্ষে এবিবি ও বাফেদার চেয়ারম্যান সুদের হার তুলে দেওয়ার সুপারিশ করেন। কিন্তু আমরা তার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছি।

সুদের হার তুলে দেওয়ার যুক্তি হিসেবে সভায় এবিবির চেয়ারম্যান সেলিম আর এফ হোসেন ও বাফেদার চেয়ারম্যান আফজাল করিম মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সুদের হার বাজারভিত্তিক করার পরামর্শ দেন। তবে ব্যবসায়ীদের পক্ষে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান সুদের হার তুলে দেওয়ার বিষয়ে বিরোধিতা করেন। ওই সভায় তিনি বলেন, বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি দেশীয় কারণে নয়, মূলত বিশ্ববাজারে পণ্যের মূল্য বাড়ায় দেশে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। এ মুহূর্তে বাজার ভিত্তিক সুদের হার করলে ব্যবসায়ীদের খরচ বাড়বে, মূল্যস্ফীতি আরও বাড়তে পারে। ব্যবসায়ীরাও বড় ক্ষতির মুখে পড়বেন।

এবিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, অর্থনীতির প্রধান চ্যালেঞ্জগুলো আগামী মুদ্রানীতিতে প্রতিফলিত হবে। এসব বিষয় মাথায় রেখেই পদক্ষেপ নেওয়া হবে। আইএমএফের পরামর্শ অনুযায়ী সুদহারের সীমা তুলে দেওয়ার বিষয়টি এখন বিবেচনায় নাও আসতে পারে। গভর্নরের জন্য প্রথম মুদ্রানীতি একটু ব্যতিক্রম হতে পারে। তিনি অর্থ বিভাগের দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সবার জন্য সহায়ক মুদ্রানীতি ঘোষণা করতে চান।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সূত্র বলছে, মুদ্রার গতিবিধি প্রক্ষেপণ করে মুদ্রানীতি। মুদ্রানীতির কাজ হলো, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করা, ঋণের প্রক্ষেপণের মাধ্যমে সরকারি-বেসরকারি ঋণের জোগান ধার্য এবং মুদ্রার প্রচলন নিয়ন্ত্রণ করা। যদিও নতুন মুদ্রানীতি আসার আগেই তিনবার নীতি সুদহার বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সবশেষ সদ্য বিদায়ী বছরের সেপ্টেম্বরে রেপো সুদহার ২৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়ানো হয়েছে। এর ফলে রেপো সুদহার বেড়ে হয়েছে ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ।

রেপো সুদহার বাড়ানোর ফলে ব্যাংকগুলোকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা ধার করতে বেশি সুদ দিতে হচ্ছে। মূলত টাকার প্রবাহ কমাতে এ সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যাতে ব্যাংকগুলো বেশি সুদের কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কম টাকা ধার করে। কিছুটা সংকোচনমুখী ঠিক করে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হয়েছিল। এক্ষেত্রে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে এক লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা ঋণ জোগানোর ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল। সরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছিল ৩৯ দশমিক ৪ শতাংশ, এর আগের বার যা ছিল ৩৬ দশমিক ৬ শতাংশ। এছাড়াও বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ধরা হয় ১৪ দশমিক ১ শতাংশ, যা তার আগের বছর ছিল ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ।

সব মিলিয়ে মোট অভ্যন্তরীণ ঋণের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ১৮ দশমিক ২ শতাংশ। ২০২১-২০২২ অর্থবছরে যা ১৭ দশমিক ৮০ শতাংশ ছিল। জাতীয় বাজেটে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের জন্য মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। একই সঙ্গে আলোচ্য অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৬ শতাংশ রাখার পরিকল্পনা নির্ধারণ করে সরকার।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, রবিবার ১৫ জানুয়ারি দুপুর আড়াইটায় ‘মনিটারি পলিসি স্টেটমেন্ট (এমপিএস)’ প্রকাশ করবেন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর এটা তার প্রথম মুদ্রানীতি ঘোষণা। অনুষ্ঠানে ডেপুটি গভর্নরসহ বিএফআইইউয়ের প্রধান কর্মকর্তা, চিফ ইকোনমিস্ট, গবেষণা বিভাগের নির্বাহী পরিচালক এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও সহকারী মুখপাত্র উপস্থিত থাকবেন। 

বিভি/এইচএস

মন্তব্য করুন: