• NEWS PORTAL

  • বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪

ডলার সংকটে ভোগ্যপণ্য আমদানিকারকরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৬:৩০, ২১ জানুয়ারি ২০২৩

আপডেট: ১৭:১৬, ২১ জানুয়ারি ২০২৩

ফন্ট সাইজ
ডলার সংকটে ভোগ্যপণ্য আমদানিকারকরা

দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ঠিক রাখতে যে কেউ চাইলেই ডলার দিচ্ছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। রমজানে পণ্য সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে আটটি পণ্যের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এলসি খুলতে নির্দেশনা দেওয়া হলেও ডলার সংকটে তা পারছে না বেশিরভাগ ব্যাংক। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে কিনতে চেয়েও মিলছে না পর্যাপ্ত ডলার। এতে ভোগ্যপণ্য আমদানিকারকরা পরেছেন বেকায়দায় । প্রয়োজনীয় এলসির জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়সহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে ধরনা দিচ্ছেন তারা। 

জানা গেছে, শুধু সার, জ্বালানি ও সরকারি খাদ্য আমদানিতে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করা হচ্ছে। গত ১৯ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার বিক্রি করা হয়েছে ১০ কোটি ডলার। এ নিয়ে চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে বিক্রির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮৫৩ কোটি ডলার। এভাবে ডলার বিক্রির ফলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে কমছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সবশেষ হিসাবে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩২ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলার। গত বছর একই দিন যা ছিল ৪৫ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার। বর্তমান রিজার্ভ থেকে রপ্তানি উন্নয়নসহ বিভিন্ন তহবিলে জোগান দেওয়া ৮ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার বাদ দিলে থাকে ২৪ দশমিক ০৮ বিলিয়ন। ব্যবহারযোগ্য এ রিজার্ভ দিয়ে প্রায় সাড়ে তিন মাসের আমদানি দায় মেটানো সম্ভব।

সংশ্নিষ্টরা জানান, বিশ্ববাজারে সব পণ্যের দাম বাড়লেও এলসি ব্যাপকভাবে কমেছে। অবশ্য আগের আমদানি দায় পরিশোধ বেড়েছে। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত সামগ্রিকভাবে এলসি খোলা ২২ দশমিক ৫২ শতাংশ কমে ৩ হাজার ৪১০ কোটি ডলারে নেমেছে। আর নিষ্পত্তি ৭ দশমিক ৭১ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৪ হাজার ১৩৭ কোটি ডলার।

এ সময়ে একমাত্র পেট্রোলিয়াম ছাড়া সব ধরনের পণ্যের এলসি কমেছে। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত পেট্রোলিয়ামের এলসি ৩৫ দশমিক ৭২ শতাংশ বেড়ে ৪৮৮ কোটি ডলারে ঠেকেছে। আর নিষ্পত্তি ৪৬ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৫৩৬ কোটি ডলার। তবে ভোগ্যপণ্যের এলসি ১৪ দশমিক ৪১ শতাংশ কমে ৪০২ কোটি ডলারে নেমেছে। শিল্পের কাঁচামালের এলসি ২৭ দশমিক ২৭ শতাংশ কমে ১ হাজার ২০৩ কোটি ডলারে নেমেছে। মধ্যবর্তী পণ্যের এলসি ৩৩ দশমিক ১৮ শতাংশ কমে ২৫৯ কোটি ডলার হয়েছে। মূলধনি যন্ত্রপাতির এলসি ৬৫ দশমিক ৩২ শতাংশ কমে হয়েছে ১২৭ কোটি ডলার। অন্যান্য পণ্যের এলসি ২০ শতাংশ কমে নেমেছে ১ হাজার ১৪৩ কোটি ডলারে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, রমজানে প্রয়োজনীয় পণ্যের এলসি খোলা ও নিষ্পত্তিতে ডলার সরবরাহের অনুরোধ জানিয়ে আমদানিকারকরা বারবার সরকারি দপ্তরে ধরনা দিচ্ছেন। গত ১৮ জানুয়ারিতেও কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় আমদানিকারক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। এতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ডলার সহায়তার জন্য মন্ত্রণালয় থেকে অনুরোধ করার আহ্বান জানানো হয়।

সংশ্নিষ্টরা জানান, দেশে আসার পর মাশুল পরিশোধ করতে না পারায় অনেক ধরনের পণ্য খালাস আটকে রয়েছে বন্দরে। বড় উদ্বেগের বিষয় হলো বিলাসবহুল পণ্যের পাশাপাশি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের এলসি কমছে। সাধারণভাবে বিনিয়োগ বাড়ছে কিনা তা বোঝার বড় উপায় মূলধনি যন্ত্রপাতির আমদানি। আর আগামীতে রপ্তানি কেমন হবে তা বোঝার অন্যতম মাধ্যম শিল্পের কাঁচামাল আমদানি কেমন হচ্ছে, তা দেখা। এ ধরনের পণ্যের এলসি কমলে কর্মসংস্থানের ওপর সরাসরি প্রভাব পড়ে। উচ্চ মূল্যস্ম্ফীতির এ সময়ে কর্মসংস্থান কমলে মানুষের ওপর চাপ আরও বাড়বে।

গত ১৫ জানুয়ারি গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে ভোগ্যপণ্যের এলসি খুলতে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে এলসি খোলা কমার অন্যতম কারণ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর তদারকি। ফলে ওভার ইনভয়েসিং তথা পণ্যের দর বেশি দেখিয়ে আমদানি বন্ধ হয়েছে।’

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, ‘আগে দুইবার চিঠি দেওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংক কিছু পদক্ষেপ নিলেও এখনও ভোগ্যপণ্য আমদানির এলসিতে সংকট রয়েই গেছে। এ অবস্থায় ভোগ্যপণ্য আমদানির ক্ষেত্রে রিজার্ভ থেকে ডলার সরবরাহের অনুরোধ জানানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।’ 

শনিবার মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘নতুন এলসি খোলা কমলেও আগের দায় নিষ্পত্তির কারণে চাপ কমছে না। তবে আমরা ছোট এলসি খুলছি। আবার বিনিয়োগ ও চাহিদা বিবেচনায় আমদানি বেশিদিন কমিয়ে রাখা যাবে না। পরিস্থিতি উত্তরণে রপ্তানি ও রেমিট্যান্স বাড়ানোর ওপর জোর দিতে হবে।’

বিভি/এইচএস

মন্তব্য করুন: