• NEWS PORTAL

  • বুধবার, ০১ মে ২০২৪

আইএমএফের ঋণ পাওয়ায় রিজার্ভে উত্থান, জুন থেকে মানতে হবে শর্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৮:৫১, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

ফন্ট সাইজ
আইএমএফের ঋণ পাওয়ায় রিজার্ভে উত্থান, জুন থেকে মানতে হবে শর্ত

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বাংলাদেশকে ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ৭০ হাজার মার্কিন ডলার ঋণের প্রথম কিস্তি দিয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ ৩২ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বৃহস্পতিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে গত ৩০ জানুয়ারি বাংলাদেশ সময় রাত ৯টায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে আইএমএফের নির্বাহী পর্ষদের বৈঠকে বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। ঋণ অনুমোদনের তিন দিনের মাথায় ২ ফেব্রুয়ারি সংস্থাটি প্রথম কিস্তির অর্থ ছাড় করেছে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বাংলাদেশ জ্বালানি ভর্তুকি হ্রাস অব্যাহত রাখবে বলে আশা প্রকাশ করেছে। সংস্থাটির মিশন প্রধান রাহুল আনন্দ বুধবার একটি ই-মেল বিবৃতিতে বলেছেন, ‘সব ভর্তুকি দরিদ্র এবং দুর্বলদের সাহায্য করছে না। ‘বাংলাদেশের গ্যাস ও বিদ্যুৎ খাতের ভর্তুকির সুযোগে ধনীরা বেশি গাড়ি চালায় এবং বেশি শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবহার করে।’ 

এক মাসের মধ্যে দ্বিতীয় দফায় গত ৩১ জানুয়ারি বাংলাদেশে খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। এর আগে পাস হওয়া নতুন আইনে সরকারকে প্রয়োজন পড়লে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। কর্তৃপক্ষ একটি সূত্রভিত্তিক প্রক্রিয়া ব্যবহার করে নিয়মিতভাবে পেট্রোলিয়ামের দাম সামঞ্জস্য করার পরিকল্পনা করেছে বলে জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ।

আইএমএফ জানিয়েছে, এরপরও দক্ষিণ এশিয়ার দেশটিতে গ্যাস ও বিদ্যুতের ভর্তুকি জুনে শেষ হওয়া অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) শূন্য দশমিক ৯ শতাংশে উন্নীত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। আগে এই হার ছিল শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ। 

ব্লুমবার্গ জানিয়েছে, আইএমএফের অর্থায়ান প্রকল্প চলাকালীন ভর্তুকি না বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আইএমএফের ঋণের প্রথম কিস্তি পাওয়ার পর বাংলাদেশের রিজার্ভ বেড়ে ৩২ দশমিক ৬৯ বিলিয়নে পৌঁছেছে। এর আগে যা ছিলো ৩২ দশমিক ১৯ বিলিয়ন ডলার। এখান থেকে আইএমএফের শর্ত যুক্ত নিট হিসাবায়ন করা হলে আরও ৮ বিলিয়ন ডলার কমে যাবে। তবে আগামী জুনে আগে তা হচ্ছে না। জুন থেকে রিজার্ভের বা বৈদেশিক মুদ্রার মজুতের প্রকৃত হিসাবায়ন শুরু করতে হবে বাংলাদেশ ব্যাংককে। পাশাপাশি প্রকৃত (নিট) রিজার্ভ বাড়াতে উদ্যোগ নিতে হবে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল ঋণ অনুমোদনের সময় যেসব শর্ত দিয়েছিলো। 

আইএমএফের কাছে বাংলাদেশ প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, ব্যবহারযোগ্য প্রকৃত (নিট) রিজার্ভ ধীরে ধীরে বাড়ানো হবে, যাতে ২০২৬ সালের মধ্যে নিট রিজার্ভ দিয়ে চার মাসের আমদানি দায় মেটানো যায়। এ জন্য চাহিদা কমানোর পাশাপাশি মুদ্রার ভাসমান বিনিময় হার চালু করা হবে। এর ফলে বিদেশি বিনিয়োগ আসবে এবং কর্মসংস্থান বাড়বে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।

আইএমএফ নিট রিজার্ভের সর্বনিম্ন সীমাও বলে দিয়েছে। আগামী মার্চে এটা হবে ২২ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলার, জুনে ২৪ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলার, সেপ্টেম্বরে ২৫ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলার এবং ডিসেম্বরে ২৬ দশমিক ৮১ বিলিয়ন ডলার।

এর মধ্যে প্রায় ৮ বিলিয়ন বা ৮০০ কোটি ডলার এমন কর্মসূচিতে ব্যবহার করা হয়েছে। যা আইএমএফ রিজার্ভের হিসাবে অন্তর্ভুক্ত না করতে পরামর্শ দিয়েছে। এর ফলে নিট রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২৪ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন ডলারে।

আমদানি দায় মেটাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন প্রতিনিয়ত রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করছে। গত জুলাই-জানুয়ারি সময়ে রিজার্ভ থেকে ৯২০ কোটি ডলার বিক্রি করা হয়েছে। দেশের ইতিহাসে পুরো অর্থবছরেও রিজার্ভ থেকে এত পরিমাণ ডলার বিক্রি করা হয়নি। এর আগে ২০২১-২০২২ অর্থবছরের পুরো সময়ে রিজার্ভ থেকে ৭৬২ কোটি ডলার বিক্রি করা হয়েছিল।

রমজানের আগে পণ্যের বাড়তি চাহিদা মেটাতে বাংলাদেশকে আমদানি বাড়াতে হবে, এর ফলে আরও বেশি পরিমাণ ডলার বিক্রি করতে হবে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে। এর ফলে নিট রিজার্ভ আরও কমে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

রিজার্ভ থেকে সাত বিলিয়ন ডলার দিয়ে গঠন করা হয়েছে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ)। এ ছাড়া রিজার্ভের অর্থে গঠন করা হয়েছে লং টার্ম ফান্ড (এলটিএফ) ও গ্রিন ট্রান্সফরমেশন ফান্ড (জিটিএফ)। বাংলাদেশ বিমানকে উড়োজাহাজ কিনতে সোনালী ব্যাংককে রিজার্ভ থেকে অর্থ দেওয়া হয়েছে। আবার পায়রা বন্দরের রাবনাবাদ চ্যানেলের খনন কর্মসূচিতেও রিজার্ভ থেকে অর্থ দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে বিভিন্ন তহবিল ও ফান্ডে ব্যবহার করা হয়েছে রিজার্ভের আট বিলিয়ন ডলার।

বিভি/এইচএস

মন্তব্য করুন: