• NEWS PORTAL

  • রবিবার, ১১ মে ২০২৫

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

সেশনজটের যাঁতাকলে পিষ্ট হাবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা

তানভীর হোসাইন, হাবিপ্রবি প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২১:২৫, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩

ফন্ট সাইজ
সেশনজটের যাঁতাকলে পিষ্ট হাবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা

হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) বিভিন্ন অনুষদে বিভাগ ভিত্তিক তীব্র সেশনজট সৃষ্টি হয়েছে। ছয় মাসের এক সেমিস্টার শেষ করতে সময় লাগছে আট থেকে নয় মাস। ফলে চার বছরের স্নাতক শেষ করতে সময় লাগছে প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে মোট ছয়টি ব্যাচ(১৮, ১৯, ২০, ২১, ২২, ২৩) অধ্যায়নরত রয়েছে।

এদিকে শিক্ষার্থীদের স্টুডেন্ট আইডি কার্ডের নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হবার ফলে অনেক ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে পরিচয় দিতে জটিলতায় পড়ছেন হাবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা। তবে বিশ্ববিদ্যালয়টির ২১, ২২ ও ২৩ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের একাডেটিম কার্যক্রম যথা সময়েই অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই তিনটি ব্যাচে করোনা জনিত  ভর্তি বিলম্ব ছাড়া জট নেই।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ একাডেমিক রুটিন বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি 'ফর্মালিটিজ পেপার' মাত্র। রুটিন অনুযায়ী ক্লাস পরীক্ষা নিতে না পারায় সেশনজট তীব্র আকার ধারণ করেছে। শিক্ষক সংকট, এমনকি বিভিন্ন বিভাগে ক্লাসরুম সংকটের কারণেও বাড়ছে সেশনজট। করোনা পরবর্তী সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ছয় মাসের সেমিস্টার চার মাসে শেষ করার ঘোষণা দিলেও বাস্তবে তার বাস্তবায়ন না হওয়ায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ যেনো আরও চরমে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের অধিকাংশ বিভাগে এক থেকে দেড় বছরের সেশনজট রয়েছে। এরমধ্যে সোশ্যাল সায়েন্স এন্ড হিউম্যানিটিজ অনুষদের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সেশনজট সবথেকে বেশি। এই বিভাগের ১৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের স্নাতক ২০২১ সালে শেষ হবার কথা থাকলেও গত মাসের (আগষ্ট) ২০ তারিখে ফাইনাল পরীক্ষা শেষ করেছে। একই বিভাগের ১৯ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা লেভেল ৩ সেমিস্টার ২ এর ফাইনাল শেষ করেছে মাত্র তবে তাদের ভাইভা এখনো হয়নি। 

বিজ্ঞান অনুষদের বিভিন্ন বিভাগও চরম সেশনজটের কবলে পড়েছে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা। এক্ষেত্রে এই অনুষদের সবথেকে বেশি জটে রয়েছে রসায়ন বিভাগ। এই বিভাগের ১৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা চার বছরের স্নাতক শেষ করতে সাড়ে পাঁচ বছরের বেশী সময় নিলেও কেবল সপ্তম সেমিস্টার পার করে অষ্টম সেমিস্টারে পা দিতে পেরেছে। 

জানা যায়, এই বিভাগের ১৮ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা এখন পর্যন্ত মিড সেমিস্টার পরীক্ষাও দিতে পারেনি। তবে এই অনুষদের বাকি তিনটি বিভাগ (গণিত, পরিসংখ্যান ও পদার্থ) তুলনামূলক এগিয়ে রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে প্রবীণ অনুষদ অর্থাৎ কৃষি অনুষদের অবস্থাও ভয়াবহ। প্রতিষ্ঠার এত বছর পরেও এই অনুষদে বিরাজ করছে তীব্র সেশনজট। 

জানা যায়, এই অনুষদের ১৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের স্নাতক ২০২১ সালে শেষ হবার কথা থাকলেও সবে মাত্র তারা ৮ম সেমিস্টারের ফাইনাল পরীক্ষা দিচ্ছে। এছাড়াও এই অনুষদের ১৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরাও অন্যান্য অনুষদগুলোর তুলনায় অনেক পিছিয়ে রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের তিনটি বিভাগেও রয়েছে সেশনজট। এছাড়াও ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের বিভিন্ন বিভাগ থেকে শুরু করে ভেটেরিনারি অনুষদ, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ এবং ফিশারিজ অনুষদেও এক থেকে দেড় বছরের জট রয়েছে।

এদিকে নির্ধারিত সময়ে কোর্স শেষ না হওয়ায় শিক্ষার্থীদেরকে দীর্ঘদিন বিশ্ববিদ্যালয়েই অবস্থান করতে হচ্ছে। ফলে অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীদের পক্ষে থাকা খাওয়াসহ বিভিন্ন খরচ বহন‌ করা কষ্টসাধ্য। এছাড়াও সেশনজটের ফলে পরিবহন সংকট, আবাসিক সংকটসহ আরও নানা সংকট জটিল আকার ধারণ করেছে।

ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের ১৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী আহমেদ সাকিল বলেন, "বর্তমানে আমাদের ৭ম সেমিস্টারের ফাইনাল চললেও আইডি কার্ডের মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে। সেশনজট এর অন্যতম কারণ হচ্ছে সঠিক সময়ে কোর্স শেষ করতে না পারা। সমাধানের ক্ষেত্রে প্রথমত রুটিন অনুসরণ করা যেতে পারে। অনেক সময় আগের সেমিস্টারের রেজাল্ট দেরিতে প্রকাশ হবার কারণে চলমান সেমিস্টারের পরীক্ষা পিছিয়ে যায়। এক্ষেত্রে শিক্ষক এবং ক্লাসরুম সংকট নিরসন অতীব জরুরী। জট নিরসনে রুটিনে দেওয়া তারিখেই ফাইনাল পরীক্ষা শুরু করা সময়ের দাবি।"

সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ১৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ আলী মানিক বলেন, "মধ্যবিত্তদের জন্য উচ্চশিক্ষা না। আমার কাছে মনে হয় উচ্চশিক্ষা বর্তমানে একটি শৌখিন বিষয়। আমি আমার পরিবারের একমাত্র ছেলে সবাই আমার দিকে চেয়ে আছে, আমি কবে পাস করে বের হবো এবং কর্মজীবী হয়ে পরিবারের হাল ধরবো। সেশনজটের জন্য ৫ বছরেও অনার্স শেষ হলো না। এসব ভাবলে ডিপ্রেশনের ভূত চেপে বসে।"

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রসায়ন বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, "বিজ্ঞান অনুষদের অন্যান্য বিভাগের থেকেও পিছিয়ে আছে রসায়ন বিভাগ। যেখানে অন্যরা ৫ম সেমিস্টারের ফাইনাল দিবে সেখানে আমরা কেবল ৪র্থ সেমিস্টার শেষ করলাম। শিক্ষক সংকট, ক্লাসরুম সংকট, ল্যাব সংকট এগুলো বিষয়ের দিকে লক্ষ্য রাখলে সহজে সমাধান হয়। ল্যাব রুমের সংকটের কারণে থিউরি পরীক্ষা শেষ করার পর ১ থেকে ২ মাস বসেই থাকতে হয় আমাদের।"

এবিষয়ে কৃষি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. বিধান চন্দ্র হালদার বাংলাভিশনকে বলেন, "বর্তমানে সেশনজট বৃদ্ধি হওয়ার মূল কারণ করোনা ভাইরাসজনিত কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকা। এতে দীর্ঘ প্রায় ১৮ মাস বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় জট সৃষ্টি হয়। বর্তমানে আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে দ্রুত সেশনজট কাটানোর চেষ্টা করছি। সেই লক্ষ্যে ২০ ব্যাচের থেকে পূর্ববর্তী ব্যাচগুলোর শিক্ষার্থীদের ৪ মাসে সেমিস্টারের সময় নির্ধারণ করে বর্তমান কার্যক্রম চলছে। আর ২১ ব্যাচ থেকে আমরা প্রত্যেক সেমিস্টার ৬ মাসের মধ্যেই শেষ করতেছি। কৃষি অনুষদের শিক্ষার্থীদের অতিরিক্ত ল্যাব থাকায় সেমিস্টার শেষ করতে একটু বেশী সময় লেগে যায়। তবে সেশনজট নিরসনে যে আমাদের চেষ্টার কমতি রয়েছে এরকম অভিযোগ শিক্ষার্থীরা কখনোই করতে পারবে না। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। আশা করছি অতি শীঘ্রই আমরা সেশনজট কাটিয়ে উঠতো পারবো।"

এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম. কামরুজ্জামান এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি পরবর্তীতে যোগাযোগ করতে বলেন। কিন্তু পরবর্তীতে মুঠোফোনে একাধিকবার তার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

বিভি/এইচএস

মন্তব্য করুন: