জ্যেষ্ঠ শিক্ষক দাবি করে বিভাগের প্রধান নিয়োগ চেয়ে আইনি নোটিশ
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের এক শিক্ষক নিজেকে জ্যেষ্ঠ দাবি করে বিভাগীয় প্রধান হিসেবে নিয়োগ চেয়ে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর কর্তৃপক্ষকে আইনি নোটিশ দিয়েছেন। যদিও ওই শিক্ষকের আবেদনের প্রেক্ষিতে এর আগে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে তার জ্যেষ্ঠতার বিষয়টি ২০২০ সালে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করে দিয়েছিল।
বৃহস্পতিবার (৯ মে) সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আনিছুর রহমান ওই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহামুদুল হকের পক্ষে উপাচার্য, রেজিস্ট্রার, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান নিয়োগ সংক্রান্ত সুপারিশ প্রণয়ন কমিটির আহ্বায়ক প্রফেসর ড. মো. মোরশেদ হোসেন এবং ওই বিভাগের প্লানিং কমিটির সদস্যদের এই নোটিশ পাঠিয়েছেন।
নোটিশে বলা হয়, হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী গত ৯ মার্চ ২০১৯ অনুষ্ঠিত ৬০তম সিন্ডিকেট সভার অনুমোদনক্রমে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে মাহামুদুল হককে প্রভাষক পদে নিয়োগ প্রদান করা হয়। পূর্বের এই রায় পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন না করায় তিনি আরেকটি রিট মামলা করেন হাইকোর্টে। রায় অনুযায়ী মাহামুদুল হককে কেন জ্যেষ্ঠতা ও সার্ভিস বেনিফিট দেওয়া হবে না এবং নিয়োগ জালিয়াতির কারণে কেন একই বিভাগের শিক্ষক তাবিউর রহমান প্রধানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে না মর্মে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রতি গত ১৪ মার্চ, ২০২২ তারিখে হাইকোর্ট একটি রুল জারি করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অফিস সূত্র জানিয়েছে, হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী মাহামুদুল হককে প্রভাষক পদে নিয়োগ দেয়ার পর তিনি জ্যেষ্ঠতা চেয়ে আবেদন করলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সিন্ডিকেট সদস্যদের সমন্বয়ে একটি উচ্চতর কমিটি গঠন করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ পদোন্নতির অভ্যন্তরীণ নীতিমালা, নিয়োগপত্র, হাইকোর্টের আদেশ পর্যালোচনা করে মাহামুদুল হককে জ্যেষ্ঠতা দেয়ার সুযোগ নেই বলে সুপারিশ করে ওই কমিটি। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালের ১২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ৭২তম সিন্ডিকেট সভার অনুমোদনক্রমে ২৭ ডিসেম্বর ২০২০ তারিখে তাকে পত্রের মাধ্যমে বিষয়টি জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সিদ্ধান্তকে গোপন করে ২০২২ সালের মার্চ মাসে আবারও রিট আবেদন করলে ১৪ মার্চ হাইকোর্ট এ বিষয়ে একটি রুল দিয়েছেন। এরপর ওই রুলের উপর আর কোন শুনানি না হওয়ায় এখনও সেটি বিচারাধীন।
এদিকে গত ১০ মার্চ, ২০২৪ তারিখে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম বিভাগীয় প্রধান হিসেবে দায়িত্বের মেয়াদ শেষ করলে জ্যেষ্ঠতা অনুযায়ী বিভাগের অপর সহযোগী অধ্যাপক তাবিউর রহমান প্রধানের বিভাগীয় প্রধান হওয়ার কথা। কিন্তু আইনগত জটিলতার কথা উল্লেখ করে তাকে বিভাগীয় প্রধান হিসেবে নিয়োগ না দিয়ে আইন লঙ্ঘন করে পর পর তিনজন সহকারী অধ্যাপককে বিভাগীয় প্রধান হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হয়। কিন্তু তারা অপারগতা প্রকাশ করলে দুই মাস ধরে বিভাগীয় প্রধানের পদ শুন্য হয়ে আছে। এর প্রেক্ষিতে গত রবিবার থেকে আন্দোলনে নামে বিভাগের শিক্ষার্থীরা। বিষয়টি সমাধানের জন্য তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং উপাচার্য আগামী রবিবারের মধ্যে বিষয়টি সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন। এর আগেই বৃহষ্পতিবার নিজেকে জ্যেষ্ঠ দাবি করে সাতদিনের মধ্যে বিভাগীয় প্রধান হিসেবে নিয়োগের জন্য আইনি নোটিশ দিলেন মাহামুদুল হক। এ সময়ের মধ্যে তাকে বিভাগীয় প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া না হলে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছেন তার আইনজীবী।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হাসিবুর রশীদ বলেন, এ বিষয়ে কমিটি করে দেয়া হয়েছে। আগামী রবিবারের মধ্যে এটি সমাধান করে দেয়া হবে।
মাহামুদুল হকের জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ নিয়ে সিন্ডিকেট কর্তৃক নিষ্পত্তি হওয়া বিষয়ে আইনি নোটিশ পাঠানোর ব্যাপারে তার আইনজীবী অ্যাডভোকেট আনিছুর রহমানকে ফোন করা হলে তিনি এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
বিভি/টিটি
মন্তব্য করুন: