একাডেমিক ও প্রশাসনিক দক্ষ উপাচার্য চান কুবি শিক্ষার্থীরা
একটি বিশ্ববিদ্যালয় কেমন হবে, কোন পথে চলবে, সেটি নির্ভর করে মূলত একজন উপাচার্য কেমন হবেন, তার ওপর। উপাচার্যের সিদ্ধান্ত নেয়ার সক্ষমতার উপর নির্ভর করে একটি বিশ্ববিদ্যালয় ঠিক কতটুকু উচ্চতার শিখরে পৌঁছাতে পারবে।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের ফলে গত ৫ আগস্ট পতন হয়েছে আওয়ামী লীগ সরকারের। পরিবর্তন আসতে শুরু করেছে দেশের সব সেক্টরেই। তেমনি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে এতোদিন যেভাবে রাজনীতিকীকরণ করে রাখা হয়েছে সেটিও ভেঙ্গে যেতে শুরু করেছে অনেক জায়গায়। উপাচার্য নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রথমেই দেখা হচ্ছে শিক্ষাগত যোগ্যতাকে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন একে একে নিয়োগ পাচ্ছে নতুন উপাচার্য, তেমনি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও দিন গুণছেন অরাজনৈতিক, শিক্ষাবিদ এবং সৎ ও কর্মঠ একজন উপাচার্যের আশায়। যিনি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে যাবেন অনন্য এক উচ্চতায়।
নতুন উপাচার্য কেমন হওয়া উচিত এবং নতুন উপাচার্যের প্রতি শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশার বিষয়টি জানতে কথা হয় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন সাবেক এবং বর্তমান শিক্ষার্থীর সাথে। কথা বলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাভিশন প্রতিনিধি মুরাদুল মুস্তাকীম।
‘মালিক না, উপাচার্যকে হতে হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেবক’
লিডারশীপ, অভিজ্ঞতা, পাঠদান ও গবেষণার জ্ঞান, দূরদর্শিতা, সততা, বিচক্ষণতা, ব্যক্তিগত এজেন্ডামুক্ত, আঞ্চলিকতার প্রভাবমুক্ত, গ্রুপিংয়ের মানসিকতা মুক্ত, যোগাযোগ দক্ষতা এবং নেগোসিয়েশন দক্ষতা - মূলত এই এগারোটি যোগ্যতাসম্পন্ন কাউকে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের চেয়ারে চাই।
এছাড়া উপাচার্যকে অপ্রয়োজনীয় ক্ষমতার প্রদর্শন থেকে বিরত থাকতে হবে এবং ইগো বিবর্জিত মানুষ হতে হবে। তোষামোদ থেকে নিজেকে দূরে রাখতে হবে এবং বাস্তবসম্মত স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। শিক্ষক ও অন্যসব নিয়োগসহ প্রতিটি পদক্ষেপের আগে বিষয়টির ফেয়ারনেস যাচাই করতে হবে। উপাচার্যকে বোঝাতে হবে যে তিনি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিক নন, বরং একজন সেবক—এটি তার কাজ ও মনোভাবের মাধ্যমে স্পষ্টভাবে প্রমাণ করতে হবে। কম কথা বলার মাধ্যমে তিনি অধিক কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান সংকট ও স্বেচ্ছাচারিতা দূর করবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি ক্ষেত্রে জবাদিহিতা নিশ্চিত করবেন। শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও এলামনাইদের সাথে বছরে অন্তত একবার আলোচনায় বসবেন। ফিডব্যাক নিবেন। এইভাবে, তিনি শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করে একটি সমৃদ্ধ, মানসম্পন্ন ও কার্যকরী ক্যাম্পাস সংস্কৃতি গড়ে তুলবেন।
ড. মোহাম্মদ মাহাদী হাসান,
সহকারী অধ্যাপক, ডিপার্টমেন্ট অব ইংলিশ অ্যান্ড হিউম্যানিটিজ
ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব)
১ম ব্যাচ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
‘ভিসি কোন নির্দিষ্ট দলের হবেন না, কোন প্রশাসক হবেন না’
ভবিষ্যৎ নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এমন হওয়া উচিত যিনি শুধু শিক্ষার মানোন্নয়নই করবেন না, বরং নতুন প্রজন্মের জন্য প্রগতিশীল ও উদ্ভাবনী দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করবেন। তিনি শিক্ষার মান উন্নত করতে এবং গবেষণার জন্য উৎসাহিত করতে নেতৃত্ব প্রদান করবেন। শিক্ষকদের এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে সৃজনশীলতা ও নতুনত্বের পরিবেশ তৈরি করতে সক্ষম হবেন। ভবিষ্যৎ বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতা করতে বিশ্ববিদ্যালয়কে গবেষণামূলক কাজের দিকে মনোনিবেশ করবেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার জন্য একটি শক্তিশালী পরিবেশ সৃষ্টি করবেন এবং আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন গবেষণা কার্যক্রম চালু করবেন। শিক্ষক নিয়োগে যিনি সর্বোচ্চ মেধার গুরুত্ব দিবেন। কোন নির্দিষ্ট দলীয় কর্মী যেন শিক্ষক নামক মহান পেশায় নিয়োগ না পায় সেটা নিশ্চিত করবেন। ভিসি কোন নির্দিষ্ট দলের হবেন না, ভিসি কোন প্রশাসক হবেন না।পাঠদানের সময় শিক্ষকরা ক্লাসে না যেয়ে উনার দপ্তরে ঘুরবেন না এটা নিশ্চিত করবেন। কোন নির্দিষ্ট ছাত্রসংগঠনের নেতারা উনার দপ্তরে ঘুরাঘুরি করবে না এই পরিবেশ নিশ্চিত করবেন।
একজন ভিসি হবেন ছাত্রদের, একজন ভিসি হবেন গবেষকদের এটাই চাওয়া। একজন সাবেক কুবিয়ান হিসেবে খুব বেশি কিছু চাইনি তো!
মো: ওবায়দুল হক
পিএইচডি গবেষক
ইউনিভার্সিটি অব আলবামা, যুক্তরাষ্ট্র
৭ম ব্যাচ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
‘প্রশাসনের সাথে সংগঠনগুলোর সম্পর্ক থাকবে সহযোগিতার, প্রতিযোগিতার নয়’
বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংগঠনিক সম্পৃক্ততা থাকার সুবাদে প্রশাসনিক জটিলতা গুলো কাছ থেকে দেখেছি। এখন পর্যন্ত সংগঠনগুলোর সাথে প্রশাসনের কোন কোলাবরেশন নেই, বরাদ্দ থাকে নামমাত্র। আবার নিবন্ধনকৃত সংগঠনগুলোর জন্য যে বাজেট বরাদ্দ থাকে সেগুলো পাওয়া আরো বিড়ম্বনার। এর বাইরেও বিগত কয়েকবছর ব্যক্তি স্বার্থে সংগঠনগুলোকে নিষ্ক্রিয় করার একটা হীন প্রবণতা ছিল। বিভিন্ন প্রোগ্রাম ও টুর্নামেন্ট আয়োজনে প্রশাসনের অসহযোগিতা ও স্বেচ্ছাচারিতার সম্মুখীন হতে হয়েছে। এই বিষয়গুলো পীড়াদায়ক ছিল। কারণ আমরা বিশ্বাস করি, প্রতিটা সংগঠনের স্বকীয়তা থাকবে। এখানে ফরমায়েশি চর্চার সুযোগ নেই। আমার শিক্ষাজীবন ইতোমধ্যেই শেষ হয়েছে, দায়িত্বের মেয়াদ শেষের দিকে একেবারেই। তবু প্রত্যাশা থাকবে প্রাণের ক্যাম্পাসে শিক্ষা, সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর নিজস্বতা থাকবে, বাজেট থাকবে কাজের পরিসর বিবেচনায়। এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবক হিসেবে এমন একজন শিক্ষাবিদ আসবেন যার নেতৃত্বে শিক্ষা, গবেষণা ও সংস্কৃতির সুষম বিকাশ ঘটবে। আগামী দিনের সাংগঠনিক সহযোদ্ধাদের সাথে প্রতিযোগিতা নয় সহযোগিতার সম্পর্ক থাকবে প্রশাসনের।
জান্নাতুল ফেরদৌস
সভাপতি
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটি
বিভি/এজেড
মন্তব্য করুন: