বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ দ্বিতীয় স্ত্রীর

অভিযুক্ত শিক্ষক কাজী জাহাঙ্গীর কবির
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) মৃত্তিকা ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কাজী মো. জাহাঙ্গীর কবিরের বিরুদ্ধে স্ত্রী নির্যাতন ও প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে বিচার চেয়ে গত ১ অক্টোবর তার স্ত্রী শামছুন্নাহার বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর একটি অভিযোগ দেন। জাহাঙ্গীরের স্ত্রী মোছা. শামছুন্নাহার বাদী হয়ে গত ২২ সেপ্টেম্বর আমলী আদালত উলিপুর থানা,কুড়িগ্রামে যৌতুক নিরোধ আইন ২০১৮ এর ৩ ধারায় মামলা করে। যার সি আর নং ৪৫২/২০২৪ (উলিপুর)।
ভুক্তভোগী শামছুন্নাহার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ছিলেন। শামুছুন্নাহারের দাবি তাকে তালাক না দিয়ে অন্য এক মেয়েকে বিয়ে করে তার স্বামী জাহাঙ্গীর। এরআগেও শিক্ষক জাহাঙ্গীরের আরো একজন স্ত্রী ছিলো বলে অভিযোগ শামছুন্নাহারের।
ভুক্তভোগী শামছুন্নাহার জানান, আমাকে বিয়ে করার আগে আমার স্বামীর (জাহাঙ্গীর) একজন স্ত্রী ছিলো। অমানসিক নির্যাতন করে তাকেও ২০ দিনের মাথায় তালাক দেয় । আমার স্বামীর প্রথম স্ত্রী ঘরে থাকা অবস্থায় এক ভাইয়ের স্ত্রীর সাথে যোগাযোগ ছিল। জাহাঙ্গীরের প্রথম স্ত্রীকে সাথে নিয়ে ঢাকার একটি বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন। সেখানেই উপর তলার এক ভাইয়ের বউয়ের সাথে পরকীয়া করত জাহাঙ্গীর। প্রথম স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার পর আমার স্বামী সেই ভাইয়ের বউ অর্থাৎ ভাবীকে বাগে আনতে আপ্রাণ চেষ্টা করে। কিন্তু তার (ভাবির) স্বামী বিষয়টি বুঝে যাওয়ায় তা হয়ে ওঠেনি। তাই পরে সে (জাহাঙ্গীর) দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে আমাকে বিবাহ করে।
তিনি আরও জানান, আমি তার দ্বিতীয় স্ত্রী থাকা অবস্থায়ও সেই ভাবীর সাথে স্বামী জাহাঙ্গীর আবারও যোগাযোগ চালিয়ে যায়। আমি এ বিষয়ে বলতে গেলে আমার মাথার চুল ধরে বেধরক পেটাতো। শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করত। ফলে আমি এক সময় অসুস্থ হয়ে পড়ি। তখন আমার স্বামী আমাকে চিকিৎসার নাম করে বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। আমার সাথে সব ধরনের যোগাযোগ ও খোঁজ-খবর বন্ধ করে দেয়। এর অল্প কিছু দিনের মধ্যে সে উপর তলার সেই ভাবীকে ভাগিয়ে বিয়ে করে। এ বিয়েতে সে আমার কোন ধরনের সম্মতি নেয়নি। উপর তলার সেই ভাইও তার স্ত্রীকে তালাক দেয় নি।ওই ভাবীকে পাওয়ার জন্য আমার স্বামী আমাকে ও তার আগের স্ত্রীকে সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করে। তার পরিকল্পিত এ প্রতারণা আমাকে ভয়াবহ দুশ্চিন্তাগ্রস্থ করেছে।এখন আমার মরা ছাড়া কোন উপায় নেই।আমার সাথে প্রতারণা করা হয়েছে।আমি এই প্রতারণার ও নির্যাতনের সুষ্ঠু বিচার চাই।স্ত্রীর মর্যাদা নিতে নিতে তিনি অভিযোগপত্রে উল্লেখও করেন।
এসব অভিযোগের সত্যতা জানতে শিক্ষক জাহাঙ্গীর কবিরের সাথে কথা হলে তিনি জানান, আমাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন ও গল্প বানানো। আমি দুই বছর আগে তাকে তালাক দিয়েছি। দুই বছর পরে কেন আমার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ আনা হচ্ছে! আমি কারোর স্ত্রীকে বিয়ে করিনি। বরং ওই মেয়ের (শামছুন্নাহার) আগের একজন স্বামী ছিলো। সেটা আমাকে জানায়নি। তিনি জানান, আমাকে প্রতিহিংসায় বিভিন্নভাবে হয়রানি করছে সে। কয়েকদিন আগে আমার অনুপস্থিততে আমার বাসার নিচে একঘন্টা বসেছিলো। সে মূলত এসব গাল গল্প মিডিয়ায় প্রচার করে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করতে চায়।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত ২০২১ সালের ২৬ আগস্ট তারিখে শিক্ষক জাহাঙ্গীর কবীর ও শামসুন্নাহারের বিবাহ হয়। বিবাহের শুরু থেকেই স্বামী জাহাঙ্গীরের দ্বারা নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হয় শামছুন্নাহার। সে সব সময় নানান কটুক্তি, নোংরা ও অকথ্য ভাষায় গালাগালি, অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি, অহেতুক অভিযোগ এবং নানাভাবে অসম্মান করা সহ যখন-তখন তালাকের ভয় দেখাতো। এভাবে নির্যাতনের মাত্রা বাড়াতে থাকে। সে হাতের কাছে যা পেত তা দিয়েই তাকে (জাহাঙ্গীরের স্ত্রীকে) মারধর করত।এমনকি অর্থ নিতে চাপ দিত।
বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বশীল দুই কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, একটি অভিযোগ মেইলে বা ডাকে পাঠানো হয়েছে বিভিন্ন দপ্তরে। এটা সত্য কি মিথ্যা সেটা এখনো দেখা হয়নি। তবে এটা তাদের পারিবারিক সমস্যা। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। তাছাড়া ওই মেয়ে শুনেছি তার স্বামীর বিরুদ্ধে মামলাও করেছেন।এখানে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কিছু করার নেই।
বিভি/এজেড
মন্তব্য করুন: