• NEWS PORTAL

  • শুক্রবার, ০৯ মে ২০২৫

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

উত্তোলন জটিলতায় ম্লান অর্জনের আনন্দ!

যায়িদ বিন ফিরোজ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

প্রকাশিত: ১৫:৪৬, ২২ মার্চ ২০২৫

ফন্ট সাইজ
উত্তোলন জটিলতায় ম্লান অর্জনের আনন্দ!

ছবি: সংগৃহীত

দীর্ঘ শিক্ষাজীবনের তথাকথিত শেষ পাঠশালায় পাঁচ থেকে ছয় বছরের অধ্যয়ন শেষে শিক্ষার্থীদের হাতে উঠে সেই বহুল কাঙ্ক্ষিত সার্টিফিকেট। তবে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর সার্টিফিকেট উত্তোলন এখানকার শিক্ষার্থীদের কাছে বেশ দুরূহ কাজ। পুরো সার্টিফিকেট সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমটি এখনও সনাতন পদ্ধতিতে আটকে থাকায় দীর্ঘদিনের পরিশ্রমের ফসল ঘরে তুলতে শিক্ষার্থীদের পোহাতে হয় নানা ভোগান্তি। ফলে উত্তোলন জটিলতায় নিমিষেই ম্লান হতে বসে শিক্ষার্থীদের এই আনন্দের অর্জন। 

দক্ষ জনবল সংকটের পাশাপাশি নানা সমস্যা দানা বেঁধে আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের ৩য় তলায় অবস্থিত পরিক্ষা নিয়ন্ত্রণ দপ্তর জুড়ে। জায়গা সংকুলানের ফলে শিক্ষার্থীদের চাপ সামলাতে হিমসিম খেতে হয় এখানে কর্মরত কর্মকর্তা কর্মচারীদের। এছাড়া এই আধুনিক যুগে এসেও সনাতন পদ্ধতিতে সার্টিফিকেট সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনা করাও শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তাদের কাছে দুর্ভোগের বটে। ফলে শিক্ষার্থীদের কাছে উক্ত দপ্তরটি হয়ে উঠেছে চরম বিড়ম্বনা এবং সেবা পাবে কি পাবে না বা ঠিক কত সময়ের মধ্যে পাবে এমন শঙ্কা ও আতঙ্কের স্থান হিসেবে। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের কাছে সহজে সার্টিফিকেট সংক্রান্ত তথ্য সরবরাহে নেই কোন আলাদা তথ্য কেন্দ্র বা ইনফরমেশন ডেস্ক। 
 
সরেজমিনে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ দপ্তরের নির্ধারিত কক্ষগুলো ঘুরে দেখা যায়, শিক্ষার্থীদের সার্টিফিকেট উত্তোলনের কাউন্টার থেকে গোপনীয় শাখায় জটলা বেঁধেই থাকে৷ এছাড়াও গোপনীয় শাখায় একপ্রকার প্রকাশ্যেই পড়ে থাকতে দেখা যায় ট্যাবুলার শিটের বইগুলোকে। শিক্ষার্থীদের সে সব বই খুঁজে নিজের কাঙ্ক্ষিত সেবা নিজেই নেওয়ার ঘটনাও এখানে ঘটে প্রায় নিয়মিত ভাবেই। এছাড়াও স্থান সংকট থাকায় শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সেমিস্টারে হওয়া পরীক্ষার খাতাগুলোও বেশ অযত্ন অবহেলায় পড়ে থাকে এখানকার করিডোরে। এছাড়া সার্টিফিকেট উত্তোলন করতে এসে এসব কক্ষের এই টেবিল সেই টেবিলে ঘুরাঘুরি’সহ সংশ্লিষ্টদের থেকে মাঝেমধ্যেই শিক্ষার্থীদের শুনতে হয় নানা তিরস্কারমূলক কথাবার্তা। 

সংশ্লিষ্ট দপ্তরের বরাত দিয়ে জানা যায়, প্রতিদিন গড়ে শ' খানেক শিক্ষার্থী সার্টিফিকেট ও ট্রান্সক্রিপ্ট তুলতে আসেন প্রশাসন ভবনে। তবে চাকরির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হলে যা প্রায় ৪০০/৫০০ তে গিয়েও দাঁড়ায়। সেই হিসেবে দপ্তরটিতে সার্টিফিকেট উত্তোলনে সহায়তাকারী সংশ্লিষ্ট কর্মচারী মাত্র ৫/৬ জন। সেক্ষেত্রে সার্টিফিকেট উত্তোলন করতে আসা প্রায় সবাইকেই পড়তে হয় কোনো না কোনো হয়রানির মুখে। স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের প্রথম এই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার ৪৬ বছর অতিবাহিত করলেও হাতেগোনা কয়েকটি ক্ষেত্র ছাড়া আধুনিকতার ছোয়া পায়নি অনেক জায়গায়ই। যার ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা অর্জনের চেয়ে কঠিন হয়ে পড়েছে সার্টিফিকেট উত্তোলন।

এছাড়াও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এই কার্যালয়ে থাকা গোপনীয় কক্ষটিও কর্মচারী সংকটে এখন উন্মুক্ত। শিক্ষার্থীদের সেখানে নিজে এসে কাগজ খুজে বের করতে হয়। যার ফলে একজন শিক্ষার্থীর সারাজীবনের ফসল এই সার্টিফিকেটটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কাছে থেকেও তীব্র অনিরাপত্তায়।

প্রশাসন ভবন সূত্রে, প্রতিটি বিভাগের ফল প্রকাশ, একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট, নম্বরপত্র ও সনদপত্র প্রদানের কাজ করে থাকে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তর। প্রশাসন ভবনের উত্তর ব্লকের তিনতলায় অবস্থিত এই দপ্তরের কাউন্টার ও অফিস কক্ষগুলোতে শিক্ষার্থীদের ভিড় থাকে সব সময়। নিয়মানুযায়ী একজন শিক্ষার্থী এসব কাগজপত্র জরুরি ভিত্তিতে আবেদনের ৫ দিন এবং জরুরি বাদে ১৫ দিনের মধ্যে পাওয়ার কথা। কিন্তু শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, নিয়ম মেনে আবেদনপত্র দেওয়ার পর নির্দিষ্ট সময় কেটে গেলেও কাঙ্ক্ষিত কাগজপত্র মেলে না। অনেক সময় মাসের পর মাস কেটেও যায়। ঘটে আবেদনপত্র হারিয়ে ফেলার মতো ঘটনা। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কাজের প্রতি অবহেলাকে দায়ী করেন শিক্ষার্থীরা।

সার্টিফিকেট তুলতে আসা ইমন আহমেদ নামের এক শিক্ষার্থী এই বিষয়ে বলেন, এখানে সার্টিফিকেট উত্তোলন করা বেশ কষ্টসাধ্য। নানা ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়। অথচ শিক্ষার্থীদের এই সেবাটি অতি সহজে পাওয়া উচিত বলে মনে করি।

এখানে কেউ কাউকে তেমন হেল্প করে না উল্লেখ করে শাহিন নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের পড়াশোনা করার পুরো সময়টায় আমরা যে কষ্ট করি সার্টিফিকেট তুলতে এসেও একি পরিমান কষ্ট। সবচেয়ে বড় বিষয় এখানে কেউ কাউকে তেমন সহযোগিতা করে না।

এবিষয়ে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. ওয়ালিউর রহমান পিকুল বলেন, আমি নতুন যোগদান করেছি। ইতোমধ্যেই এই দপ্তরে বিদ্যমান সমস্যা নিয়ে সহকর্মীদের সাথে দুই দফায় মিটিং করেছি, কী কী সমস্যা আছে সেগুলো জেনেছি। আমাদের জনবল সংকটটা ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের সাধ্যের মধ্যে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করি শিক্ষার্থীদের সেবা দেওয়ার তবে সীমাবদ্ধতার কারণ অনেক সময় শিক্ষার্থীদের আশানুরূপ সেবা দিতে পারি না। প্রশাসনের সাথে আলোচনা করে দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করবো।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকিব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, শিক্ষার্থীদের এই ভোগান্তি গুলো শেষ করা প্রয়োজন। বিষয়গুলো নিয়ে আমি আমার শিক্ষকদের কাছ থেকেও অভিযোগ পেয়েছি। কীভাবে এই প্রক্রিয়াটি ওয়ান স্টেপ সার্ভিসের আওতায় আনা যায় তা আমাদের পরিকল্পনায় আছে। 


 

বিভি/এআই

মন্তব্য করুন: