নানাবিধ সংকটে জর্জরিত ঢাকা কলেজ

ঢাকা কলেজ।
দক্ষিণ এশিয়ার ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঢাকা কলেজ আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞানের ধারক ও বাহক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৪১ সালে । তখন থেকেই প্রতিষ্ঠানটিতে শুরু হয় পাশ্চাত্যের দর্শন,বিজ্ঞান এবং কলাবিদ্যা চর্চা। এখানে শুধু দেশের নয় বিদেশ থেকেও পড়তে আসতেন এক ঝাঁক মেধাবী শিক্ষার্থী। যার হাত ধরেই প্রতিষ্ঠিত হয় প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
সেই গৌরবগাথা ইতিহাস সময়ের পরিবর্তনে ম্লান হয়ে যাচ্ছে। কলেজটিতে দেখা দিয়েছে নানাবিধ সংকট ও সমস্যা। লাইব্রেরি ও সেমিনারে পর্যাপ্ত পাঠ্যবই ও জায়গার সংকট, ল্যাব ও গবেষণাগারের সরঞ্জামাদি অচল। ক্লাস রুম, আবাসন এবং পরিবহন সংকট সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঠিকমতো ক্লাস না হওয়া, শিক্ষক সংকট , ব্যাপক অনুপস্থিতি এবং পরীক্ষার আলাদা ভবন না থাকা সহ রয়েছে নানাবিধ সমস্যা ঐতিহ্যবাহী এই কলেজটিতে।
প্রতিষ্ঠানটির চারটি ভবনে শ্রেণি উপযোগী কক্ষ রয়েছে ৫২টি। উচ্চ মাধ্যমিক, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর মিলিয়ে ২০টি বিভাগের প্রায় ২০ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য যা যথেষ্ট নয়, বলছেন শিক্ষার্থীরা। ক্লাসরুম সংকটের কারণে পরীক্ষা চলাকালে বন্ধ থাকে অন্যান্য বর্ষের ক্লাস ৷ এতে রুটিনমাফিক ক্লাস না হওয়ায় পাঠদান থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে শিক্ষার্থীরা।
ক্ষোভ প্রকাশ করে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী নাজমুল হাসান বলেন, আমাদের নির্দিষ্ট কোন ক্লাস রুম না থাকায় একেক দিন একেক জায়গায় ক্লাস করতে হয়। মুলত রুম সংকটের কারণে আমাদের এই সমস্যা হচ্ছে । এছাড়াও পরিবহন ও আবাসন ক্ষেত্রে বড় ধরনের সংকট দেখা দিয়েছে। যার কারণে দূর থেকে এসে শিক্ষার্থীরা নিয়মিত ক্লাস করতে পারছে না। এতে ভালো রেজাল্ট করা সম্ভব হচ্ছে না।
কলেজটির নাসির হোসেন নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, স্টুডেন্ট নিয়মিত কলেজে আসছে না এবং শিক্ষকদের মধ্যেও গাফিলতি রয়েছে । যার কারণে নিয়মিত ক্লাস হচ্ছে না। স্টুডেন্টদের তুলনায় ক্লাস রুম সংকট। আবার ল্যাব নেই বললেই চলে। ল্যাবের সব সরঞ্জামাদি অচলের মতো। ফিজিক্স ডিপার্টমেন্টে সব প্র্যাকটিক্যালি বিষয়। প্রাকটিক্যাল ভালো না হওয়ার কারণে রেজাল্ট একদম খারাপ হয়।
এছাড়াও ঢাকা কলেজের জাহিদুল ইসলাম নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, নট অনলি লাইব্রেরি। আমাদের সবকিছুই পরিমাণে কম। ক্লাস রুম, পরিবহন এবং আবাসন সহ সবকিছুরই সংকট। এবিষয়ে স্যারদের সাথে নিয়মিত কথা হচ্ছে। কর্তৃপক্ষের কাছে দ্রুত সময়ের মধ্যে এই সমস্যা সমাধানের দাবি জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে ঢাকা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অধ্যাপক পারভীন সুলতানা হায়দার বলেন, এ সমস্যা অনেক আগে থেকেই। এতো দিন পর্যন্ত সমাধান হয়নি। আমি মাত্র কয়েকদিন হলো এখানে বসেছি। তবে বাস সংকট নিরসনের জন্য বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করছি। সাবস্টিসেশনের কাজ চলছে, কাজ শেষ হলেই লিফ্ট চালু হবে। তখন পুরাতন ভবন থেকে বেশ কয়েকটি ডিপার্টমেন্ট নতুন ভবনে নেওয়া হলে ক্লাস রুমের সংকট নিরসন হবে। আমাদের লাইব্রেরি সমস্যা নেই। ছাত্ররা লাইব্রেরিতে জায়গায় না পেলে ফাঁকা ক্লাস রুমে তারা পড়াশোনা করে। আমাদের ল্যাবের কোন সমস্যা নাই। ল্যাব সমস্যা হলে আমি জানতাম। ছাত্রদের থেকে শিক্ষকরা ল্যাব সমস্যা ভালো বুঝেন।
তিনি আরো বলেন, শিক্ষক সংকটের বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের ব্যপার। মন্ত্রনালয় আমাদের পদ খালি সত্ত্বেও কাউকে নিয়োগ দিচ্ছে না। এখানে কলেজের কোন হস্তক্ষেপ নাই। সমাজবিজ্ঞান বিভাগে তিনটি পদ খালি রয়েছে। এরকম আরো কোন কোন ডিপার্টমেন্ট আছে যেখানে পদই সৃষ্টি হয়নি।
ঢাকা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আরো বলেন, আমরা চেষ্টা করি ক্লাসে সর্বোচ্চ উপস্থিত রাখার। আমাদের প্রতিদিন ক্লাস হচ্ছে। কোন ক্লাস মিস হলে শিক্ষকদের শোকচ করি। ছাত্ররা যদি ক্লাসে না আসে এক এক করে তাদের ক্লাসে ফিরানো সম্ভব না। ইন্টারমিডিয়েটের শিক্ষার্থীদের ধরে বেঁধে ক্লাস করানো হয়। তারা ৯০% উপস্থিত না থাকলে তাদের চিঠিতে দেওয়া হয়। কিন্তু অনার্সের ছেলেদের ক্ষেত্রে এটা করা যায় না।
বিভি/এজেড
মন্তব্য করুন: