যোগ্যতা নেই, তবুও তিন দায়িত্ব!
গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনিক নিয়োগে স্বচ্ছতা ও নিয়মনীতি নিয়ে প্রশ্ন!

গণ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস।
গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাঠামো যেন এক নিয়োগ নাট্যমঞ্চস্থ —যেখানে নিয়ম, নৈতিকতা ও পেশাদারিত্বের প্রশ্নে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নির্বিকার। বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের সাবেক মহাপরিচালক ড. মো. নুরুল ইসলামকে একযোগে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব দেওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্বেগ ও ক্ষোভ ক্রমেই বাড়ছে।
জানা গেছে, ২০২২ সালে অবসরের পর বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে কোনো শিক্ষকতার পূর্ব অভিজ্ঞতা ছাড়াই ড. নুরুল ইসলাম গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে মেডিকেল ফিজিক্স এন্ড বায়োমেডিকেল ইন্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক পদে নিয়োগ পান। পরে তাকে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান হিসেবেও নিয়োগ দেওয়া হয়। সর্বশেষ ২০২৫ সালের ৭ মে বিজ্ঞান ও প্রৌকশল অনুষদের ডিন হিসেবে সাময়িক দায়িত্ব পান।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) বিধিমালা অনুযায়ী, অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ পেতে হলে কমপক্ষে ১২ বছরের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা এবং অন্তত ৫ বছর সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কাজের রেকর্ড আবশ্যক।
তবে ড. নুরুল ইসলাম নিশ্চিত করেছেন, তিনি গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্বে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেননি। তার পেশাগত জীবন কেটেছে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনে, যেখানে প্রায় ৩০ বছর চাকরি করেছেন এবং এবং অবসরের আগে ছিলেন কমিশনের মহাপরিচালক।
এ নিয়ে গবির এমপিবিই বিভাগের সাবেক প্রধান ড. ফাতেমা নাসরিন ইউজিসিতে লিখিত অভিযোগ দেন, যার পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৫ সালের ১০ মার্চ ইউজিসি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে ব্যাখ্যা চায়।
তবে নিয়োগ সংক্রান্ত প্রশ্নে ড. নুরুল ইসলাম জানান, “আমি কিছু জানি না।” তাঁর এই সংক্ষিপ্ত মন্তব্য নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তির জবাবদিহিতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তোলে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাসিম খান বলেন, "এই ধরনের নিয়োগ উচ্চশিক্ষার মর্যাদা ও মান উভয়কেই প্রশ্নবিদ্ধ করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন যদি মনে করে, আমাদের শিক্ষাজীবন নিয়ে ছেলেখেলা খেলবে, তা করতে দেওয়া হবে না। আমরা চাই, আইন অনুযায়ী তাকে সরিয়ে দিয়ে যোগ্য কাউকে নিয়োগ দেওয়া হোক।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষক বলেন,“অধ্যাপক হওয়ার যোগ্যতা নেই জেনেও তাঁকে একাধিক পদে বসানো হয়েছে। এর আগেও যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এবার ডিনের পদেও বসানো একটি অনভিপ্রেত নজির তৈরি করল, যা প্রতিষ্ঠানের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির কারণ হতে পারে।”
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. ওহিদুজ্জামান বলেন, “ইউজিসি থেকে একটি চিঠি এসেছিল, আমরা তার উত্তর দিয়েছি। এরপর আর কোনো চিঠি আসেনি। যেহেতু তিনি অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত, তাই সাময়িকভাবে ডিন হিসেবে তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে কোনো নির্দেশনা এলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
বিভি/এজেড
মন্তব্য করুন: