• NEWS PORTAL

  • মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫

Drama: Jamai Bou Chor
Drama: Jamai Bou Chor

‘রাজনীতি মুক্ত’ শুধু নোটিশেই দায় শেষ? প্রশ্ন গবি শিক্ষার্থীদের

গবি প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৫:৩৪, ৭ জুলাই ২০২৫

ফন্ট সাইজ
‘রাজনীতি মুক্ত’ শুধু নোটিশেই দায় শেষ? প্রশ্ন গবি শিক্ষার্থীদের

গণ বিশ্ববিদ্যালয় (গবি) ‘রাজনীতি মুক্ত’ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নীতিতে পরিচালিত হলেও, বাস্তবে সেই নীতি কার্যকর হচ্ছে কি না- তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষার্থীরা। সম্প্রতি ছাত্রদলের নামে প্রকাশ্যে কমিটি ঘোষণা হলেও, প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া সীমাবদ্ধ শুধু একটি নোটিশে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, শুধু নোটিশ দিয়ে দায় শেষ করলে নীতির বাস্তবতা থাকে না। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী, ভর্তি হওয়ার সময় শিক্ষার্থীদের লিখিত অঙ্গীকার করতে হয় যে তারা দলীয় রাজনীতি থেকে বিরত থাকবে। প্রস্পেক্টাসেও স্পষ্টভাবে বলা আছে, কোনো রাজনৈতিক সংগঠনে সম্পৃক্ত হওয়া যাবে না এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম বা লোগো ব্যবহার করে কার্যক্রম পরিচালনা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

তবুও ১১ জুন “বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, গণ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা” নামে ১২ সদস্যের একটি আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। প্রকাশিত তালিকায় সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ও লোগো ব্যবহার করা হয়, যা কনসেপ্ট পেপার, প্রস্পেক্টাস এবং প্রশাসনিক নীতিমালার সরাসরি লঙ্ঘন।

এর জবাবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ১৬ জুন আবারও একটি নোটিশ জারি করে জানায়, “গণ বিশ্ববিদ্যালয় রাজনীতি মুক্ত একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। নাম বা লোগো ব্যবহার করে দলীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ। ব্যত্যয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” উল্লেখ্য, এ ধরনের ঘটনা এর আগেও ঘটেছিল এবং ১৯ মার্চ প্রশাসন এ বিষয়ে সতর্কতা জারি করেছিল।

আইন বিভাগের শিক্ষার্থী তাওহীদ আহমদ সালেহিন বলেন, “একটি নীতিভঙ্গের পর শুধু নোটিশ দিয়ে দায়িত্ব শেষ করা যায় না। কার্যকর ব্যবস্থা না থাকলে এটা শিক্ষার্থীদের চোখে একপ্রকার উপহাসের মতো লাগে।”

তিনি আরও বলেন, “শিক্ষকরা, এমনকি রেজিস্ট্রার ও উপাচার্য আমাদের কথায় সহমত পোষণ করলেও মাঠে প্রশাসনিক স্তরে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না।”

গবি ছাত্র সংসদের সাবেক ক্রীড়া সম্পাদক মাহতাবুর রহমান সবুজ বলেন, "ছাত্র সংসদ না থাকায় একটি রাজনৈতিক শূন্যতা তৈরি হয়েছে, যা রাজনৈতিক সংগঠনগুলো কাজে লাগাচ্ছে। এখনই যদি ছাত্র সংসদ নির্বাচন দেওয়া হতো, তাহলে রাজনৈতিক সংগঠনের দরকার পড়ত না।”

তিনি আরও বলেন, “শিক্ষার্থীরা এখানে রাজনীতি করতে আসে না। তারা চায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশে পড়তে। কিন্তু প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা সেই পরিবেশকেই প্রশ্নবিদ্ধ করছে।”

তবে বিষয়টি ঘিরে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের ভিন্ন মতামতও উঠে এসেছে।

গণ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি মো: নির্জন বলেন, “৫ আগস্টের ঘটনার পর দেশের রাজনীতিতে নতুন ধারার সূচনা হয়েছে, সেই ধারাবাহিকতায় গবি শাখার কমিটি দেওয়া হয়েছে। তবে আমরা কখনো ক্যাম্পাসে কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি দেইনি বা স্লোগান দেইনি। শুধু রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ রাখা বৈষম্যমূলক মনে হয়। প্রশাসন যদি পদক্ষেপ নেয়, আমরা কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেব।”

ছাত্রশিবিরের কর্মীরা জানান, “গণ বিশ্ববিদ্যালয় শুরু থেকেই রাজনীতি মুক্ত শিক্ষাঙ্গন হিসেবে পরিচিত। আমরাও এই নীতিমালাকে সম্মান করে চলছি। আমাদের কার্যক্রম সবসময় ক্যাম্পাসের বাইরে। যদি কখনো বিশ্ববিদ্যালয় আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনৈতিক কার্যক্রমের অনুমতি দেয়, তাহলেই আমরা কমিটি ঘোষণা করব। এখন নয়।”

তারা আরও বলেন, “গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের প্রকাশ্য কমিটি ঘোষণাকে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতি ও পরিবেশের পরিপন্থী মনে করি। এখনই সময়, প্রশাসনের উচিত কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে সুশৃঙ্খল পরিবেশ নিশ্চিত করা।”

বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি মশিউর রহমান খান রিচার্ড বলেন, “গণ বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের আবেগের জায়গা, এটি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান। উনি নিজেই রাজনীতি মুক্ত নীতিমালা তৈরি করে গেছেন। যারা সেটি লঙ্ঘন করছে, তারা আসলে ডাক্তারের প্রতি অসম্মান দেখাচ্ছে। প্রশাসনের উচিত, ওই কমিটির কার্যক্রম থেকে সরে আসার আদেশ দেওয়া এবং ছাত্র সংসদের নিয়মিত নির্বাচন দিয়ে নেতৃত্ব চর্চার জায়গা তৈরি করা।”

তিনি আরও বলেন, “ছাত্ররাজনীতি গণতন্ত্র চর্চা ও নেতৃত্ব বিকাশে ভূমিকা রাখলেও, যেহেতু গবিতে দলীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ, তাই আমরা কখনো কমিটি দিইনি বা দেব না। আমরা চাই, নিয়মিত ছাত্র সংসদ নির্বাচন হোক। সেই মাধ্যমে নেতৃত্ব আসুক। সুস্থ ধারার রাজনীতি হোক, সেটাই ডা. জাফরুল্লাহর স্বপ্ন।”

এ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া ঝড় তোলে। শিক্ষার্থীরা লেখেন, “ডা. জাফরুল্লাহ স্যারের স্বপ্নের প্রতিষ্ঠান যেখানে কোনো রাজনৈতিক কার্যক্রমের স্থান নেই, সেখানে কিছু শিক্ষার্থী নিয়ম ভেঙে রাজনৈতিক কমিটি করছে। অথচ প্রশাসন চোখ বন্ধ করে আছে।”

সাবেক শিক্ষার্থীরাও বলেন, “ভর্তির সময় যেটা লিখে নিতে হয়, আজ সেই চুক্তি কেউ মানছে না এটা মেনে নেওয়া যায় না। আজ ছাত্রদল করলো, কাল অন্যরা করবে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আবুল হোসেন বলেন, “ছাত্রদলের কমিটির বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। আমরা ব্যারিস্টারের পরামর্শ অনুযায়ী প্রাথমিক নোটিশ জারি করেছি। পরিস্থিতি বিবেচনায় পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

তিনি আরও বলেন, “নোটিশ সত্ত্বেও কেউ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত আইনে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

বিভি/এজেড

মন্তব্য করুন: