রাকসুর নির্বাচিত প্রতিনিধি থেকে জাতীয় নেতৃত্বে তাঁরা

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই ক্যাম্পাসে নির্বাচনী আমেজ চলছে। দীর্ঘ ৩৫ বছর পর রাকসু নির্বাচন আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন।
এরইমধ্যে বর্তমান শিক্ষার্থীরা অতীতে অনুষ্ঠিত হওয়া নির্বাচনগুলোতে নির্বাচিত ছাত্র প্রতিনিধিদের সম্পর্কে জানার চেষ্টা করছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ছাত্র সংসদ নির্বাচনের নথি, দলিল—সর্বোপরি রাকসুর ইতিহাস সংরক্ষণ করতে ব্যর্থ হয়েছে।
তবে বিভিন্ন ম্যাগাজিন, তৎকালীন সময়ে নির্বাচন কাভার করা সাংবাদিকদের সাথে কথা বলে এ প্রতিবেদক রাবি ক্যাম্পাসের কয়েকজন সাবেক ছাত্রনেতা সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেছে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হলেন:
রুহুল কবির রিজভী
১৯৯০ সালে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ রাকসু নির্বাচনে ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন রিজভী। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের সভাপতির দায়িত্ব পালনের পর কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
সৈয়দ শাহিন শওকত
১৯৮৯-৯০ সালে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ রাকসু নির্বাচনে সিনেট-এ ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন সৈয়দ শাহিন শওকত। তিনি বর্তমানে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি)-এর জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক (রাজশাহী বিভাগ) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
রাগিব আহসান মুন্না
১৯৮৮-৮৯ সালে রাকসু নির্বাচনে ভিপি পদে জয়ী হন সেশনে রাগিব আহসান মুন্না। তিনি বর্তমানে বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করছেন।
ফজলে হোসেন বাদশা
১৯৮০-৮১ শিক্ষাবর্ষে রাকসুর ভিপি ছিলেন তিনি। বাম রাজনীতির এই প্রবীণ নেতা বর্তমানে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক এবং আওয়ামী লীগের সাথে জোট নির্বাচনে অংশ নিয়ে রাজশাহী সদর আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন।
ফজলুর রহমান পটল
তিনি ১৯৭৪-৭৫ সালে রাকসু ভিপি ছিলেন। পরে জাতীয়তাবাদী রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে বিএনপির সাংসদ নির্বাচিত হন। তিনি নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া) আসন থেকে বিএনপি’র প্রার্থী হিসাবে চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন; এর মধ্যে ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকারের শাসনামলে যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী হন। এরপর ১৯৯৩ সালে সমাজ কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী এবং ২০০১ সালে চার দলীয় জোট সরকারের সময় যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।
নুরুল ইসলাম ঠান্ডু
তিনি ১৯৭৩-৭৪ মেয়াদে রাকসুর ভিপি ছিলেন। পরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন এবং তার নিজ এলাকায় এমপি পদপ্রার্থী ছিলেন।
আবু সাইয়িদ
১৯৬৫-৬৬ শিক্ষাবর্ষে রাকসুর ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন আবু সাইয়িদ। মুক্তিযুদ্ধ পূর্ব সময়ে রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। স্বাধীনতার পর আবু সাইয়িদ তথ্য প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সংসদ সদস্যও ছিলেন।
মতিউর রহমান আকন্দ
১৯৯০ সালে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ রাকসু নির্বাচনে শহীদ শামসুজ্জোহা হলের ভিপি নির্বাচিত হন মতিউর রহমান আকন্দ। পরে বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি হয়েছিলেন। বর্তমানে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সর্বোচ্চ ফোরাম—কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য এবং ময়মনসিংহ-৫ (মুক্তাগাছা) আসনের জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী।
সৈয়দা আসিফা আশরাফী পাপিয়া
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তাপসী রাবেয়া হল থেকে টানা দুইবার ভিপি নির্বাচিত হন সৈয়দা আসিফা আশরাফী পাপিয়া। ১৯৮৯ ও ১৯৯০ সালে হল সংসদের ভিপি পদে নির্বাচিত পাপিয়া বর্তমানে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর হয়ে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে রাজনীতি করছেন। এছাড়া তিনি নবম জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসন-৪১ থেকে জাতীয় সংসদ সদস্যও নির্বাচিত হন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার তিন বছর পর প্রথম ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয় ১৯৫৬-৫৭ মেয়াদে। তখন এই সংসদের নাম ছিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (RUSU)। ১৯৬২ সালে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ—রাকসু (RUCSU) নামে যাত্রা শুরু করে। এরপর মোট ১৬ বার ছাত্র সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করা হয়েছে।
বিভি/এজেড
মন্তব্য করুন: