• NEWS PORTAL

  • রবিবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

Drama: Jamai Bou Chor
Drama: Jamai Bou Chor

ইন্টার্নশিপ ও থিসিসে বরাদ্দ অপ্রতুল, অসন্তুষ্ট বুটেক্স শিক্ষার্থীরা

রাতুল সাহা, বুটেক্স

প্রকাশিত: ২০:৪২, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

আপডেট: ২০:৪২, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ফন্ট সাইজ
ইন্টার্নশিপ ও থিসিসে বরাদ্দ অপ্রতুল, অসন্তুষ্ট বুটেক্স শিক্ষার্থীরা

বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুটেক্স) আন্ডারগ্র্যাজুয়েট পর্যায়ে ইন্টার্নশিপ ও প্রজেক্টের জন্য বরাদ্দ ভাতা অপ্রতুল হওয়ায় শিক্ষার্থীরা তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। বর্তমান সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বরাদ্দকৃত তিন হাজার টাকা দিয়ে ইন্টার্নশিপ ও প্রজেক্ট সংক্রান্ত খরচ সামলানো সম্ভব নয় বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা।

বুটেক্সের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থীদের ইন্ডাস্ট্রিয়াল এটাচমেন্ট, প্রজেক্ট/ থিসিস এর কাজ সম্পন্ন করতে হয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইন্ডাস্ট্রিয়াল এটাচমেন্ট, প্রজেক্ট/থিসিসবাবদ শিক্ষার্থীপ্রতি যে তিন হাজার টাকা প্রদান করা হয় তা বর্তমান সময়ের হিসেবে একদমই অপ্রতুল। এছাড়া অধিকাংশ শিক্ষার্থী টিউশন করে পড়ালেখার খরচ চালালেও ইন্টার্নশিপের সময় তা ছেড়ে দেয়। যার ফলে অনেকের ক্ষেত্রে খরচ চালানো কষ্টকর হয়ে পড়ে।
 
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীদের ইন্ডাস্ট্রিয়াল এটাচমেন্টের জন্য শিক্ষার্থীপ্রতি  ৪০০০ টাকা ও থিসিস/প্রজেক্ট বাবদ ৪৫০০ টাকার সমপরিমাণ অর্থ বিশ্ববিদ্যালয় হতে দেওয়া হয়। অত্যন্ত দুঃখের বিষয় বাংলাদেশের একমাত্র বিশেষায়িত টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় হয়েও বুটেক্সর শিক্ষার্থীরা যে পরিমাণ বরাদ্দ পেয়ে থেকে তা দিয়ে ভালো মানের একটি প্রজেক্ট বা থিসিস সম্পন্ন করা সম্ভব হয় না।

এজন্য গত ২৭ এপ্রিল, ইন্ডাস্ট্রিয়াল এটাচমেন্ট ও প্রজেক্ট/থিসিসে অর্থের পরিমাণ বৃদ্ধির জন্য ৪৭তম ব্যাচের পক্ষ থেকে প্রশাসনের নিকট আবেদন করা হয়। আবেদনে নতুন অর্থ-বছর থেকে ইন্ডাস্ট্রিয়াল এটাচমেন্ট ও থিসিস/প্রজেটবাবদ বরাদ্দ কমপক্ষে ২০,০০০ টাকা করার দাবি জানানো হয়। কিন্তু এর কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই বলে অভিযোগ উঠছে। 

৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, আজকের দিনে এসে ইন্টার্নশিপ ও থিসিসের জন্য তিন হাজার টাকা অত্যন্ত অপ্রতুল, যা শুধু এটাচমেন্ট ও থিসিস বুক তৈরিতেই ব্যয় হয়ে যায়। দেখা যায় প্রতিমাসে ৮-১০ হাজার টাকা ব্যয় হয়, কারণ অধিকাংশ ইন্ডাস্ট্রি দুপুরের খাবার দেয় না এবং দূরে হলে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতে হয়। থিসিসের ক্ষেত্রে প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্টের জন্য কাঁচামালের খরচও যথেষ্ট ব্যয়বহুল। তাই শিক্ষার্থীপ্রতি বরাদ্দ বৃদ্ধি এখন সময়ের দাবি। এ বিষয়ে আবেদন করা হলেও এখনো তা বাস্তবায়ন হয়নি।

৪৭তম ব্যাচের আরেক শিক্ষার্থী আননাফি জীম বলেন, ইন্টার্নশিপ ও প্রজেক্টের জন্য যে টাকা বরাদ্দ দিয়েছে তা অত্যন্ত অপ্রতুল। যাতায়াত, খাবার, প্রজেক্টের উপকরণ, প্রিন্টিং ও ডেটা সংগ্রহের সব খরচ শিক্ষার্থীদের বহন করতে হয়। এই আর্থিক চাপ শুধু শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপরই প্রভাব ফেলে না বরং শেখার মান, গবেষণার গভীরতা এবং কাজের গুণগত মানও কমিয়ে দেয়। বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনা করে ইন্টার্নশিপ ও প্রজেক্টের জন্য পর্যাপ্ত ভাতা নিশ্চিত করা জরুরি। যাতে শিক্ষার্থীরা আর্থিক দুশ্চিন্তায় নয়, শেখায় মনোযোগ দিতে পারে।
 
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফাইন্যান্স ও অ্যাকাউন্টস সেকশনের উপ-পরিচালক মুহাম্মদ কামরুজ্জামান চৌধুরী বলেন, পিএইচডি ও মাস্টার্স পর্যায়ের গবেষণায় পর্যাপ্ত বরাদ্দ থাকলেও আন্ডারগ্র্যাজুয়েট পর্যায়ে কোনো ভাতা নেই। ইউজিসি থেকেও এ ক্ষেত্রে বরাদ্দ দেওয়া হয় না। এজন্য আন্ডারগ্র্যাজুয়েট পর্যায়ে প্রজেক্ট/গবেষণায় বাজেট বরাদ্দ দেওয়ার জন্য ইউজিসিকে চিঠি পাঠানো হয়েছে, তবে এখনো উত্তর পাওয়া যায়নি। ইন্ডাস্ট্রিয়াল এটাচমেন্টে তিন হাজার টাকা দেওয়া হলেও তা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়নি। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো নিজস্ব আয় তেমন না থাকায় বাজেট ছাড়া বরাদ্দ বাড়ানো সম্ভব নয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জুলহাস উদ্দিন বলেন, ইউজিসি থেকে খরচের খাত ও পরিমাণ নির্ধারিত থাকে। পূর্বে ইন্টার্নের সময় ইন্ডাস্ট্রি থেকে অর্থ প্রদান করা হলেও বর্তমানে তা দেওয়া হয় না, যা ইতিবাচক নয়। ইন্ডাস্ট্রিয়াল এটাচমেন্টে ভার্সিটি থেকে বরাদ্দ বাড়ানোর কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে আন্ডারগ্র্যাজুয়েট পর্যায়ে গবেষণা/প্রজেক্টে বাজেট প্রদানের প্রস্তাব সিন্ডিকেটে অনুমোদিত হয়ে ইউজিসিতে পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাব অনুযায়ী, প্রতি ছাত্রকে ৫ হাজার টাকা করে এবং তিনজনের গ্রুপে ১৫ হাজার টাকা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেলে এটি বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।

ইন্টার্নশিপ ও প্রজেক্ট/ থিসিসের ব্যয় দিন দিন বাড়লেও বরাদ্দ দীর্ঘদিন ধরে অপরিবর্তিত রয়ে গেছে। দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ না নিলে দেশের এই একমাত্র বিশেষায়িত টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের গবেষণায় পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই বরাদ্দ বাড়ানো কোনো বিলাসিতা নয়, এটি এখন টিকে থাকার অপরিহার্য শর্ত।

বিভি/এজেড

মন্তব্য করুন: