ছাত্রদল শিক্ষার্থীদের যেকোনো ন্যায্য দাবিকে অগ্রাধিকার দিবে: নাছির

রাত পোহালেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন। আসন্ন নির্বাচনে ছাত্রদলের পক্ষে ভোট চেয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি দীর্ঘ পোস্ট দিয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির। ছাত্রদল শিক্ষার্থীদের যেকোনো ন্যায্য দাবিকে অগ্রাধিকার দিবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় এক পোস্টে এসব বলেন তিনি।
বাংলাভিশনের পাঠকের জন্য ফেসবুক পোস্টটি তুলে ধরা হলো-
'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের অভ্যুদয় ও গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের কেন্দ্রবিন্দু। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থী এবং বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য একটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্বাধীনতা যুদ্ধের সূতিকাগার। পশ্চিমা হানাদার বাহিনী এবং তাদের দেশীয় দোসররা অপারেশন সার্চলাইটে সবার আগে আক্রমণ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। রোকেয়া হলের নারী শিক্ষার্থীদের ওপর পাশবিক বর্বরতা চালায়। মধুর ক্যান্টিনের মধুদাসহ জগন্নাথ হলের শিক্ষার্থীদের ওপর হত্যাযজ্ঞ চালায়। শহীদুল্লাহ হলের হাউস টিউটর এবং পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের মেধাবী শিক্ষক আতাউর রহমান খান খাদিম, জগন্নাথ হলের আবাসিক শিক্ষক ও ফলিত পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের মেধাবী শিক্ষক অনুদ্বৈপয়ান ভট্টাচার্যসহ একাধিক শিক্ষক শহীদ হন।
বিজয়ের প্রাক্কালে ১৪ই ডিসেম্বর স্বাধীনতাবিরোধীদের নীলনকশা অনুযায়ী বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের শিকার হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রখ্যাত শিক্ষকবৃন্দ। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য গোবিন্দ চন্দ্র দেব (দর্শনশাস্ত্র), মুনির চৌধুরী (বাংলা সাহিত্য), মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী (বাংলা সাহিত্য), আনোয়ার পাশা (বাংলা সাহিত্য), আবুল খায়ের (ইতিহাস), জ্যোতিরময় গুহঠাকুরতা (ইংরেজি সাহিত্য) প্রমুখ।
রাও ফরমান আলীর নির্দেশনায় এই হত্যাকাণ্ডের নীলনকশা প্রণয়নে এবং বাস্তবায়নে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে ইসলামি ছাত্রসংঘ এবং তাদের মিলিটারি উইং আল বদর বাহিনী।
আসন্ন ডাকসু নির্বাচনে ভোট প্রদানের ক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রক্তাক্ত ইতিহাস এবং বাংলাদেশের গৌরবোজ্জ্বল স্বাধীনতা সংগ্রামের তাৎপর্য বিবেচনা করেই ভোট প্রদানের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ঐতিহাসিকভাবে একটি স্বাধীনচেতা ক্যাম্পাস এবং মুক্তবুদ্ধি চর্চার কেন্দ্র। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যাতে কোনো গোষ্ঠী মোরাল পুলিশিং চালু করতে না পারে, নারীদের পোশাক এবং চলাফেরার স্বাধীনতা রুদ্ধ করতে না পারে, ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে পারস্পরিক সৌহার্দপূর্ণ, বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশের বিপরীতে কোনো বিধিনিষেধের সংস্কৃতি চাপিয়ে দিতে না পারে সেই বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির একটি অনন্য দৃষ্টান্ত। আমাদেরকে তা রক্ষা করতে হবে। ধর্ম, বর্ণ, জাতিসত্তা নির্বিশেষে সকলে কেবল বাংলাদেশি পরিচয়ে সমান সুযোগ লাভ করার নিশ্চয়তা পাওয়া অতি গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি মুক্ত, স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক ক্যাম্পাস হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। গেস্টরুম, গণরুম, হল দখল, জবরদস্তিমূলক রাজনীতির অপসংস্কৃতি নির্মূল করার শপথ নিয়েছে ছাত্রদল। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল শিক্ষার্থীদের যেকোনো ন্যায্য দাবিকে অগ্রাধিকার দিবে। শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ছাত্রদলের সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা সংক্রান্ত ইশতেহার ইতিমধ্যে ঘোষণা করা হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক এবং গবেষণা কার্যে মানোন্নয়ন, শিক্ষার্থীদের খাদ্য, আবাসন ও পরিবহন সমস্যা দূরীকরণ, ক্যারিয়ার উন্নয়ন, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসার নিশ্চয়তা প্রদান ইত্যাদি আমাদের মূল উদ্দেশ্য।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল মনোনীত প্রার্থীরা ফ্যাসিবাদবিরোধী গণ-অভ্যুত্থানের সম্মুখযোদ্ধা, শিক্ষার্থীদের অধিকারের প্রশ্নে আপোষহীন, তারুণ্যদীপ্ত মেধাবী শিক্ষার্থী, সাম্য ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে বিশ্বাসী, মুক্ত ও উদারনৈতিক গণতন্ত্র চর্চায় বিশ্বাসী একঝাঁক তরুণ-তরুণী। আগামীকালের ডাকসু নির্বাচনে তাদের পক্ষে আপনাদের মূল্যবান ভোট দিন।'
বিভি/টিটি
মন্তব্য করুন: