• NEWS PORTAL

শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

ঢাবি’র গণিত বিভাগে কাজে আসছে না কোটি টাকার প্রকল্প

আনিসুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৪:৩২, ১৩ জানুয়ারি ২০২২

ফন্ট সাইজ
ঢাবি’র গণিত বিভাগে কাজে আসছে না কোটি টাকার প্রকল্প

প্রায় এক কোটি ২১ লাখ টাকায় শিক্ষা সহায়ক প্রযুক্তি পণ্য কিনেছিলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) গণিত বিভাগ। ‘হাইয়ার এডুকেশন কোয়ালিটি এনহেন্সমেন্ট’ প্রকল্পের আওতায় ২০১৮-এর শেষের দিকে এই সব যন্ত্রাদি কেনা হয়। শিক্ষা কার্যক্রম আধুনিকায়নের উদ্দেশ্যে প্রযুক্তিসমূহ কেনা হলেও প্রায় তিন বছর ধরে এগুলো অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। ব্যবহারের আগেই কার্যক্ষমতা হারিয়েছে এদের কয়েকটি। সর্বপরি প্রকল্পটি থেকে পুরোপুরি সুবিধা পাচ্ছে না বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

ক্রয় কমিটি প্রধান ও বিভাগের প্রাক্তন চেয়ারম্যান অধ্যাপক অমল কৃষ্ণ হালদার-এর অদক্ষতা, উদাসীনতা ও খামখেয়ালিপনায় এমনটি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কমিটির কনিষ্ঠ সদস্য ও বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সরকার মো. সোহেল রানা। তিনি বলেন, শুরু থেকেই তিনি অযথা বিলম্ব করেছেন। পরে মেয়াদ শেষের মাত্র তিন মাস আগে তড়িঘড়ি করে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। ফলে দক্ষতার সংগে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। এছাড়া তহবিলে শেষ করতে না পারায় রেভেনিউসহ প্রায় নয় লাখ টাকা মঞ্জুরি কমিশনকে ফেরত দিতে হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানায়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (বিমক) ‘একাডেমিক ইনোভেশন ফান্ড’ প্রকল্পের (প্রজেক্ট নং- সিপি-৬০৭২) মাধ্যমে ২০১৭-এর মে-এ উক্ত অর্থ দিয়েছিলো। এর মধ্যে এক কোটি ২১ লাখ টাকার যন্ত্রাদি কিনে বাকি তিন লাখ ৪০ হাজার ৬৪৫ টাকা বিমককে ফেরত দেওয়া হয়। বরাদ্দকৃত তহবিল ১৭ মাসের মধ্যে শেষ করার কথা থাকলেও মেয়াদের শেষ সময়ে পুরো প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়। ফলে ক্রয়কৃত প্রযুক্তিসমূহ ভালোভাবে স্থাপন করা সম্ভব হয়নি। এছাড়া কিছু কিছু প্রযুক্তি ব্যক্তিগত উদ্দেশ্য ব্যবহার করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে ভাউচারে থাকা ১৫ লাখ ৫৭ হাজার ২২১ টাকার যন্ত্রাদি বিভাগের কোনো কাজেই আসছে না।  

এর মধ্যে পাঁচ লাখ ৮৩ হাজার ৮৮৩ টাকায় কেনা ইন্টারএ্যাকটিভ স্মার্ট বোর্ড কেনা হয়। যা কিছু দিন মাল্টিমিডিয়া হিসেবে ব্যবহার করে বর্তমানে ফেলে রাখা হয়েছে। বিভাগের কম্পিউটারগুলোর মাঝে আন্তঃসংযোগ করার উদ্দেশ্যে চার লাখ ২২ হাজার ২২২ টাকায় সার্ভার কম্পিউটার কেনা হয়েছিলো। যা কমিটি প্রধান দীর্ঘদিন নিজের কাছে রাখার পর সেমিনার কক্ষে ফেলে রেখে অবসরে যান। এর কার্যক্ষমতা নিয়ে শিক্ষকরা সন্দিহান। তিন লাখ ৪৯ হাজার ৪৫১ টাকায় কেনা তিনটি কম্পিউটার সফটওয়্যারের মধ্যে ম্যাটল্যাব নামের দু’টো সফটওয়্যার এখনো ইনস্টল করা হয়নি এবং ম্যাথমিটিকা সফটওয়্যারটি প্রাক্তন চেয়ারম্যানের নিজস্ব ল্যাপটপে ইনস্টল করা হয়েছে। বিভাগের কাজে ব্যবহারের আগেই এগুলোর মেয়াদ শেষ হয়েছে। বিলম্বে অর্ডার করায় ডিভাইস ফর ভিডিও লেকচারিং ও ডকুমেন্ট ক্যামেরা যন্ত্র দুটির বদলে সিসিটিভি ক্যামেরাসহ কয়েকটি অপ্রয়োজনীয় যন্ত্র কেনা হয়। এর মধ্যে কয়েকটি ক্যামেরা যত্রতত্র লাগানো হলেও বাকি ক্যামেরাসহ অন্যান্য যন্ত্রাধি কোথায় আছে তা কেউ জানে না। ফলে এ বাবাদ দুই লাখ  এক হাজার ৬৬৫ টাকা খোয়া গেছে।

সদস্যদের সংগে কথা না বলে অমল কৃষ্ণ হালদার একক সিদ্ধান্তে সব কাজ সম্পন্ন করেছেন বলে মন্তব্য করেন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল ইসলাম। তিনি আরও বলেন, নিয়মানুযায়ী বিমক প্রতিনিধিরা প্রকল্পটির অগ্রগতি পরিদর্শন করতে এসেছিলেন কিন্তু তারা কারো সংগে কথা না বলে শুধু তৎকালীন চেয়ারম্যান ও কমিটি প্রধানের সংগে কথা বলেই চলে গেছেন।

তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটির অন্য সদস্য হলেন বিভাগের অধ্যাপক সমীর কুমার ভৌমিক। তিনি বলেন, আপনাকে কেউ ভুল ইনফরমেশন দেয়নি। আমার মনে হয় না বিভাগের কেউ আপনাকে ভুল ইনফরমেশন দেবে। এই ব্যাপারে আমি আর আলাপ করতে চাচ্ছি না।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক অমল কৃষ্ণ হালদার কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে বিভাগের বর্তমান চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মেজবাউদ্দীন আহমেদ সহকর্মীদের সংগে আলোচনা করে এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন। 

এদিকে ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান জানান, এই সম্পর্কে হিসাব ও প্রকৌশলী দপ্তর ভালো বলতে পারবে। বিষয়টি আমার জানা নেই। বিভাগে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিভি/রিসি 

মন্তব্য করুন: