• NEWS PORTAL

  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

স্বাধীনতা দিবসে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের ভাবনা

রেজোয়ানুল হক রিজু

প্রকাশিত: ২২:৫৮, ২৬ মার্চ ২০২৩

ফন্ট সাইজ
স্বাধীনতা দিবসে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের ভাবনা

২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস। ২০২৩ সালের ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫৩ বছর পূর্ণ হলো। স্বাধীনতা দিবস আজও তরুণ প্রজন্মের কাছে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা। স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে গর্বিত জাতি ৫৩তম মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপন করছে।

দীর্ঘ নয় মাসের সংগ্রামের ফসল আমাদের স্বাধীনতা। স্বাধীনতা দিবস আজও তরুণ প্রজন্মের কাছে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা। প্রেরণা যোগায় নিষ্ঠার পথে নির্ভীক যোদ্ধা হওয়ার। শুধু একটি দিবস হিসেবে নয়, এর বর্ণচ্ছটায় বদলে যায় জীবনের গতিপথ, সাহস যোগায় নতুন শপথ নেওয়ার। আর এ কারণেই স্বাধীনতা দিবসের তাৎপর্য এত বেশি।

মহান এই স্বাধীনতা দিবসে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যয়নরত তরুণ মেধাবীদের শিক্ষার্থীদের ভাবনা ও মতামত তুলে ধরেছেন বাংলাভিশন ডিআইইউ প্রতিনিধি রেজোয়ানুল হক রিজু। 

বাঙালি চৈতন্যের গৌরবের জয়গান স্বাধীনতা

স্বাধীনতা দিবস আমাদের জাতীয় জীবনে অত্যন্ত গৌরবের ও মর্যাদার।২৬ মার্চ বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা দিবস।১৯৭১ সালে এই দিনে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষিত হয়।১৯৭০ সালে আনুষ্ঠিত পৃর্ব পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন আওয়ামীলীগ সরকার সংখ্যা গরিষ্ঠতা লাভ করলে পাকিস্তানের সামরিক সরকার তাঁর হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে গড়িমসি করে।এর প্রেক্ষিতে শুরু হয় তীব্র আন্দোলন।পাকিস্তান সরকার কূটকৌশলের আশ্রয় নিয়ে ৭১ সালে মার্চ মধ্যরাতে এদেশের নিরীহ ছাত্র জনতা ও পুলিশ ইপিআর উপর অতর্কিত হামলা শুরু করে।২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই প্রতিবছর ২৬ মার্চ কে স্বাধীন জাতির আত্মা মর্যাদার বর্ণিল স্মারক হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়।
নতুন প্রজন্মকে স্বাধীনতার চেতনার দীক্ষা প্রদান করতে হবে। তাই প্রতিটি স্বাধীনতা দিবসে আমাদের স্বাধীনতা রক্ষার বলিষ্ঠ শপথ গ্রহণ করতে হবে। আর সেই শপথকে সামনে রেখে এগিয়ে যেতে হবে দেশ গড়ার নতুন প্রত্যয়ে।

"স্মৃতিতে ভাস্মর থাকুক স্বাধীনতার পদচিহ্ন, 
থাকুক প্রতিটি-ছন্দে-গন্ধে-আনন্দে।"

সুমাইয়া সাথী
লোক প্রশাসন ও সরকার পরিচালনা বিদ্যা বিভাগ, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়

স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু সাধারণ কোন ব্যক্তি নয়

৪ জুলাই  ১৭৭৬, পৃথিবীর প্রথম রাষ্ট্র হিসেবে স্বাধীনতা ঘোষণা করে আমেরিকা। এই গৌরব অর্জন করে আরেকটি দেশ, আমার বাংলাদেশ। ২৬ শে মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।

শুভ সকাল ২৬ শে মার্চেই হঠাৎ বঙ্গবন্ধুর মনে হয়নি যে এখন আমাদের স্বাধীনতা প্রয়োজন দস্যু, হানাদার, নিপীড়ক পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষনার প্রেক্ষাপট বুঝতে হলে আমাদের বুঝতে হবে ১৯৬৬ থেকে ১৯৭০ এর ঘটনাবলি। ৬৬ তে ৬ দফা ঘোষণা বাঙালি জাতির জন্য ছিল মুক্তির আশা এবং পাকিস্তানি শাসকদের ভয়ের কারণ। ১৯৬৮ তে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় শেখ মুজিবুর গ্রেফতার, ১৯৬৯ এ গণঅভ্যুত্থান, আইয়ুব খানের পতন, ইয়াহিয়া খানের শাসন গ্রহণ, বঙ্গবন্ধুর মুক্তি, ৬ দফা ও ১১ দফার প্রতি সমর্থন এসব কিছুই ছিল স্বাধীনতার আন্দোলন যা পূর্ব বাংলার জনগণ তাদের স্বায়ত্ত শাসনের দাবিতে লড়ছিল।

নতুন শাসক ইয়াহিয়া খান আশা দেখালেন নির্বাচনে ও প্রতিশ্রুতি দিলেন সামরিক শাসন থেকে জয়ী সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পূর্ব পাকিস্তানে ও পিপলস পার্টি পশ্চিম পাকিস্তানে সংখ্যাগরিষ্ঠ হল। আসন পূর্ব পাকিস্তানে বেশি থাকায় আওয়ামী লীগ নির্বাচনে জয়লাভ করে। কিন্তু ইয়াহিয়া তার কথা রাখলেন না। সকল সমীকরণ মিথ্যা প্রমাণিত করে বাঙালিরা পাকিস্তান শাসন করবে এ যেন মেনে নিতে পারলেন না ইয়াহিয়া-ভুট্টো।

হস্তান্তর না করে গড়িমসি শুরু করে পাকিস্তান সরকার। শুরু হয় অসহযোগ আন্দোলন। ভুট্টো বলেন, ছয় দফা পরিবর্তন না হলে তিনি ইয়াহিয়ার কোন কথাই শুনবেন না। জবাবে বঙ্গবন্ধু বলেন, ছয় দফা আছে, ছিল, থাকবে। ইয়াহিয়া পহেলা মার্চ সকল অধিবেশন  অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণা করেন।

এই ঘটনার মধ্য দিয়েই দিনের আলোর মত পরিষ্কার হয় যে, পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী আমাদের হাতে ক্ষমতা দিতে চায় না। এখান থেকে খাদিকার আন্দোলন স্বাধীনতা আন্দোলনে পরিণত হয়। চারিদিকে 'জয় বাংলা', 'পদ্মা মেঘনা-যমুনা', 'তোমার আমার ঠিকানা', জনগণের এক দফা- 'বাংলার স্বাধীনতা', 'তোমার দেশ আমার দেশ বাংলাদেশ বাংলাদেশ'  ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে। ৭ মার্চের ঐতিহাসিক সেই ভাষণ ২৫ মার্চের কাল রাত্রিতে ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গণহত্যা, নিজ দেশের শাসক গোষ্ঠী দ্বারা ২৩ বছর ধরে নির্বিচারে শোষণ, কথায় কথায় গুলি, নিপীড়নের শিকার একটা ক্লান্ত জাতি  যারা তাদের সর্বস্ব দিয়েও ন্যূনতম অধিকার পায়নি। তাদের কাছ থেকে নেওয়া অর্থ দিয়ে যখন তাদেরই হত্যার শিকার হতে হয়েছে তখন এসেছে স্বাধীনতার ঘোষণা।

২৬ শে মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা যিনি দিয়েছেন তিনি কোন সাধারণ ব্যক্তি নন।তিনি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাঙালির মুক্তির অগ্রদূত, সেই সময়কার অবিসংবাদিত নেতা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যার স্বাধীন স্বাধিকার অর্জনের চেষ্টা আমাদের দিয়েছে স্বাধীনতা। তাই বাঙালি হিসেবে আমার যেন চেতনায় থাকে আমার দেশের ইতিহাস এই আমার কামনা।   

মিফানুর রহমান ফায়েজ
আন্তজার্তিক সম্পর্ক বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

স্বাধীনতার সঠিক মূল্যায়ন করতে হবে

মার্চ মাস আমাদের স্বাধীনতার মাস। ভাষা সংগ্রামেরও মূল সূচনা মার্চ মাসে। আবার এই মাসেই বঙ্গবন্ধু জন্মগ্রহণ করেছিলেন। সব দিক থেকেই মার্চ মাস বাঙালির জাতীয় জীবনে একটি অতুলনীয় এবং অবিস্মরণীয় মাস। এই দিনটি আমাদের বারবার মনে করিয়ে দেয় মুক্তিসেনাদের আত্মত্যাগের কথা। জানান দিয়ে দেয় আমাদের রয়েছে এ স্বাধীনতা রক্ষা করার ভার। তাদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে আমাদের এই অর্জন৷ 

তবুও আমাদের সকলের মনে একটা প্রশ্ন থেকেই যায় আমরা জাতি হিসেবে কতটা স্বাধীন? আমরা কি পারছি স্বাধীন ভাবে বাঁচতে? আমরা পারছি কি আমাদের এ স্বাধীনতা রক্ষা করতে? আশা করি একদিন আমাদের তরুণ প্রজন্মের হাত ধরে এসব প্রশ্নের অবসান ঘটবে।

ফরহাদ হোসেন
সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি

স্বাধীন দিবসে সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়

স্বাধীনতা মানে নিজের অস্তিত্বের অনুভূতি, একই ভূখন্ডে ভালোবাসার মানুষজনের সঙ্গে পরম মমতায় থাকতে পারা, এদেশের মাটির গন্ধের সঙ্গে নিজের অস্তিত্বকে খুঁজে পাওয়ার সূক্ষ্ম টান অনুভব করা। নিজেকে খুঁজে পাওয়ার ইচ্ছে থেকেই আমরা লড়াই করে যাই নিজেদের ওপর হয়ে যাওয়া অন্যায়, অত্যাচারের বিরুদ্ধে। এই অন্যায়, নিষ্পেষণের মধ্যে থেকে নিজের অস্তিত্বকে আবিষ্কার করতে স্বাধীনতা শব্দটিকে ‘আমাদের’ করার জন্য সেই দুঃসাহসিক স্বপ্ন দেখার রাত ছিল ১৯৭১ এর ২৬ এ মার্চ।

স্বাধীনতার ৫৩ বছর পর ডিজিটাল বাংলাদেশ, স্বপ্নের পদ্মাসেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, পোষাক শিল্প, ঔষধ শিল্পের অগ্রগতি, মেট্রোরেল এর মতো সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প যেমন আমাদের ভবিষ্যৎ উন্নতশীল দেশের পরিচয়ের স্বপ্ন দেখায়। এই সোনার বাংলা কে দেশের প্রতিটি নাগরিকের স্বপ্নের সোনার বাংলা করতে চাই। সেজন্য আমাদের প্রত্যেককে যার যার জায়গা থেকে নিজেদের দায়িত্বগুলো সঠিকভাবে পালন করে যেতে হবে।তবেই সরকার ও জনগণের সম্মিলিত চেষ্টায় আমরা আমাদের সেই অস্তিত্ব গাঁথা বাংলাকে খুঁজে পাবো যার জন্য বাংলার বীরত্বের শ্রেষ্ঠ অধ্যায়ের রচনা হয়েছে। তাই তো আমার মতো প্রত্যেকে আজও বারবার খুঁজে ফিরি চিরচেনা সেই আমার বাংলাকে।

ফয়সাল আহমেদ 
ইংরেজি বিভাগ, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি 

বিভি/এজেড

মন্তব্য করুন: