কান উৎসবের মূল প্রতিযোগিতায় ইরানের নিষিদ্ধ নির্মাতার ছবি
বিশ্বের অন্যতম সুপ্রাচীন আর জাঁকজমকপূর্ণ চলচ্চিত্র উৎসব কান। ফ্রান্সের এই পুরনো শহর কানে প্রতি বছর সমাগম ঘটে বিশ্ব সিনেপ্রেমীদের! আগামী ১৪ মে থেকে বসছে এই উৎসবের ৭৭তম আসর। প্রতিবছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সেরা চলচ্চিত্রগুলো কান উৎসবে প্রদর্শিত হয় এবং তারা উৎসবের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়।
কান উৎসবের এবারের আসরে প্রিমিয়ার হবে ইরানি পরিচালক মোহাম্মদ রসৌলফের সিনেমা ‘দ্য সিড অব দ্য সেক্রেড ফিগ’ এর। উৎসবের মূল প্রতিযোগিতা বিভাগে পাম দ’রের জন্য লড়বে ছবিটি। তবে নিজের ছবি অংশ নিলেও এ বছরও তিনি কান চলচ্চিত্র উৎসবে অংশ নিতে পারবেন না। কারণ মোহাম্মদ রসৌলফের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে তেহরান।
প্রায় বিশ বছর ধরে সেন্সরশিপ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়ে আসছেন রসৌলফ। সেজন্য 'দ্য সিড অব দ্য সেক্রেড' ফিগ-এর ডিস্ট্রিবিউশনের দায়িত্ব নিয়েছে ফ্রান্স।
এই ছবির গল্প ইমান নামের এক ব্যক্তিকে ঘিরে। যিনি তেহরানের বিপ্লবী আদালতের একজন তদন্তকারী বিচারক। দেশব্যাপী রাজনৈতিক প্রতিবাদ তীব্র হওয়ার সাথে সাথে তার মনে জন্মায় অবিশ্বাস এবং সন্দেহ। এক সময় তার বন্দুক রহস্যজনক ভাবে অদৃশ্য হয়ে যায়। তিনি সন্দেহ করা শুরু করেন যে স্ত্রী নাজমেহ এবং তার কন্যা রেজভান এবং সানা এই ঘটনায় জড়িত। তিনি বাড়িতে কঠোর ব্যবস্থা আরোপ করেন, যার ফলে উত্তেজনা বেড়ে যায়। ধাপে ধাপে তাদের সামাজিক রীতিনীতি ও পারিবারিক জীবনের চিত্র বদলাতে শুরু করে।
শুধু নির্মাতা নন, এই ছবিতে যারা অভিনয় করেছেন, তাদেরও ইরান ছাড়ার উপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ফলে তারাও নিজেদের ছবির প্রিমিয়ারে অংশ নিতে পারছেন না।
নিজের পঞ্চম ছবি ‘আ ম্যান অব ইন্টিগ্রিটি’র জন্য ২০১৭ সালে নিষিদ্ধ হন মোহাম্মদ রসৌলফ। সিনেমা বানানো এবং দেশের বাইরে বের হওয়া, দুটোই বারণ তার জন্য। রসৌলফের সিনেমা দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি বলে মনে করে ইরান। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি নাকি সরকারবিরোধী প্রচারণা চালাচ্ছেন। এই অভিযোগে এক বছর জেলও খাটতে হয়েছিল এই নির্মাতাকে।
বিশ্বের বিভিন্ন দাপুটে চলচ্চিত্র উৎসবের কল্যাণে বরাবরই চর্চায় থাকে ইরানি সিনেমা! সরকার আরোপিত সীমাবদ্ধতাগুলো সিনেমার মাধ্যমে তুলে ধরায় নিয়মিত আইনি ঝামেলায় পড়ছেন সিনেমাগুলোর নির্মাতা-কলাকুশলীরা।
আগের মতো সরকারের প্রচারের খাতিরে সিনেমা নির্মাণে করেন না নির্মাতারা। সংস্কৃতি ও ইসলামিক গাইডেন্স মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের অনুমতির প্রয়োজন বোধ করে না। ২০০০-এর দশকে, মোহাম্মদ রসৌলফের মতো বড় নির্মাতারা স্বাধীন ধারার সিনেমার দিকে ঝুঁকেছেন। উদীয়মান নির্মাতারা তাদের পদাঙ্কই অনুসরণ করেছেন এবং বিদেশী চলচ্চিত্র উৎসবগুলোতে অংশ নিয়ে সেগুলো প্রদর্শন করেছেন।
উল্লেখ্য, আগামী ১৪ মে ভূমধ্যসাগরের তীরে দক্ষিণ ফ্রান্সের কান শহরের পালে দে ফেস্টিভ্যাল ভবনের গ্র্যান্ড থিয়েটার লুমিয়েরে পর্দা উঠবে ৭৭তম কান চলচ্চিত্র উৎসবের।মোহাম্মদ রসৌলফের সিনেমা ‘দ্য সিড অব দ্য সেক্রেড ফিগ’ উৎসবের মূল প্রতিযোগিতা বিভাগে পাম দ’রের জন্য লড়বে।
বিভি/জোহা/পিএইচ
মন্তব্য করুন: