• NEWS PORTAL

  • সোমবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৪

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

আওয়ামী লীগের জুলুমের শিকার র‍্যাপার তাবিব মাহমুদের পরিবার

প্রকাশিত: ১৩:১০, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

আপডেট: ১৩:১৪, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ফন্ট সাইজ
আওয়ামী লীগের জুলুমের শিকার র‍্যাপার তাবিব মাহমুদের পরিবার

তাবিব মাহমুদ

‘গল্লি বয়’ রানাকে নিয়ে দেশের র‍্যাপ সঙ্গীতে নতুন মাত্রা যোগ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তাবিব মাহমুদ। ২০১৯ সালে প্রথম আত্মপ্রকাশের পর থেকে তার গানের কথায় উঠে এসেছে  সমাজের নানান অসঙ্গতি। এবার তার পরিবারের সঙ্গে ঘটে যাওয়া এক নির্মম সত্যিকে তুলে ধরেছেন তার ভক্তদের মাঝে। 

গত ৭ সেপ্টেম্বর নিজের ফেসবুকে একটি লম্বা স্ট্যাটাস শেয়ার করেন তাবিব। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, সাবেক স্বাস্থমন্ত্রী স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপনের নির্দেশে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা সুলতান আজম খান আপেল, বশির রেজাসহ বেশ কয়েকজন তার পরিবারের সঙ্গে অন্যায় ও অবিচারে লিপ্ত হয়।

তাবিব মাহমুদ'র স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো-

দেশের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শেখ হাসিনা কীভাবে একনায়কতন্ত্র কায়েম করেছিলো এবং আমার পরিবারের উপর নির্যাতন নিয়ে কিছু কথা যা নিজের ভেতরেই চাপা দিয়ে রেখেছিলাম। আজ শেয়ার করছি এজন্য নয় যে আপনাদের কাছে আমি সিমপ্যাথি চাচ্ছি বরং এজন্য যে, এই সিস্টেম চেঞ্জ করার একটি লক্ষ্য সম্পর্কে আপনারা অবগত থাকুন। শেখ হাসিনা দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিজের কবলে আনার জন্য প্রথমে আইন করে, স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা কমিটির সভাপতি হবে অত্র এলাকার এমপি। এমপি সভাপতি হবার পর সেই স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় যারা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বা আওয়ামিলীগের দাসত্ব মেনে নেয় নি সেই সকল শিক্ষকদের বরখাস্ত করে। আপনি আপনার শৈশবের স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় খোঁজ নিন। এমন বহু ঘটনা পাবেন।

আমি ও আমার পরিবার এক কঠিন অবস্থার সম্মুখীন হই ২০১২ সাল থেকে। আমার বাবা জনাব ফজলুর রহমান জন্মগতভাবে একজন প্রতিবন্ধী মানুষ। তিনি হাটতে পারেন না। অদম্য ইচ্ছাশক্তির বলে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৮৩-৮৪ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় ১১৭ তম হয়ে ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হন। পরবর্তীতে ইসলামি স্টাডিজে মাইগ্রেশন করে অনার্স মাস্টার্স শেষ করেন। ইংরেজি, আরবি, বাংলা, উর্দু ও ফার্সি ভাষায় তিনি পান্ডিত্য অর্জন করেন। প্রতিবন্ধী হওয়া সত্ত্বেও জ্ঞানের প্রতি আমার পিতার এই উদ্যোমের জন্য সে সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমার পিতাকে সুস্থ করার জন্য ফ্রান্স থেকে একটি বিশেষ মেডিকেল টিমের সহায়তার ব্যবস্থা করে। এই মেডিকেল টিম ব্যর্থ হয়। তিনি এক জীবনে কখনই ভালোভাবে হাটতে পারেন নি। তবুও তিনি থেমে যান নি। মাস্টার্স শেষ করে তিনি মানিকগঞ্জ ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসায় শিক্ষকতা হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। পাশাপাশি নিজ বাড়িতে একটি লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করে সেখানে পড়াশোনা শুরু করেন। 

নব্বই দশক থেকে মানিকগঞ্জ জেলার বিভিন্ন মাদ্রাসা, সরকারি দেবেন্দ্র কলেজের শিক্ষার্থী সহ শত শত শিক্ষার্থী আমাদের বাড়িতে আমার পিতার কাছে ইংরেজি, আরবি, কুরআন, হাদিস, ফিকহ সহ বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষা গ্রহণ করেছেন। আজ অবধি তিনি প্রতিদিন ভোর ও রাতে নিয়োম করে ৬ ঘন্টা পড়াশোনা করেন।

মূল ঘটনা বলার পূর্বে আমাদের পারিবারিক অবস্থা সম্পর্কে বলা প্রয়োজন। এখন অবধি আমরা, বাবা ও তার তিন ভাই সহ, যৌথ পরিবারে বসবাস করি। আমাদের পরিবারে ভাই-ভাই ভিন্ন হবার মানসিকতা নেই। মহান আল্লাহর রহমতে আমার দাদা, তার দাদার থেকে যে জমি জমা পান তা আমাদের পরিবারের উপর মহান আল্লাহর রহমত হিসেবে আমরা বারবার শুকরিয়া আদায় করি। আমার মেজো চাচা একজন সুনামধন্য ব্যবসায়ী যিনি নব্বই দশক থেকে মানিকগঞ্জ জেলায় ব্যবসা করে আসছেন। পরবর্তীতে আমার দুই চাচাও ব্যবসায় যোগ দেন। ঢাবিতে ভর্তির পর থেকে আমিও চাচার সাথে পারিবারিক ব্যবসা সামলাচ্ছি। অর্থনৈতিক দিক থেকে আমাদের পরিবার মানিকগঞ্জ জেলা শহরে অন্যতম। এদিক থেকে আমরা সব সময় মহান আল্লাহর রহমতের শুকরিয়া আদায় করি। 

২০১২ সালে আমাদের পরিবারের একটি জায়গা জোড়পূর্বক কম দামে কেনার জন্য আমাদের বাধ্য করেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহেদ মালেক স্বপন। এজন্য আমাদের বাড়িতে প্রচুর ভাংচুর করা হয় যার নেতৃত্ব দেয় স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা। আমি তখন ক্লাস টেনে পরি। আমার ছোটো দুই বোন তখন আরো ছোটো। সেদিনের সেই আতংক কখনোই ভুলতে পারব না।

স্বভাবতই ন্যায়ের পক্ষে থাকায় আমার পরিবারের অবস্থান ছিলো সব সময় অপশাসনের বিরুদ্ধে এবং মানিকগঞ্জ জেলা শহরে আমাদের পরিবারের এই অবস্থান আওয়ামী লীগের নেতাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং ছিলো। এজন্য আমার পরিবারকে মানিকগঞ্জে অর্থনৈতিকভাবে, সামাজিকভাবে এবং মানসিকভাবে ভেঙে ফেলার জন্য অপচেষ্টা করা শুরু হয় যার নেতৃত্ব দেন স্থানীয় কিছু আওয়ামী লীগের নেতা ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহেদ মালেক স্বপন। 

২০১৭ সালে আমার পিতা মানিকগঞ্জ ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সাথে সাথে আমার পিতার বিরুদ্ধে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহেদ মালেক স্বপন কঠোর অবস্থান গ্রহণ করে। কিছুদিনের মধ্যেই মিথ্যা অভিযোগে অবৈধভাবে ক্ষমতা ব্যবহার করে আমার পিতাকে তার কর্মস্থান থেকে করে বহিষ্কার করা হয় এবং সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করা হয় যার সকল প্রমাণ আমাদের কাছে আছে। 

আমি যদিও মাদ্রাসা ব্যকগ্রাউন্ডের কিন্তু ক্ষেত্রবিশেষ আমি মাদ্রাসার তুমুল সমালোচনা করি কারণ শুধু একটু ক্ষমতা ও টাকার জন্য  আমি দেখেছি কীভাবে হুজুররা বিক্রি হয়ে যায়। অবশ্য শুধু হুজুর না অনেক মানুষই। আমার পিতার আশে পাশে একজন মাদ্রাসার শিক্ষকও তখন ছিলেন না। উপরন্তু অনেক হুজুরের মতো দেখতে মাদ্রাসার শিক্ষকেরা অধ্যক্ষের চেয়ারে বসার জন্য জাহেদ মালেক স্বপনকে কীভাবে তেল দিয়েছে এবং আমার পিতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে তার প্রমাণ আমার কাছে আছে। শুধু তাই নয় এই হুজুরের মতো দেখতে লোকগুলো আমার বিরুদ্ধে জঙ্গি ও শিবিরের অভিযোগ এনে ডিবি অফিস, ডিজিএফ আই সহ নানান জায়গায় অভিযোগপত্র দিয়েছে যার জন্য আমাকে নানা সময়ে নানা ঝামেলা পোহাতে হয়েছে। আমি কখনোই কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত হইনি। 

কিন্তু ট্যাগিং এর জন্য যে ঝামেলার মধ্য দিয়ে আমি গিয়েছি, এতে যে পরিমাণ সময় আমার নষ্ট হয়েছে তার বিচার আল্লাহর কাছে দিয়েছি; তিনিই সর্বশ্রেষ্ঠ বিচারক। আমার পিতা ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ থেকে বহিষ্কার হবার পর নিজের লাইব্রেরিতে বই ও লিখালিখিতে মনোনিবেশ করেন। সেখানেও তাকে শান্তিতে থাকতে দেয়া হয় নি। তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করা হয় যে সকল মামলা মিথ্যা প্রমাণিত হয়। পুলিশ জঘন্যভাবে দলকানা হওয়া স্বত্ত্বেও আমার পিতার উপর মিথ্যা অভিযোগ তদন্ত করার পর সত্য ছাড়া অন্যকিছু লেখার দু:সাহস করেনি। 

হাস্যকর বিষয় হলো তার বিরুদ্ধে একটি মামলা ছিলো তার সার্টিফিকেট নাকি জাল। এ সকল মামলার উদ্দেশ্য ছিলো মানসিকভাবে চাপ সৃষ্টি করে হয়রানি করা। এটি ছিলো সাবেক স্বৈরাচারের দলের ভিন্নমত দমনের একটি নীতি।

২০১৯ সাল থেকে আমি ঢাবিতে সাংস্কৃতিক বিপ্লবের অংশ হিসেবে সরকারের বিভিন্ন সমালোচনায় গান প্রকাশ করতে থাকি যার জন্য সবচে বেশি চাপ আসে আমার পরিবারের উপর। আমি কখনোই কাউকে বুঝতে দেইনা আমি চাপে আছি কারণ আমি কঠিন থেকে কঠিনতর অবস্থায় "চাপ নাই" মাইন্ডে আলহামদুলিল্লাহ বলে শুকরিয়া আদায় করি। এটি আমার দর্শন।

আজ অবধি আমার পিতা বহিস্কৃত অবস্থায় আছে। ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের পদত্যাগ করা ভিসি আব্দুর রশিদ সাহেবের কাছে বার বার এ ব্যাপারে সুরাহা চাইলেও তিনিও ছিলেন দলকানা অন্ধ। এই বহিষ্কার মিথ্যা যার সকল প্রমাণ আমাদের কাছে আছে। 
আমার পিতার মত হাজার হাজার মানুষ নিজেদের কর্মক্ষেত্র থেকে বহিষ্কৃত হয়েছে। এখন ইনশাআল্লাহ তারা আগের জায়গা ফিরে পাবেন।

এই ঘটনা উল্লেখ করে আমি আপনাদের যে বিষয়ে মনোযোগ আকর্ষণ করছি সেটি হলো সরকার স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা কমিটিতে অত্র জেলার এমপি ও পরে জেলা প্রশাসককে সভাপতি বানিয়ে ভিন্নমত কিংবা আওয়ামিলীগ ছাড়া অন্য সবাইকে দমন করেছে। এর প্রতিবাদে একটি গানে আমি লিখেছিলাম-
স্কুল কমিটি ও শিক্ষক মন্ডল
দলে দলে ভাগ হয়ে পাকিয়েছে কোন্দল
এইভাবে শিক্ষার ভিত্তিটা দুর্বল
জ্ঞান নয় টাকা আজ সকলের সম্বল।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কমিটির সভাপতির দায়িত্ব একজন শিক্ষানুরাগী, সমাজে সম্মানিত ও নৈতিক মূল্যবোধ সম্পন্ন ব্যক্তির হাতে অর্পণ না করলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাচাতে পারবেন না। তাই স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার সভাপতির আইন সংস্কার করা উচিৎ। আপনারা আমার পিতার জন্য দোয়া করবেন। 

কেউ যদি ইংরেজি, আরবি ও বাংলা ভাষায় সমান্তরালে দক্ষ, পাশাপাশি উর্দু, ও ফার্সি ভাষায় পারদর্শী কোনো শিক্ষানুরাগী মানুষের সাথে সাক্ষাৎ করতে চান যিনি প্রতিবন্ধী সকল মানুষের জন্য জীবন্ত আইডল তারা আমার পিতার সন্ধান করতে পারেন।
সবাই আমার ও আমার পরিবারের জন্য দোয়া করবেন।

বিভি/জোহা

মন্তব্য করুন: