সালমান শাহ`র মৃত্যু হত্যা নাকি আত্মহত্যা, মুখ খুললেন স্ত্রী সামিরা

সালমান শাহ`র স্ত্রী সামিরা
বাংলা সিনেমার অমর নায়ক সালমান শাহ। ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর সবাইকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেও এখনও বেঁচে আছেন ভক্তদের হৃদয়ে। বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) ঢাকাই সিনেমার এ মহানায়কের জন্মদিন। ১৯৭১ সালে আজকের এই দিনে জন্মগ্রহণ করেন সালমান।
সালমান শাহ'র মৃত্যুর রহস্য এখনও অজানা। তিনি কি আত্মহত্যা করেছেন নাকি খুন হয়েছেন তা নিয়ে প্রশ্ন আছে ভক্তদের হৃদয়ে। মৃত্যুর পর থেকে তাকে পরিকল্পিতভাবে ‘হত্যা’ করা হয়েছে, এমন অভিযোগ করছেন সালমানের মা নীলা চৌধুরী। আর তাকে অভিযোগের আঙুল স্ত্রী সামিরার দিকেই। শুধু তাই নয়, সামিরাকে এক নাম্বার আসামী করে মামলাও করেছেন নীলা।
সালমানের মৃত্যু নিয়ে এতদিন পর্যন্ত চুপ থাকলেও নায়কের জন্মদিনে মুখ খুলেছেন স্ত্রী সামিরা। গণমাধ্যমে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে সামিরা নিজের অবস্থান তুলে ধরেন।
সালমান ও নিজের জন্মদিন নিয়ে সামিরা বলেন, ইমন (সালমান শাহ’র ডাক নাম) আসলে সবসময় নিজের নয়, অন্যের কথা ভাবতেন। এটি ছিল ওর অনেক বড় একটি গুণ। বেঁচে থাকতে ইমন কখনও সেভাবে নিজের জন্মদিন পালন করত না। তবে আমার জন্মদিনে ও সবসময়ই চেষ্টা করত বিশেষ কিছু করার। একবার ১১ তলা বিল্ডিং থেকে আমার চোখ বেঁধে নিচে নামানো হয়। এরপর চোখ খুলে দেখি, উপহারের প্যাকেটে মোড়ানো একটি গাড়ি। সেদিন অবাক হয়ে গিয়েছিলাম, ওর উপহার দেখে। যে লাল গাড়িটি সবাই দেখেছেন সেটি ইমন আমাকে উপহার দিয়েছিল জন্মদিনে। এমন অসংখ্য সারপ্রাইজ ও আমাকে দিয়েছে।
নীলা চৌধুরীর অভিযোগের সূত্র ধরে তিনি বলেন, বিয়ের আগে সালমানের মা আমাকে খুব পছন্দ করতেন। বিয়ের পর তিনি যখন জানতে পারেন এই বিয়েতে আমার পরিবারের মত ছিল না। তখন থেকে তিনি আমাকে অপছন্দ করতে লাগলেন। আমি সবসময়ই তাকে শাশুড়ি নয়, মা হিসেবে দেখতাম। কিন্তু তারপরও তার সঙ্গে আমার এমন দূরত্ব কেন হয়েছে, তা আমার জানা নেই।
১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর কী ঘটেছিল এমন প্রশ্নের উত্তরে সামিনা বলেন, আত্মহত্যা করার মতো তেমন কিছুই হয়নি। সেদিন ওর সঙ্গে একটু কথা-কাটাকাটি হয়েছিল। একটা পর্যায়ে অভিমান করে ও রুমে চলে যায় আর দরজা বন্ধ করে দেয়। আমি তখন অন্য রুমে ছিলাম। এর মধ্যেই সবকিছু ঘটে যায়। আমার চিৎকার শুনে ফ্লাটের লোকজন ছুটে আসে। খবর পেয়ে ইমনের মা-ও ছুটে আসে। এরপর রুম থেকে বেরিয়ে আসে ওর ঝুলন্ত দেহ।
তিনি আরও বলেন, এমন কথা-কাটাকাটি ওর সঙ্গে আগেও হয়েছে। আমার ওপর অনেক অভিমানও করেছিল ও। আরেকটা বিষয় ইমন কিন্তু এর আগেও তিনবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু চতুর্থবার ওকে আর ফেরানো যায়নি। দুইবার ওকে মেট্রোপলিটন হাসপাতালে ও একবার ওকে নেওয়া হয় বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে। আপনারা যদি খোঁজ নেন, তাহলে সেটি জানতে পারবেন। আসলে, মানসিকভাবে ওর মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতাটা বেশি কাজ করতো।
সামিরা আরও বলেন, যেদিন ইমন আত্মহত্যা করে সেদিনই ইস্কাটনের বাসাতে ওর মা আমাকে অনেক আজেবাজে কথা বলে বাসা থেকে বের করে দেয়। সেখানে ওর ছোট ভাই ও মামাও ছিল। ইমনকে তারা নিয়ে যায় হাসপাতালে। আমি হাসপাতালে বা সিলেট যেতে চাইলে ওরা আমাকে যেতে দেয়নি।
সালমানের মা নীলা চৌধুরী বিভিন্ন সময় জানিয়েছেন, আলোচিত ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক ছিল। আর এ কারণেই নাকি তার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে? এমন প্রশ্নের জবাবে সামিরা বলেন, এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা ও ভিত্তিহীন। এসব কথা উনি (সালমানের মা) রটিয়েছেন। শুধু তাই নয়, এমন কথাও রটানো হয়েছে—একটা অনুষ্ঠানে আজিজ মোহাম্মদ ভাই আমার গায়ে হাত রাখে। সেই অনুষ্ঠানে ইমনের সঙ্গে তার দ্বন্দ্বও হয়। এটাও মিথ্যা কথা। আসলে এমন কোনো ঘটনাই ঘটেনি। আজিজ মোহাম্মদ ভাইকে আমি ঠিকমতো চিনতামই না। তবে ইমনের মা তাকে চিনতেন।
সামিরা আরও যোগ করে বলেন, ইমনের বাবা একজন ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন। উনি যখন রমনা থানায় কেসটি ফাইল করেন, তখন ইউডি মামলা (অপমৃত্যু) হিসেবে ফাইল করেন। পরবর্তীতে সালমানের মা এটি হত্যা বলা শুরু করেন এবং সবশেষ মামলাও করেন।
বিভি/জোহা
মন্তব্য করুন: