• NEWS PORTAL

  • শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫

জেমসের কনসার্টে ৫ জন নিহতের ভুয়া খবর ছড়িয়ে তসলিমা নাসরিনের উস্কানি

হারুন আনসারী, ফরিদপুর

প্রকাশিত: ১৫:৩৫, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫

আপডেট: ১৫:৩৫, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫

ফন্ট সাইজ
জেমসের কনসার্টে ৫ জন নিহতের ভুয়া খবর ছড়িয়ে তসলিমা নাসরিনের উস্কানি

ফরিদপুর জিলা স্কুলে জেমসের কনসার্ট হট্টগোলের কারণে বাতিল হওয়ার পরই ফেসবুকে এ ঘটনায় পাঁচজন নিহতের গুজব ছড়িয়ে দেন দেব দুলাল গুহ নামে এক ব্যক্তি। তার এ পোস্টের পর ইন্ডিয়ায় অবস্থানকারী বিতর্কিত লেখিকা তাসলিমা নাসরিন রিপোর্ট করে এ ঘটনাকে তৌহিদী জনতার তাণ্ডব বলে অভিযোগ করেন। এ নিয়ে ইন্ডিয়ার অনেক অখ্যাত অনলাইনে ভুয়া নিউজও ছাপা হয়েছে পাঁচজনের মৃত্যুর তথ্য উল্লেখ করে।

তসলিমা এ ঘটনাকে ছায়ানট-উদীচীর সাথে তুলনা করে লিখেছেন- “দেশে ছায়ানট থাকবে না, উদীচী থাকবে না,... জিহাদিদের সাফ কথা। মানলে ভাল। না মানলে মুণ্ডু যাবে।”
ইন্ডিয়ার কিছু অখ্যাত অনলাইনও এ নিয়ে খবর করেছে। যার মধ্যে দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসও রয়েছে। 

গতরাতে নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে দেব দুলাল গুহ এ সংক্রান্ত পোস্টটিতে  তার উপর হামলা করা হয় দাবি লিখেন- “রণক্ষেত্র ফরিদপুর জিলা স্কুল। শিল্পী জেমস জানে বাঁচলেও কমপক্ষে ৫ জন মৃত ও শতাধিক আহত। ফরিদপুর জিলা স্কুলে কমপক্ষে ৫ জন মৃত, শতাধিক আহত (সোর্স কমেন্টে)। নগর বাউল জেমস কোনোমতে জীবন হাতে নিয়ে পালিয়েছেন আমার দেওয়া আগাম তথ্যের ভিত্তিতে। তবে যুদ্ধ এখনও চলছে। এর দায় অযোগ্য, অথর্ব, দুর্নীতিবাজ ও স্বৈরাচারী ১৮৫ বর্ষপূর্তি উদযাপন কমিটিকে নিতে হবে। আমার কথা শুনলে তারা এই জীবনগুলো বাঁচাতে পারতেন। উলটো তারা আমাকেই হামলা করেছেন গতকাল। কমিটির অপকর্মের প্রতিবাদে কিছু পরামর্শ দেওয়ায় পূর্বেই হুমকিদাতাদের ইন্ধনে গতকাল আমার উপর হামলা হয়।”

দেব দুলাল গুণের এই পোস্টের পরে রাত ১টা না পেরোতেই তসলিমা নাসরিন তার ভেরিফাইড পেজে রিপোস্ট করেন। তিনি লিখেন-  “ফরিদপুর জিলা স্কুলে জেমসের প্রোগ্রাম পণ্ড হলো। জেমসকে গান গাইতে দেবে না তৌহিদী জনতা। দেশে ছায়ানট থাকবে না, উদীচী থাকবে না, বাউল থাকবে না, নগর বাউল থাকবে না, তবলা হারমোনিয়াম গিটার থাকবে না। সুর থাকবে, সে শুধু আজানের সুর। আর কোনও সুর নয়। জিহাদিদের সাফ কথা। মানলে ভাল। না মানলে মুণ্ডু যাবে। ভিডিওঃ দেব দুলাল গুহ, ফেসবুক”

কিন্তু ফরিদপুর জিলা স্কুলের শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে এবং ঘটনার সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে জানা যায় আসল ব্যাপার। আর সেচি হলো-ফরিদপুর জিলা স্কুলের গৌরবময় ১৮৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে পুনর্মিলনীর আয়োজন করা হয়েছিলো দু'দিনব্যাপী নানা অনুষ্ঠানমালা নিয়ে। আর এতে একেবারে শেষদিনেই ছিলো মূল চমক নগরবাউল ব্যান্ডের গায়ক জেমসের কনসার্ট।

এই সিডিউল ঘোষণার পর থেকেই শুরু হয়েছিলো অনুষ্ঠানের প্রতীক্ষা। কিন্তু বাধ সেধেছিল পুনর্মিলনী আয়োজক পরিষদের নিয়মবিধি। সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন তারা- এই স্কুলের শিক্ষার্থীদের বাইরে কনসার্টের মাঠে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হবেনা। কার্ড দেখে তবেই মাঠে প্রবেশের অনুমতি মিলবে।

কিন্তু তাতে যেনো মনে মান ছিলো না বাইরের ছেলেদের। তারাও নানাভাবে চেষ্টা-তদবির করছিলো কোনমতে একটি পাশ জোগাড় করা যায় কিনা? আর অনুষ্ঠানের চূড়ান্ত লগ্নে তারা মাঠে ঢুকতে না পেরে ভীড় করে স্কুলের সামনের রাস্তায়। সেখানে তখন হাজারের উপরে দর্শক। রাত ৯টার পরেই ঘটলো বিপত্তি। মঞ্চে তখনো উঠেনি জেমস। শেষ পুরস্কারটি তুলে দিচ্ছিলেন অতিথিরা। এমন সময়েই তিনটি ছেলে দেয়াল টপকে ভিতরে প্রবেশ করার সময় পড়ে যায় ভিতরে। আর তখন নিরাপত্তায় নিয়োজিত স্বেচ্ছাসেবকেরা তাদের ধরে দেয় পিটুনি। তাতেই কম্ম সাড়া!

বাইরে এখবর পৌছতেই লেগে যায় হুড়োহুড়ি। ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু হয় বাইরের অপেক্ষারত দর্শকদের মধ্য থেকে। তেড়ে আসে জিলা স্কুলের ছেলেরাও। প্রায় ঘন্টাখানেক এ অবস্থা চলার সময় বেশ কয়েকজন রক্তাক্ত হয়। অনেকের মাথাও ফেটে যায়। তবে কারো অবস্থাই আশঙ্কাজনক নেয়।

দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার এক খবরে তারা লিখেছে- “বাংলাদেশে ফের অশান্তির ছায়া সংস্কৃতি মহলে। হামলার জেরে বাতিল হয়ে গেল জনপ্রিয় গায়ক জেমসের কনসার্ট। তাঁর কনসার্টে হামলার ঘটনা বাংলাদেশে মৌলবাদী  শক্তির বাড়বাড়ন্তের জলন্ত ইঙ্গিত করছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় কট্টরপন্থী ইসলামি গোষ্ঠীর তাণ্ডব বেড়েছে বলে অভিযোগ। ছায়ানট, উদীচীর মতো সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান, শিল্পী, সাংবাদিক ও সংবাদপত্রের অফিস বারবার আক্রমণের শিকার হচ্ছে। সমালোচকদের অভিযোগ, মহম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ । তাঁদের মতে, আসন্ন ফেব্রুয়ারিতে নির্ধারিত নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যেই পরিকল্পিতভাবে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটানো হচ্ছে।”

প্রসঙ্গত, এর আগে ফরিদপুরে যুব মহিলা লীগের এক সদস্য কর্তৃক মহানবী (সা.) অবমাননার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করে তরুণ ছাত্র ও যুবকেরা। তারা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলে মহুয়া নামে ওই যুব মহিলা লীগের সদস্যকে বাংলাদেশের তসলিমা বলেও মন্তব্য করেন। আর ওই ঘটনার পরেও মহুয়া সত্য কথা বলায় মৌলবাদীদের টার্গেট হয়েছে দাবি করে ফেসবুকে পোস্ট করেন তসলিমা নাসরিন। 

এনিয়ে তিনি অন্ততঃ দু'বার ফরিদপুর শহরের প্রসঙ্গ টেনে বর্তমান সরকারের সমালোচনা ছড়িয়ে দিতে ভুয়া পোস্ট করলেন। 

রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহর জীবনসঙ্গী থাকাকালে একবার অবশ্য তার সাথে ফরিদপুরে এসে বেশ সাধু সঙ্গ করে যান তসলিমা। সেই থেকে ফরিদপুর তার একটি পরিচিত স্থান। তবে হালে তিনি সেই ফরিদপুরকেই ফেক নিউজের টার্গেট করে নিলেন কেনো এ নিয়েও প্রশ্ন এখানকার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অঙ্গনে। 

জেলার বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি কাজী রিয়াজ এ বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে নিয়ে তসলিমা নাসরিনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি দেব দুলাল গুহকেও আইনের আওতায় এনে গ্রেফতার ও বিচারের দাবি জানান।

বিভি/এজেড

মন্তব্য করুন:

সর্বাধিক পঠিত
Drama Branding Details R2
Drama Branding Details R2