• NEWS PORTAL

  • শনিবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৫

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিকরা ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার: এইচআরডব্লিউ

প্রকাশিত: ১২:৪০, ২৮ নভেম্বর ২০২৫

আপডেট: ১২:৪১, ২৮ নভেম্বর ২০২৫

ফন্ট সাইজ
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিকরা ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার: এইচআরডব্লিউ

মালয়েশিয়ায় কর্মরত বাংলাদেশি শ্রমিকদের ওপর ব্যাপক ও পদ্ধতিগত শ্রম নিপীড়ন চলছে বলে কঠোর অভিযোগ তুলেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা। তারা জানিয়েছেন, প্রতারণা, শোষণ, অতিরিক্ত নিয়োগ ফি এবং ঋণশৃঙ্খলে আটকেপড়া—সব মিলিয়ে বাংলাদেশিদের পরিস্থিতি ক্রমেই ‘গভীর মানবাধিকার সংকট’ তৈরি করছে।

বুধবার (২৬ নভেম্বর) মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। সংস্থাটির ডেপুটি এশিয়া ডিরেক্টর মীনাক্ষী গাঙ্গুলী এ তথ্য জানিয়েছেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মালয়েশিয়ায় বর্তমানে ৮ লাখের বেশি বাংলাদেশি বৈধ ওয়ার্ক পারমিটধারী শ্রমিক রয়েছেন। এ সংখ্যা দেশটির সবচেয়ে বড় বৈধ বিদেশি শ্রমিকগোষ্ঠী। কিন্তু জাতিসংঘের প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে, হাজার হাজার শ্রমিক বাংলাদেশেই আটকে রয়েছেন বা মালয়েশিয়ায় এসে প্রতারণা ও শোষণের শিকার হয়েছেন। অনেক শ্রমিককে চাকরি পাওয়ার জন্য সরকারি অনুমোদিত ফির পাঁচগুণ পর্যন্ত অর্থ দিতে হয়েছে।

জাতিসংঘ জানিয়েছে, মালয়েশিয়ার নিয়োগকারীদের হাতে পাসপোর্ট জব্দ, মিথ্যা চাকরির প্রতিশ্রুতি, চুক্তি ও বাস্তব বেতন–সুবিধার মধ্যে বড় পার্থক্য এবং সরকার–নিয়ন্ত্রিত সংস্থাগুলোর সহায়তার অভাব—এসব হয়রানির মতো ঘটনাই সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।

যেসব শ্রমিকের সঠিক নথি নেই, তারা গ্রের, আটক, নির্যাতন ও দেশে ফেরত পাঠানোর ঝুঁকিতে থাকেন। মালয়েশিয়ার কঠোর ইমিগ্রেশন আইন অনিয়মিত প্রবেশকে অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করে এবং দেশটিতে নিয়মিত রেইড চালানো হয়। বর্তমানে প্রায় ১৮ হাজার অভিবাসী, শরণার্থী ও আশ্রয়প্রার্থী আটক কেন্দ্রগুলোতে রয়েছে।

মালয়েশিয়ার শ্রম অধিকার লঙ্ঘনের কারণে যুক্তরাষ্ট্র এর আগে বেশকিছু মালয়েশীয় কারখানা থেকে আমদানি বন্ধ করেছে। অন্যদিকে, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের জোরপূর্বক শ্রম নিয়ন্ত্রণ আইন ২০২৭ সালে কার্যকর হবে। এটি জোরপূর্বক শ্রমে তৈরি পণ্যের বাণিজ্যের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করবে। শ্রমিকদের ঋণশৃঙ্খল ও প্রতারণার মতো ঘটনাগুলো এসব নিষেধাজ্ঞার আওতায় পণ্য নিষিদ্ধ হওয়ার কারণ হতে পারে।

জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা স্পষ্ট বলেছেন, এ ঘটনায় দুই দেশকেই অবিলম্বে তদন্ত শুরু করতে হবে এবং যথাযথ প্রতিকার নিশ্চিত করতে হবে। তারা সতর্ক করেছেন, জোরপূর্বক প্রত্যাবাসন ও প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের লঙ্ঘন।

ক্রেতা কোম্পানিগুলোর প্রতি জাতিসংঘ ফেয়ার লেবার অ্যাসোসিয়েশনের গাইডলাইন অনুসরণের আহ্বান জানিয়েছে। যাতে নিয়োগব্যয় সরাসরি শ্রমিকের ওপর চাপিয়ে দেওয়া না হয়। একইসঙ্গে শ্রমিকদের আইনি সহায়তার সুযোগ নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া উভয় দেশকেই শ্রমিক নির্যাতন বন্ধে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে হবে। একইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপের মতো ক্রেতা–দেশগুলোকেও নিশ্চিত করতে হবে যে তাদের বাজারে এমন কোনো পণ্য স্থান না পায় যা মাসের পর মাস ভোগান্তিতে থাকা অভিবাসী শ্রমিকদের শ্রম শোষণের ফল।

বিভি/টিটি

মন্তব্য করুন: