• NEWS PORTAL

  • রবিবার, ২২ জুন ২০২৫

Drama: Jamai Bou Chor
Drama: Jamai Bou Chor

ভিসা আর ইমিগ্রেশনের গল্প

তৌফিকুল ইসলাম পিয়াস, যুক্তরাষ্ট্র থেকে

প্রকাশিত: ১৪:৫৭, ১১ মে ২০২৩

ফন্ট সাইজ
ভিসা আর ইমিগ্রেশনের গল্প

তৌফিকুল ইসলাম পিয়াস

এই বিশ্বের যে দেশগুলো যত বেশী উন্নত সেই দেশগুলোর ভিসা প্রসেসিং সেবা ততটাই সহজ। আবার সে দেশগুলোর ইমিগ্রেশনও ততটাই সুন্দর, সহোযোগীতাপূর্ণ ও দ্রুততর। যেমন, আপনি যদি ভারতের ভিসা নিতে চান তাহলে দেখতে পাবেন- তারা এক গাদা কাগজপত্র চাবে। মানে, ওদের কাছে কাগজই সবকিছু - পাসপোর্টের কোন মুল্যই নেই। আমেরিকার ভিসার জন্য দাঁড়াবেন - একটি পেপারও তারা দেখতে চাবে না; শুধুমাত্র মুখে ২-তিন মিনিট কথা বলেই তারা সিদ্ধান্ত নিয়ে নিবে আপনাকে ভিসা দেয়া হবে কি না! 


আমেরিকা বাদে আমি এ পর্যন্ত যতগুলো দেশের ভিসা নিয়েছি - তার মধ্যে আমার সবচে ভালো লেগেছে অস্ট্রেলিয়ার ভিসা নিতে। 
রাত তখন ২টা। ১ সপ্তাহ পরেই আমি বিদেশ ভ্রমণে বের হবো। গত জানুয়ারীর শেষ দিককার গল্প করছি।  তো, ঐ রাত ২টার সময় হঠাৎ মনে হলো - দেখি না অস্ট্রেলিয়ার ভিসা করতে কি লাগে? আমার তো আবার যা ভাবা তাই-ই কাজ। 
ওদের পোর্টালে ঢুকলাম। রেজিস্ট্রেশন করলাম। ভিসা আবেদনপত্রটি অন করলাম। তারপর একে একে তথ্যগুলো দিয়ে দিলাম। 
বেইসিক ডকিউমেন্টও আপলোড করতে হবে, করলাম। একটা বিমান ভ্রমনের আইটিনেরারী তৈরী করে ফেললাম, হোটেল বুকিংও বানালাম অনলাইন থেকে - আপলোড দিয়ে দিলাম। তারা সাবমিট দেবার আগে একটা প্রশ্ন করলো - ‘তোমাকে যদি ওয়াশিংটন ডিসিতে ইন্টারভিও এর জন্য ঢাকা হয় তুমি আসতে রাজী আছো কি না?’ ভাবলাম, এ আর তেমন কি? হ্যা সূচক উত্তর দিয়ে দিলাম। তারপর সাবমিট করলাম।, ইমেইলে সাবমিশন কনফার্মেশন পেলাম। 

পরদিন ছিলো শনি বার। দ্বিতীয়দিন রবিবার রাত ১০টার দিকে অস্ট্রেলিয়ান হোম অফিস থেকে একটা ই-মেইল পেলাম; সেখানেই দেখি ভিসা এপ্রুভাল লেটার সংযুক্ত রয়েছে।  এই হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার ভিসা কাহিনী। যাই হোক, আমার তো এই ট্যুরে অস্ট্রেলিয়া ছিলো না। ফ্লাই করবো ২৫ তারিখে রাতে। টিকেট হোটেল সবই বুক করা হয়ে আছে। কিন্তু মনটা খুসখুস করছিলো সিডনী থেকে একটু ঘুরে আসি। 
ওদিকে আমার নন-রিফান্ডেবল টিকেট কাটা হয়েছে; রুট চেঞ্জ করলে অনেকগুলো ডলার লস হয়ে যাবে। পরে আবার ভাবলাম, ধ্যাৎ কত আর লস হবে - সময় সুযোগ মেলানো অনেক কস্টকর বিষয়। যাই হোক ম্যানিলা থেকে দুবাই পর্যন্ত রিটার্ণ টিকেট এবং দুবাই থেকে রিয়াদ হয়ে নিউ ইয়র্কে ফেরার টিকেট এর মায়া ত্যাগ করে ম্যানিলা থেকেই সিডনী হয়ে হাওয়াই দিয়ে নিউ ইয়র্কের নতুন টিকেট করে ফেললাম।

 
আজ ফিলিপিন্সের গল্প বলবো। এবারে আমার মুল প্লান ছিলো থাইল্যান্ড বেড়াবো। দুবাই থেকে ব্যাংককগামী ফ্লাইটে দেখলাম সবচে সস্তা টিকেট দেখায় ভারতীয় প্রাইভেট বিমানগুলোর। কিন্তু আমি ভারতীয় বিমানে স্বাচ্ছন্দ বোধ করি না। অবশেষে বেশী দামে ফিলিপিন্স এয়ারের টিকেট কিনলাম। এখানেও একটি ছোট গল্প আছে। আমি যখন নবাবাগঞ্জের কম্পিটার স্কুলের ব্যবসা গুটিয়ে সবে মাত্র ঢাকায় আমার নতুন ব্যবসা শুরু করেছি, তার পরপরই খেয়াল করে দেখলাম আমার সেই সময়ের পরিচিত সার্কেলের অনেকেই ট্রাভেল ও টিকেটিং ব্যবসায় জড়িত।

আমি কোন ব্যবসা-ই রিটেইলর হতে আগ্রহ বোধ করি না। আমি সবসময় চাই রুটে চলে যেতে। তো, সকলের ট্রাভেলিং ও টিকেটিং ব্যবসায় দেখে ভাবতে লাগলাম এসব না করে যদি কোন বিমান সংস্থার সরাসরি এজেন্সী নিয়ে নিতে পারি তো কেমন হয়! 
সেটা কিন্তু সেই ২০০০ সালের গল্প। আমি তখনই পুরোদুস্তর ইন্টারনেট ব্যবহারকারী একজন। ঘেটে ঘেটে দেখলাম কোন কোন বিমান ঢাকায় আসে না। খুঁজে পেলাম ফিলিপিন্স এয়ারলাইন্স। ওদের একটা ইমেইল পাঠালাম, ‘তোমরা বাংলাদেশে তোমাদের ফ্লাইট চালু করো - এখানে ভালো ব্যবসা রয়েছে, এদেশে অনেক মানুষের বসবাস, আমি তোমাদের জিএসএ হিসাবে কাজ করতে আগ্রহী’।


মাত্র ৩ দিন পর আমার কাছে একটি ইমেইল চলে আসলো ফিলিপিন্স এয়ার থেকে। ওরা রাজী। ওরা বাংলাদেশে আসতে চায় এবং আমাকেও জিএসএ নিয়োগ দিতে ওদের আপত্তি নেই। হাবিজাবী অনেক কিছু চাইলো, তারপর ম্যানিলাতে ওদের অফিসে আমাকে আমন্ত্রণ জানালো। আমি তো এয়ারলাইন ব্যবসার ‘এ’টুকুও তখন জানি না, কিভাবে ব্যবসা করবো? তৃপ্তির হাসি হেসে চাপ্টার ক্লোজ করে দিলাম। কিন্তু সেই থেকে এই এয়ারলাইন্সটি এবং এই দেশটির প্রতি আমার কোথায় একটু ভালো লাগা কাজ করা শুরু করে দিলো। 
মুলত সেই ভালো লাগার কারণেই একটু চড়া দাম দিয়ে ফিলিপিন্স এয়ারের টিকেট কিনলাম। 

ফিলিপিন্সের ভিসার গল্পটাও করি। নাহলে অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। ফিলিপিন্সের নিউ ইয়র্ক কনসুলেট এর ওয়েব সাইটে ওদের একটা অনলাইন ফর্ম রয়েছে সেটা পূরণ করলাম; তারপর ওদের নির্দেশনা মতো প্রয়োজনীয় পেপার্স ওদের কনসুলেট এর ইমেইলে পাঠালাম ইন-পারসন ভিসা এপয়েন্টমেন্ট এর জন্য।  পরদিন-ই ফিরতি ইমেইল পেলাম। 
বলছে, আমি যে-কোন দিন যেন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টার মধ্যে অরিজিনাল পাসপোর্ট, ফটোগ্রাফ এবং ৩০ ডলারের একটি মানি অর্ডার নিয়ে পৌছে যাই। ওহ, আমি সিংগেল এন্ট্রি (এক্সপাডাইট প্রসেসিং) এর জন্য আবেদন করেছিলাম; ইচ্ছে ছিলো ফেরার পথে ১ রাত ম্যানিলাতে কাটাবো। 


যাই হোক, পরদিনই পাসপোর্ট জমা দিতে গেলাম। ফিলিপিনোদের ব্যবহার যে এতোটা আন্তরিকতাপূর্ণ - সেটা আমার ধারণাতেও ছিলো না। ভিসা অফিসার ভদ্রলোকটি আমাকে বসতে বললেন। আমার ডকিউমেন্টস চেক করে বললেন, ‘দেখুন আপনি তো জানেনই যে আমাদের ৩ কার্যদিবস লাগবে প্রসেসিং করতে। কিন্তু আমি চেস্টা করছি আপনাকে ১ ঘন্টার মধ্যেই ভিসাটি দিয়ে দিতে; আপনি একটু বসুন।’ আমি অবাক হয়ে বসে রইলাম। কিন্তু মিনিট ১০শেক পরই সে আমাকে ডেকে জানালো, ম্যানিলা থেকে রেসপন্স পাচ্ছে না - তাই আজ হয়তো হবে না বা হলেও দেরী হবে। আমাকে ফোন করে জানাবে ভিসা রেডি হলে। 
আমি বাসায় ফিরে এলাম। 


তারপর ফিলিপিন্স নিয়ে এবং আমার এয়ার টিকেটটি একটু ঘাটাঘাটি করে  বুঝতে পারলাম যে, ওখানকার টার্মিনালগুলো একটি অপরটির সংগে ইন্টারকানেকটেড নয়। অর্থাৎ আমাকে দুবাই থেকে ম্যানিলাতে যে টার্মিনালে নামানো হবে, ব্যাংককের কানেকটিং ফ্লাইটের জন্য ওখান থেকে অন্য টার্মিনালে যেতে হবে। 
এতো মহা মুশকিল। জেদ্দা এয়ারপোর্টে এমন সমস্যার তিক্ত অভিজ্ঞতা আমার আছে। দেরী না করে সঙ্গে সঙ্গে ফিলিপিন্স কনসুলেটে ইমেইল পাঠিয়ে জানালাম, আমাকে যেন সিংগেল এন্ট্রি ভিসার পরিবর্তে ডাবল এন্ট্রি ট্রানজিট ভিসা দেয়া হয়। 
কিছুক্ষন পরই ফিরতি ইমেইল পেলাম।
কনসুলেট আমাকে জানালো, আমার ডাবল এন্ট্রি ভিসা এপ্রুভ করা হয়েছে - আমি যেন পারলে বিকেলেই গিয়ে পাসপোর্ট রিসিভ করি। 


ইমেইলে ভিসা চেঞ্জ করতে কত টাকা লাগলো - তা কিছুই বলা হয়নি। আমি একটু অবাকই হলাম। আমার ধরণা ছিলো টাকা একটু বেশী লাগবে, আমি তো মাত্র ৩০ ডলার পে করেছিলাম।
পরদিন কনসুলেটে যাবার পর আমাকে আমার ডাবল এন্ট্রি ভিসাসহ পাসপোর্ট হাতে ধরিয়ে দিয়ে নগদ ১০ ডলার এর একটি বিল দিয়ে বললো, ‘তোমার ভিসাটা আমি এক্সপাডাইট করে দিয়েছি ঠিকই কিন্তু তোমার থেকে কোন চার্জ নিবো না। তুমি প্রথম বার যাচ্ছো আমার দেশে; আমি চাই তুমি যেন ফিরে এসে আবারও ফিলিপিন্স বেড়াতে যাও। তখন আমি তোমাকে ১ বছরের মাল্টিপল ভিসা দিবো।’ ফিলিপিন্স নিয়ে আমার মুগ্ধতা আরও বেড়ে গেলো। 


লক্ষীপুরের একজন অল্পবয়স্ক নতুন ব্যবসায়ী ঢাকায় ২০০৮ সালের দিকে আমার অফিসে এসে রিকোয়েস্ট করলো আমি যেন তাকে চায়না ভিসার ব্যবস্থা করে দিই - সে চায়না যাবে ব্যবসা করতে। 
নোয়াখালী অঞ্চলের মানুষদের আমি পছন্দ করি, এরা প্রচন্ড সাহসী, বুদ্ধিমান এবং কর্মঠ। আমি ছেলেটাকে হেল্প করেছিলাম, ওর সাদা পাসপোর্টে চাইনিজ ভিসা করিয়ে দিয়েছিলাম। 
এরপর থেকে সে নিয়মিত গুয়াংঝু যাতায়াত করতো। আমার সংগে মাঝে মধ্যেই সে দেখা করতো। পরামর্শ নিতো। ২০১৪ সালে একবার আমার অফিসে এসে জানালো তার বিরাট বিপদ হয়ে গেছে। তার দীর্ঘদিনের চাইনিজ সাপ্লায়ার ফ্রড করে প্রায় ১০০ হাজার ডলার খেয়ে দিয়েছে। সে মারাত্মক বিপদে পরে গেছে। যারা টাকা লোন দিয়েছিলো - তাদের প্রেসারে বাড়িছাড়া! ইত্যাদি। 


সে ভীষন ভালো মনের একজন মানুষ। আমি তার অবস্থায় মর্মাহত হলাম। যাই হোক, কিছু পরামর্শ দিলাম; তখন আমার নিজের ব্যবসাও খুবই খারাপের দিকে; আমি তখন আমেরিকায় চলে আসার চিন্তা ভাবনা করছি। তারপর আমি চলে আসলাম আমেরিকায় এবং আসার পূর্বে সে আমাকে জানালো যে, সে ফিলিপিন্স চলে যাবে; দেশে থাকবে না। এই ৮ বছরে সে আমার সঙ্গে নিয়মিত যোগযোগ রাখতো এবং আমি বুঝতে পারতাম যে সে অলরেডী ফিলিপিন্সে এখন একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। স্বপরিবারে এখন ম্যানিলা থাকে, বাচ্চারা ওখানকার দামী স্কুলে পড়ে। 


তো, ফিলিপিন্স যাবো আর সুমন ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করবো না - সেটা সুন্দর দেখায় না। তাকে নক করে জানালাম আমি প্রথম দিন ৬ ঘন্টা লে-ওভারের সময় এয়ারপোর্ট থাকবো এবং ফেরার দিন এক রাত ম্যানিলার একটি হোটেলে থাকবো। ফেরার রাতে তার সঙ্গে সময় কাটাবো। 
সুমন ভাই জানালেন, আমি যেখানে হোটেল নিয়েছি ঠিক তার পাশেই তার একটি দোকান রয়েছে। কিন্তু সে আমার স্ক্যাজুয়াল টাইমটাতে বাংলাদেশে থাকবে। কিন্তু তাতেও কোন সমস্যা নেই, তার একজন প্রতিনিধি ম্যানিলাতে আমার জন্য সে স্ট্যান্ডবাই ঠিক করে ফেলেছে - আমার কোন সমস্যা হবে না। আমি তাকে বিনয়ের সঙ্গে বললাম, ভাই আপনি তো জানেনই আমার কাউকে লাগবে না- আমি একাই সব ম্যানেজ করতে জানি এবং তাতে বরং বেশী আনন্দ পাই; নিজের মতো করে সময়কে উপভোগ করতে জানি।’ নাছোড়বান্দা সুমন ভাই আমাকে ম্যানিলাতে হেল্প করতে না পারলে তার মন ভরবে না। ইত্যাদি। আমি তাকে আর কিছু বললাম না। 


যাই হোক দুবাই হোটেল-এ এক সন্ধ্যায় দেখি আমার ফেইসবুক ইনবক্সে আমার ফলোয়ার  Al Amin Ridoy ভাই নক করেছেন; আমার সংগে কথা বলতে চান। 
ফ্রি ছিলাম, কল করলাম, তিনি জানালেন তিনি ম্যানিলাতেই বসবাস করেন। আমার বই তার সংগ্রহে রয়েছে। সে আমাকে এয়ারপোর্টে রিসিভ করবে এবং আমাকে নিয়ে সকালের নাস্তা করবে। তার আন্তরিকতাপূর্ণ অনুরোধ না করতে পারলাম না। 
নির্ধারিত দিন সকালে ম্যানিলা এয়ারপোর্টে ল্যান্ড করলাম। ওখানে ট্রান্সফার ডেস্কের সামনে যেতেই কতগুলো বাচ্চা বাচ্চা মেয়ে থেকে একটা মেয়ে আমার কাছে এগিয়ে এলো; আমার বাংলাদেশী পাসপোর্ট দেখে আমাকে বললো, ‘তোমার পাসপোর্ট এবং বোডিং পাসটা আমাকে দাও; আমি তোমাকে ডিপার্চারের ২ ঘন্টা আগে আমাদের দায়িত্বে ডিপার্চার গেইটে পৌছে দিবো।’
তখন বুঝলাম, ট্রানজিট ভিসা ছাড়াও ম্যানিলায় লেওভার করা যায় বা এয়ারপোর্ট ট্রন্সফার পাওয়া যায়। এটা ভীষন উপকারী একটা সেবা। 


আমি ওকে বললাম, ’ধন্যবাদ। কিন্তু আমি তোমার সাহায্য চাই না। আমি বাইরে যাবো এবং সময় মতো নির্ধারিত টার্মিনালে পৌছে যেতে পারবো। আমার পাসপোর্ট ও বোর্ডিং পাস আমাকে দিয়ে দাও।’ কিন্তু সে জানালো, ‘দেখো, বাংলাদেশ পাসপোর্ট নিয়ে তো তুমি বাইরে বের হতে পারবে না।’ বুঝলাম, ও আমার ভিসার পেইজটা দেখেইনি। 
আমি ওকে বললাম, ‘দেখো আমি নিউ ইয়র্ক থেকে এসেছি .. ‘ এ পর্যন্ত বলায় সে আমাকে থামিয়ে দিয়ে উত্তর দিলো, ‘আগে বলবে তো যে তুমি আমেরিকা থেকে এসেছো! তুমি তো চাইলে ইমিগ্রেশন করে বাইরে যেতে পারবে। ইমিগ্রেশনে চলে যাও’।
আমাকে মেয়েটি বলতেই দিলো না যে, পাসপোর্টে আমার ফিলিপিন্সের ভিসা লাগানো রয়েছে। বুঝলাম এরাও আমেরিকার পাগল!
বাইরে রিদয় ভাই গাড়ী নিয়ে অপেক্ষা করছেন। 


রিদয় ভাই দারুণ একজন মানুষ। অনেক বছর ফারইস্টে কাটিয়েছেন। দেশেও ভালো ব্যবসা রয়েছে তার। ফিলিপিন্সকে তিনি পরিবার নিয়ে বসবাসের জন্য সেরা দেশ বিবেচনা করেছেন; এখানেও ব্যবসা জমিয়ে ফেলেছেন। এখানকার সবকিছুই নাকি আমেরিকাকে ফলো করে তৈরী করা। পরে আস্তে আস্তে টেরও পেলাম এরা সবকিছুতেই আমেরিকাকে প্রচন্ডভাবে ফলো করে। ফিলিপিনো মানুষগুলো অত্যন্ত হাসিখুশী। সহজ-সরল।  তবে, ফিলিপিন্স এক্সপেনসিভ কান্ট্রি। 
হৃদয় ভাইয়ের সংগে একটি পাকিস্তানী রেষ্টুরেন্টে ব্রেকফাস্ট করলাম। 
তিনি আমাকে ম্যানিলা সিটির কিছু অলিগলি ঘুরিয়ে দেখালেন - এখানকার অনেক গল্প শোনালেন। তারপর নির্ধারিত সময়ে টার্মিনালে পৌছে দিলেন। এবং জানালেন - ম্যানিলাতে ফিরতি যাত্রার সময় সারাদিন আমাকে ঘুরিয়ে দেখাবেন। 
হৃদয় ভাইয়ের আন্তরিকতায় আমি মুগ্ধ হলাম।


সুমন ভাইকে হৃদয় ভাই চিনতে পারলেন না। আমি তার গাড়ীতে বসেই সুমন ভাইকে কল দিলাম। তারপর হৃদয় ভাইয়ের সংগে কথা বলিয়ে দিলাম। তারা দু’জন পরস্পরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু কিন্তু সুমন ভাই তার অফিসিয়াল নামে এখানে পরিচিত - তাই হৃদয় ভাই চিনছিলেন না। 
হৃদয় ভাইয়ের কাছেই জানলাম, ফিলিপিন্স খুবই শান্তিপ্রিয় দেশ। ক্রাইম খুবই কম কিন্তু এখানে যতটুকু ক্রাইম আছে, তা করে এখান মরো-মুসলিমরা। 
হৃদয় ভাই আরও একটা তথ্য দিলেন, স্প্যানিশরা যদি ফিলিপিন্স দখলে না নিতো তাহলে মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও ব্রুনেই এর মতোই ফিলিপিন্সও মুসলিম অধ্যুষিত দেশে পরিণত হতো। কিন্তু দক্ষিনের মরো অঞ্চলের মানুষ ইসলাম গ্রহনের পরপরই স্প্যানিশরা ফিলিপিন্স দখলে নিয়ে উপনিবেশ গঠন করে। এতে করে স্থানীয়রা খৃষ্ট ধর্মের অনুসারী হয়ে পরে। 
ফিলিপিন্স কিছুকাল আমেরিকার দখলেও ছিলো; তবে পরবর্তীতে ফিলিপিন্সকে আমেরিকা স্বাধীন করে দেয়; যদিও এখনও ফিলিপিন্সে আমেরিকার প্রভাব ব্যাপক। এমনকি ফিলিপিন্সের কাছে আমেরিকার ’এশিয়ান ভুখন্ড’ গুয়ামে যেতে ফিলিপিনোদের ভিসা প্রয়োজন হয় না। 

ফিলিপিন্স খুবই শান্তিপ্রিয় দেশ
ম্যানিলা এয়ারপোর্টের একটা অংশে অসংখ্য আমেরিকান সরকারী ও সেনা বিমান সারি সারি ভাবে সাজানো দেখেই বুঝেছিলাম - এই দেশটি আমেরিকার কতটা ঘনিষ্ঠ।
হৃদয় ভাই পুরো সময় আমার সংগে ছায়ার মতো সংগে থেকেছেন। সময় দিয়েছেন। গাড়ী নিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখিয়েছেন। খুবিই ফেরার পথে ২ রাত ছিলাম ম্যানিলাতে। ফিলিপিনো কনসুলেট আমাকে যে ভিসা দিয়েছিলো তাতে লেখা ছিলো দুবাই-ম্যানিলা-ব্যাংকক ‘ভাইস-ভার্সা’ ডাবল এন্ট্রি ট্রানজিট ভিসা। 
কিন্তু আমি তো ম্যানিলা থেকে আর দুবাই ফিরবো না; চলে যাবো সিডনী। এটা একটা টেকনিক্যাল সমস্যা। এতে ভিসার রুল লংঘিত হবে। কি করা যায় চিন্তা করছিলাম। 
তো, ব্যাংকক থেকে ম্যানিলা নেমে ইমিগ্রেশন অফিসারকে বিষয়টি জানালাম। ভদ্রমহিলা সুন্দরভাবে সমস্যাটির সমাধান করে দিলেন। তিনি যেভাবে সমস্যাটি হ্যান্ডেল করলেন - এটা যদি উন্নত বিশ্ব ছাড়া ভারত-বাংলাদেশ-চায়না বা ‘অন্য কোন দেশ’ হতো তাহলে আমাকে যথেষ্ঠ ভোগান্তিতে পড়তে হতো বা আমার অস্ট্রেলিয়া সফর বাতিল করতে হতো। 


ভদ্রমহিলা শুধু বললেন, ‘আমি দেখবো শুধুমাত্র তোমার দুবাই ফেরার টিকেট রয়েছে কি না। তুমি কোথায় যাবে না যাবে সেটা তো তোমার ইচ্ছে। তুমি আমাকে যাবার সময় জানাবেই না - কোথায় যাচ্ছ। আমরা এসব খেয়াল করি না। তুমি বেড়াতে বা কাজে এসেছে - বৈধ সব ডকিউমেন্টস তোমার কাছে আছে; তোমাকে আমি ঘাটাতে যাবো কেন? তোমাকে সহযোগীতা করতেই তো আমি এখানে বসেছি - এছাড়া আমার আর কাজ কি? তোমাকে বিব্রত করার জন্য তো সরকার আমাকে নিয়োগ দেয়নি। আমি বেতন নিই তোমাদের সেবা দিতে। তোমাদের সকল সমস্যার সহজ সমাধান বের করে দিতে।’ 
আহা, তখন মনে পরে গেলো ভারতীয় ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাদের আচরণ এর স্মৃতিগুলো। গত বছরই কোলকাতা এয়ারপোর্টে আমার সঙ্গে ঘটা ভারতীয়দের আচরণ এদের তুলনা করলাম এক ঝলক! 

মন্তব্য করুন: