ইডেন কলেজ প্রাঙ্গণে পিঠার ঘ্রাণে মাতলো শিক্ষার্থীরা
বিজয়ের মাস ডিসেম্বরেই শীতকাল মাসে নেমে আসে পুরোপুরি। বিজয়ের মাস এবং শীতকাল দুটো মিলে এই ডিসেম্বর বাঙালিদের এক জনপ্রিয় খাবার পিঠা উপভোগ করতে ভালোবাসে। চেতনা ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে ঐতিহ্যবাহী ইডেন কলেজে অনুষ্ঠিত হয় এক পিঠা উৎসব। অত্যন্ত আনন্দ মুখর পরিবেশে এই অনুষ্ঠান পালিত হয়েছে। শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকবৃন্দ অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে এই পিঠা উৎসবকে এক অভাবনীয় রূপ দিয়েছে।
বিজয়ের মাসে বিজয়ের চেতনা নিয়ে ইডেনের কন্যারা উৎযাপন করলো করলো বিজয় মেলাও পিঠা উৎসব। অংশগ্রহণ এবং আনন্দ ভাগাভাগির জন্য প্রতিটি বিভাগের পিঠা বিক্রির স্টল স্থাপন করা হয়েছিলো। অনুষ্ঠানে মোট ২৬টি স্টল ছিলো। আবার প্রতিটি স্টল সাজানো হয়েছিল ভিন্ন আকার, আকৃতি ও রঙিন উপকরণের সাহায্যে।
যেমন হিসাববিজ্ঞান বিভাগের স্টল সাজানোর সরঞ্জাম হিসেবে প্রাধান্য পেয়েছে কাগজ ও ফোমের তৈরি নোট, ক্যালকুলেটর, হিসাববিজ্ঞান সমীকরণ A=L+OE। অন্যদিকে উদ্ভিদবিজ্ঞান স্টলে সাজানোর সরঞ্জাম হিসেবে ছিল গাছ, লতা পাতার আধিক্য। এভাবে প্রতিটি বিভাগ তাদের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ও স্বকীয়তা শৈল্পিকভাবে ফুটিয়ে তুলেছে।
প্রত্যেকটি স্টল আকর্ষণীয় নেমপ্লেটযুক্ত ছিল। এর মধ্যে বাংলা বিভাগের নেমপ্লেটটি নজরকাঁড়েছে সবার। এতে রঙিন সুতা দিয়ে হাতে সেলাই করে "নকশিকাঁথার মাঠ, বাংলা বিভাগ" লেখা ছিল। কয়েকটি বিভাগের নেমপ্লেট এরকম ছিল "তেজস্বিনী নারী, আমি সংগ্রামী" মার্কেটিং বিভাগ। "অন্তরে বিজয়", হিসাববিজ্ঞান বিভাগ। "আলোর রেখা" গার্হস্থ অর্থনীতি বিভাগ।
মেয়েদের নিজ হাতে বানানো পিঠাগুলো স্টলে নান্দনিকভাবে প্রদর্শন করা হয়েছিল। মুগপাখন পিঠা, গোলাপ পিঠা, পাটি সাপটা, ঝিনুক পিঠা, শামুক পিঠা, নকশী পিঠা, ভালোবাসার পিঠা, কুলি পিঠা, আচার, রসমালাই, ফুল পিঠাসহ নানান রংবেরঙের বাহারি স্বাদের পিঠা।
পিঠার মূল্য প্রতি পিস ১০ টাকা থেকে শুরু করে ১০০ টাকা পর্যন্ত মূল্যের পিঠা সাজানো ছিল। মেয়েরা স্টল ঘুরে ঘুরে নিজেদের পছন্দের পিঠা কিনে মাঠে গোল হয়ে বসে গল্প করতে করতে পিঠার স্বাদ উপভোগ করছিল। প্রতিটি পিঠাই ছিল স্বাদে গন্ধে অতুলনীয়।
প্রতিটি বিভাগের স্টলের জন্য আলাদা আলাদা ফটো বুথ ছিল। বিশেষ দিনটিকে ফ্রেমবন্দী করতে ফটো বুথগুলোতে মেয়েরা ছবি তোলার জন্য ভিড় জমায়। ফটো বুথে ছবি তোলার জন্য গুনতে হয়েছে ১০ টাকা। ডিপার্টমেন্ট ভেদে বুথ সাজানোর ধরণও ছিল ভিন্ন। এছাড়াও ছিল মেয়েদের হ্যান্ডক্রাফ্টের গহনার দোকান ও মাটির ঐতিহ্যবাহী তৈজসপত্র। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বাঁধনের জন্যও ছিল আলাদা স্টল।
বলার বাকি থাকে না যে, পিঠা উৎসব অনুষ্ঠানের আয়োজনে এদিন চারদিকে পিঠার গন্ধে কেমন মুখরিত হয়েছিলো ক্যাম্পাস! কেউ পিঠা বিক্রি করতেছে, কেউ ক্রয় করতেছে, কেউ ছবি তুলতেছে। শিক্ষার্থীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং হাসিমুখ পুরো অনুষ্ঠানকে সফলতার রূপ দিয়েছে। শীতকাল হওয়াতে পরিবেশ ছিলো অত্যন্ত উপযোগী এবং মনোরম। পিঠার গরম ভাপ আর সহপাঠীদের ছবি তোলা এগুলো সারাজীবন স্মৃতি হয়ে থাকবে।
এই অনুষ্ঠানে আমিও ইডেন কলেজের একজন শিক্ষার্থী হিসেবে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পেলাম। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার অনেক সুন্দর আয়োজন উপভোগ করলাম। এমন আয়োজন স্মৃতিতে ফুটিয়ে থাকবে আজীবন।অনুষ্ঠানকে রঙিন করতে সাজসজ্জা হিসেবে ইডেন কন্যারা হাতে মেহেদী পরে, রংবেরঙের শাড়ী, চুরি পরে উৎসবের আমেজে মেতে ওঠে।
অনুষ্ঠানটি শুরু হয় সাংস্কৃতিক আয়োজনের মধ্য দিয়ে। যেটি দেশাত্মবোধক গান ও নৃত্যের তালে উৎসবের আমেজে মেতে উঠে পুরো ইডেন প্রাঙ্গণ। দিনভর সকল শিক্ষার্থী আনন্দ এবং নিজেদের স্মৃতিময় কিছু মহূর্ত কাটার পর শেষ পর্যায়ে এসে বিচারকগণ একে একে প্রতিটি স্টল ঘুরে ঘুরে পিঠা টেস্ট করেন এবং বিজয়ীদের নাম ঘোষণার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানটি সমাপ্তি হয়। এতে আগামীতে সকল শিক্ষার্থীকে আরো ভালো আয়োজন এবং রঙিন সাজে সাজানোর প্রেরণা জোগাবে বলে আশা করি।
লেখক: শিক্ষার্থী, হিসাববিজ্ঞান বিভাগ (২য় বর্ষ); ইডেন মহিলা কলেজ
বিভি/এজেড
মন্তব্য করুন: