গণ আন্দোলনে ছাত্র-জনতার পক্ষে ছিলেন আনিসুর রহমান সোহাগ

ছবি: আনিসুর রহমান সোহাগ
ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ইসলামিক শিক্ষার প্রসারে দীর্ঘ দিন থেকেই কাজ করছেন শিক্ষাবিদ আনিসুর রহমান সোহাগ। গণ আন্দোলনে সোচ্চার ছিলেন ছাত্র জনতার পক্ষে। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় দীর্ঘদিনের সমস্যা ও চ্যালেঞ্জের মুখেও শিক্ষার্থীদের মানসম্পন্ন শিক্ষাদানে সচেষ্ট ভূমিকা রাখে তার প্রতিষ্ঠান এভেরোজ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও স্কুল শাখার প্রধান হিসেবে নতুন প্রজন্মকে ধর্মীয় মূল্যবোধের সঙ্গে বেড়ে উঠতে রাখছেন সচেষ্ট ভূমিকা।
আনিসুর রহমান সোহাগের নেতৃত্বে এভেরোজ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ঢাকার অন্যতম প্রধান শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে উঠেছে। আধুনিক শিক্ষার সঙ্গে ইসলামিক মূল্যবোধের সমন্বয়ে তৈরি এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি রাজধানীজুড়ে বিভিন্ন শাখায় হাজার হাজার শিক্ষার্থীকে শিক্ষিত করছে।
এভেরোজ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের বিশেষত্ব হলো, তারা আধুনিক শিক্ষার পাশাপাশি ধর্মীয় শিক্ষায়ও অগ্রগামী। হিফজ প্রোগ্রামের মাধ্যমে এখানে শিক্ষার্থীদের কুরআন মুখস্থ করার সুযোগ দেওয়া হয় এবং ইতিমধ্যে ৬২ জন হাফেজ তৈরি হয়েছে।
আনিসুর রহমান সোহাগের কাছে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার বর্তমান চ্যালেঞ্জ নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, "বাংলাদেশের বর্তমান শিক্ষাক্রম আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, যেখানে সিঙ্গাপুর ও কানাডার মতো দেশগুলোর শিক্ষার্থীরা হাতে-কলমে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিখছে, অথচ আমাদের শিক্ষার্থীরা তত্ত্বভিত্তিক শিক্ষা পাচ্ছে। STEM বিষয়ে গুরুত্ব বাড়ানো এবং হাতে-কলমে শিক্ষার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা উচিত। এছাড়াও, আমাদের মুখস্থ নির্ভর শিক্ষাব্যবস্থা শিক্ষার্থীদের সমালোচনামূলক চিন্তা ও সৃজনশীলতা বিকাশে ব্যর্থ হচ্ছে। প্রকল্পভিত্তিক শিক্ষা (Project-based learning) চালু করা উচিত, যেমন আমি আমার স্কুলে করেছি, যেখানে শিক্ষার্থীদের প্রকল্প এবং প্রেজেন্টেশনের ভিত্তিতে ২০ নম্বরের মূল্যায়ন করা হয়। শিক্ষার মূল্যায়ন প্রধানত পরীক্ষার ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় শিক্ষার্থীরা বাস্তব দক্ষতার চর্চা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এর পরিবর্তে, সমন্বিত মূল্যায়ন (Holistic Assessment) পদ্ধতি প্রয়োজন। শিক্ষকদের যথাযথ প্রশিক্ষণের অভাব শিক্ষার মান উন্নয়নে বড় বাধা। আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ পদ্ধতি গ্রহণ করে শিক্ষকদের দক্ষতা বাড়ানো জরুরি। একইসঙ্গে নৈতিক ও আধ্যাত্মিক শিক্ষার অভাবেও শিক্ষার্থীদের মধ্যে মানবিক মূল্যবোধ এবং সামাজিক দায়িত্ববোধ তৈরি হচ্ছে না। মালয়েশিয়ার মতো আমাদেরও নৈতিক শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। আমি আমার স্কুলে দক্ষতা, নৈতিকতা এবং আধ্যাত্মিকতার ওপর জোর দিয়ে শিক্ষার্থীদের গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। যার ফলে তারা বিশ্বখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় যেমন ইউসিএল, এলএসই, মোনাশ ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব মেলবোর্ন, ওয়েস্ট সিডনি ইউনিভার্সিটি, আইআইইউএম মালয়েশিয়া, ইউটিএম মালয়েশিয়া এবং এমনকি বাংলাদেশের মেডিকেল কলেজেও ভর্তির সুযোগ পেয়েছে।
আনিসুর রহমান সোহাগ জানান, তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে স্কুল অফ ইকোনমিকস থেকে এন্ট্রাপ্রেনরশিপ ম্যানেজমেন্টে মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন। এর আগে, তিনি আইবিএআইএস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ সম্পন্ন করেন। বর্তমানে তিনি মালয়েশিয়ার পুত্রা বিজনেস স্কুলে পিএইচডি করছেন, যা বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ প্রতিষ্ঠান ইউনিভার্সিটি পুত্রা মালয়েশিয়ার অধীনে পরিচালিত। এছাড়াও ২০১৬ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ থেকে ম্যানেজমেন্ট ডেভলপমেন্ট প্রোগ্রাম (এমডিপি) ইন হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট কম্পিটেন্সিস কোর্সটি সফলভাবে সম্পন্ন করেন। বিশ্ববিখ্যাত আইবি কারিকুলামের অধীনে পিওয়াইপি ও এমওয়াইপি প্রিঞ্চিপাল ট্রেইনিং ও সফলভাবে সম্পন্ন করেছেন। এছাড়া দুবাইয়ের এমিটি বিশ্ববিদ্যালয়সহ, ভারতে অনুষ্ঠিত পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ এডুকেশন কনফারেন্স এ তিনি গেস্ট স্পিকার হিসেবে আমন্ত্রিত ছিলেন। নিজের যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে শিক্ষার্থীদের আলোকিত করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
বিভি/পিএইচ
মন্তব্য করুন: