• NEWS PORTAL

  • রবিবার, ০৩ আগস্ট ২০২৫

Drama: Jamai Bou Chor
Drama: Jamai Bou Chor

১৯৯৪ সালে হিমায়িত করা ভ্রূণ থেকে জন্ম নিলো শিশু!

প্রকাশিত: ২১:৪৩, ২ আগস্ট ২০২৫

ফন্ট সাইজ
১৯৯৪ সালে হিমায়িত করা ভ্রূণ থেকে জন্ম নিলো শিশু!

আজ থেকে ৩১ বছর আগে হিমায়িত রাখা ভ্রুণ থেকে একটি শিশুর জন্ম হয়েছে। বিস্ময়কর ঘটনাটি ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইওর এক দম্পতির ঘরে। শিশুটি ৩১ বছর ধরে হিমায়িত অবস্থায় থাকা একটি ভ্রূণ থেকে বিকশিত হয়েছে। এটি ভ্রূণ সংরক্ষণ থেকে জন্ম নেয়া শিশুর ক্ষেত্রে একটি রেকর্ড।

এমব্রায়ো এডপশন নামে পরিচিত এই প্রক্রিয়ায়, লিন্ডসে ও টিম পিয়ার্স বছরের পর বছর বন্ধ্যাত্বের সমস্যার পর ১৯৯৪ সালে দান করা কয়েকটি ভ্রূণ ব্যবহার করে সন্তান লাভের চেষ্টা করেন। গত শনিবার (২৬ জুলাই) তাদের ঘরে একটি ছেলে সন্তান জন্মগ্রহণ করে। যে ভ্রূণটি ১১,১৪৮ দিন ধরে সংরক্ষিত ছিল, সেটি থেকেই এই শিশুর জন্ম হয়েছে। 

১৯৯০-এর দশক থেকে এই ধারণা থাকলেও, কিছু ফার্টিলিটি ক্লিনিক ও খ্রিস্টান-কেন্দ্রিক সংগঠনগুলো অব্যবহৃত ভ্রূণ নষ্ট করার বিরোধিতা করায় এটি এখন বেশি আলোচিত হচ্ছে। তাদের বিশ্বাস, গর্ভধারণের সময় থেকেই জীবন শুরু হয় এবং প্রতিটি ভ্রূণকে একটি শিশুর মতোই দেখাশোনা করা উচিত।

৬২ বছর বয়সী লিন্ডা আর্চার্ড, যিনি পিয়ার্স দম্পতিকে তার ভ্রূণ দান করেছিলেন তিনি বলেন, ‘আমি সবসময় মনে করতাম যে এই ভ্রূণগুলোরও আমার মেয়ের মতো বেঁচে থাকার অধিকার আছে।’

যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ২ শতাংশ শিশুর জন্ম ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন (আইভিএফ) এর মাধ্যমে হয়, এবং এর মধ্যে দান করা ভ্রূণ থেকে জন্মানো শিশুর সংখ্যা আরও কম।

তবে, চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের অনুমান, দেশজুড়ে প্রায় ১৫ লাখ হিমায়িত ভ্রূণ সংরক্ষিত আছে, যাদের অনেকগুলোরই ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। কারণ, অনেক দম্পতিই আইভিএফ ল্যাবে তৈরি অতিরিক্ত ভ্রূণ নিয়ে কী করবেন তা নিয়ে দ্বিধায় ভোগেন।

২০২৪ সালে আলাবামা সুপ্রিম কোর্টের একটি রায় এই বিতর্ককে আরও জটিল করেছে, যেখানে বলা হয়েছে হিমায়িত ভ্রূণ আইনগতভাবে শিশুর সমতুল্য। এরপর রাজ্য কর্তৃপক্ষ ক্লিনিকগুলোকে এই রায় থেকে সুরক্ষা দেয়ার একটি অস্থায়ী সমাধান দিয়েছে, কিন্তু অবশিষ্ট ভ্রূণগুলোর ভাগ্য এখনও অনিশ্চিত।

আর্চার্ড জানান, তিনি ১৯৯৪ সালে আইভিএফ-এর সাহায্য নেন। তখন ভ্রূণ হিমায়িত করা ও স্থানান্তর করার প্রযুক্তি উল্লেখযোগ্য উন্নতি করছিল, যা আশাবাদী দম্পতিদের জন্য আরও ভ্রূণ তৈরি ও সফল গর্ভধারণের সম্ভাবনা বাড়িয়েছিল।

তিনি চারটি ভ্রূণ পেয়েছিলেন এবং প্রথমে সবগুলো ব্যবহার করার আশা করেছিলেন। কিন্তু তার মেয়ের জন্মের পর, আর্চার্ড ও তার স্বামীর বিবাহবিচ্ছেদ হয়, যার ফলে আরও সন্তান নেয়ার পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। বছর পেরিয়ে দশক পার হতে থাকায়, সংরক্ষণ খরচ বৃদ্ধির পাশাপাশি ভ্রূণগুলোর ভবিষ্যৎ নিয়ে তিনি অপরাধবোধে ভুগতে থাকেন।

অবশেষে, তিনি স্নোফ্লেকস-এর সন্ধান পান, যা নাইটলাইট ক্রিশ্চিয়ান অ্যাডপশনস-এর একটি শাখা এবং দাতাদের জন্য উন্মুক্ত দত্তকের ব্যবস্থা করে। আর্চার্ড তার ভ্রূণ দত্তক নেয়া পরিবারের জন্য কিছু শর্তও নির্ধারণ করতে পেরেছিলেন।

তিনি বলেন, ‘আমি এই শিশুর জীবনের একটি অংশ হতে চেয়েছিলাম এবং আমি দত্তক নেয়া বাবা-মাকে জানতে চেয়েছিলাম।’

তবে এই প্রক্রিয়া সহজ ছিল না—আর্চার্ডকে ওরেগনে তার প্রথম ফার্টিলিটি ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে হয়েছিল এবং দানের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করতে পুরনো রেকর্ড ঘাঁটতে হয়েছিল। এরপর ভ্রূণগুলো ওরেগন থেকে টেনেসিতে পিয়ার্স দম্পতির ডাক্তারের কাছে পাঠানো হয়।

নক্সভিলের রিজয়েস ফার্টিলিটি ক্লিনিকটি হিমায়িত ভ্রূণ নষ্ট করতে অস্বীকার করে এবং পুরনো পদ্ধতিতে সংরক্ষিত ভ্রূণ নিয়ে কাজ করার জন্য পরিচিত।

আর্চার্ডের দান করা তিনটি ভ্রূণের মধ্যে একটি গলানোর পর টিকতে পারেনি। বাকি দুটির একটি লিন্ডসে পিয়ার্সের জরায়ুতে স্থাপন করা হয় এবং সেটিই সফলভাবে বিকশিত হয়।

ডা. জন ডেভিড গর্ডনের মতে, প্রায় ৩১ বছর ধরে হিমায়িত থাকা ভ্রূণ থেকে শিশুর জন্ম এই ক্ষেত্রে একটি রেকর্ড। এর আগে, ৩০ বছর (১০,৯০৫ দিন) হিমায়িত থাকা ভ্রূণ থেকে লিডিয়া ও টিমোথি রিজওয়ের জন্ম হয়েছিল, যেটিতেও গর্ডনের ক্লিনিক সহায়তা করেছিল।

গর্ডন বলেন, ‘আমি মনে করি, এই গল্পগুলো মানুষের কল্পনাকে জাগ্রত করে। কিন্তু এগুলো একটি সতর্কবার্তাও দেয়—কেন এই ভ্রূণগুলো এতদিন সংরক্ষিত ছিল? এই সমস্যাটাই বা কেন তৈরি হলো?’

এক বিবৃতিতে, লিন্ডসে ও টিম পিয়ার্স বলেছেন যে ক্লিনিকের সহায়তা তাদের জন্য যথেষ্ট ছিল। ‘আমরা রেকর্ড গড়ার জন্য এটা করিনি—আমরা শুধু একটি সন্তান চেয়েছিলাম,’ লিন্ডসে পিয়ার্স বলেন।

আর্চার্ডের জন্য, এই দান প্রক্রিয়া একটি আবেগঘন অভিজ্ঞতা ছিল—সান্ত্বনা এই যে তার ভ্রূণ অবশেষে একটি ঘর পেয়েছে। তবে তার দু:খ এতোটুকুই যে সেটি তার নিজের সন্তান হিসেবে আসেনি।

তিনি বলেন, ‘আমি আশা করছি তারা ছবি পাঠাবে। শিশুর জন্মের পর বাবা-মা ইতিমধ্যে কয়েকটি ছবি পাঠিয়েছেন। আমি একদিন তাদের দেখা করতে চাই। সত্যিই স্বপ্নপূরণ হবে যদি আমি তাদের এবং শিশুটিকে দেখতে পাই।’

বিভি/এজেড

মন্তব্য করুন: