মানব ‘মস্তিষ্কখেকো’ ৩ অ্যামিবা

ভারতের কেরালা রাজ্যে এক বিরল এবং প্রাণঘাতী মস্তিষ্ক-সংক্রান্ত রোগ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। প্রাইমারি অ্যামিবিক মেনিনগোএনসেফালাইটিস (পিএএম) নামক এই মারাত্মক মস্তিষ্কের সংক্রমণটি নায়েগলেরিয়া ফাওলেরি নামক অ্যামিবার কারণে হয়। এই রোগটি সাধারণভাবে মস্তিষ্ক-খাদক অ্যামিবা নামে পরিচিত।
নায়েগলেরিয়া ফাওলেরি মূলত উষ্ণ ও মিষ্টি পানিতে বসবাস করে। যখন কেউ পানিতে সাঁতার কাটে, তখন এই অ্যামিবা নাকের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে এবং সোজা মস্তিষ্কে পৌঁছে যায়। সেখানে এটি দ্রুত কোষ ধ্বংস করতে শুরু করে।
নায়েগলেরিয়া ফাওলেরি একটি ফ্রি লিভিং এককোষী অ্যামিবা। এ ধরণের অ্যামিবা নিজে থেকেই বেঁচে থাকতে পারে। এরজন্য তাদের ফ্রি লিভিং বলা হয়ে থাকে। জীবনদশায় মানুষ এরকম অ্যামিবার সংস্পর্শে আসলেও সবসময় অসুস্থ হয় না। তবে অনেকে আবার গুরুতর ইনফেকশনে আক্রান্ত হতে পারেন।
প্রকৃতিতে বিভিন্ন ধরনের ফ্রি লিভিং অ্যামিবার উপস্থিতি রয়েছে। নায়েগলেরিয়া ফাওলেরি ছাড়াও আরও দুই ধরনের অ্যামিবা মানুষের জন্য প্রাণঘাতী। এগুলো হলো;
অ্যাকান্থামিবা
ব্যালামুথিয়া ম্যান্ড্রিলারিস
এই তিন ধরনের অ্যামিবাই মানুষের মধ্যে প্রাণঘাতী ব্রেইন ইনফেকশন সৃষ্টি করতে পারে। পাশাপাশি চোখ, ত্বক, সাইনাসসহ শরীরের অন্যান্য অংশেও ইনফেকশনের কারণ হতে পারে।
অ্যাকান্থামিবা: জীবদ্দশায় অনেকেই এই অ্যামিবার সংস্পর্শে এসে থাকে। সাধারণত মাটি, ধুলায় এই অ্যামিবার উপস্থিতি রয়েছে। এছাড়া মিঠা পানি ও নোনতা পানিতেও বাস করে এই অ্যামিবা। সুইমিং পুল, হট টাব, ড্রিংকিং ওয়াটার সিস্টেম, হিউমিডিফায়ারস, ভেন্টিলেশন সিস্টেম ও এয়ার কন্ডিশনিং সিস্টেমেও এই অ্যামিবার উপস্থিতি থাকতে পারে।
এর সংস্পর্শে আসা সবাই অসুস্থ হয় না। আবার অনেকেই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। এর কারণে মানুষের গুরুতর ব্রেইন, স্কিন, চোখ ও সাইনাসের ইনফেকশন হতে পারে। শরীরে কাঁটা-ছেড়া থাকলে সেখানে দিয়ে এই অ্যামিবা প্রবেশ করতে পারে। এছাড়া নিশ্বাসের মাধ্যমে ফুসফুসে প্রবেশ করতে পারে। কন্ট্যাক্ট লেন্সের মাধ্যমেও চোখে প্রবেশ করতে পারে।
অ্যাকান্থামিবা দুই ধরনের হয়ে থাকে।
১। নন-কেরাটাইটিস অ্যাকান্থামিবা ইনফেকশনস
২। অ্যাকান্থামিবা কেরাটাইটিস
ব্যালামুথিয়া ম্যান্ড্রিলারিস: এই অ্যামিবা পানি, মাটি ও ধুলায় বাস করে। পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় এই অ্যামিবার বাস রয়েছে। এর ফলে স্কিন, ব্রেইন ও শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে ইনফেকশন হতে পারে। এই অ্যামিবার কারণে গ্র্যানুলোমেটাস অ্যামিবিক এনসিফিলাইটিস নামক প্রাণঘাতী ব্রেইন ইনফেকশন হয়ে থাকে।
বছরের যেকোনো সময়ে যে কেউ এই অ্যামিবা দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। শরীরে কাঁটা-ছেড়া দিয়ে এই অ্যামিবা শরীরে প্রবেশ করতে পারে। এছাড়া নিশ্বাসের মাধ্যমেও এটি শরীরে প্রবেশ করতে পারে। তবে, মানুষ থেকে মানুষে এই অ্যামিবার সংক্রমণের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
সূত্র: সিডিসি
বিভি/এসজি
মন্তব্য করুন: