• NEWS PORTAL

  • সোমবার, ১২ মে ২০২৫

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামীণ ঐতিহ্য মৃৎশিল্প

শামীম হোসেন সামন, নবাবগঞ্জ (ঢাকা)

প্রকাশিত: ১৫:৫৮, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২২

ফন্ট সাইজ
আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামীণ ঐতিহ্য মৃৎশিল্প

ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলায় বিলুপ্তির পথে বাংলার ঐতিহ্য মৃৎশিল্প। কালের বিবর্তন আর শিল্পায়নের যুগে ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে শিল্পটি। এই উপজেলায় বংশ পরম্পরায় এখনও মৃৎশিল্পকে আকঁড়ে ধরে বেঁচে আছে অনেক পরিবার। তবে প্লাস্টিকের জিনিসপত্রের দাপটে ভিন্ন পেশায় চলে যাচ্ছেন তাদের অনেকে। যে কারণে হারাতে বসেছে হাজার বছরের ঐতিহ্যের এই শিল্প।

মাটির তৈরি জিনিসপত্রের চাহিদা কম থাকায় বেচা-বিক্রি করতে না পারায় অর্থনৈতিক সংকটে দিশেহারা এই শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা। প্রতিবছর দুর্গাপূজা, পহেলা বৈশাখসহ,বিভিন্ন উৎসব-পার্বণে মৃৎশিল্পের কদর বাড়ে। ফলে এ সময়গুলোতে কিছুটা হলেও লাভের মুখ দেখেন কারিগররা। কিন্তু কালের বিবর্তনে ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে এই শিল্পের প্রসার। অনেকে এ পেশায় থাকলেও মাটির তৈরি সামগ্রীর চাহিদা না থাকায় অভাব-অনটনে সংসার চালাতে পারছেন না। একবেলা-আধাবেলা খেয়ে দিনাতিপাত করছেন অনেক মৃৎশিল্পী। এক সময়ের কর্মব্যস্ত কুমারপাড়ায় এখন শুনসান নিরবতা।

জানা গেছে, নবাবগঞ্জের নয়নশ্রী ইউনিয়নের খানেপুর ও জয়কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের সোনাবাজু গ্রামের পালবাড়িসহ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে মৃৎশিল্প ছিল। মৃৎশিল্পীরা মাটির হাঁড়ি-পাতিল, বাসন-কোসন, ঢাকনা, কলসি, ছোট বাচ্চাদের খেলনা সামগ্রী, পেয়ালা তৈরি করতেন। তাদের তৈরি পুতুল ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় সরবরাহ করা হতো। বর্তমানে নানা প্রতিকূলতা ও অভাব অনটনের কারণে ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার সোনাবাজু গ্রামের পালবাড়ির মৃৎশিল্পীরা তাদের ঐতিহ্যবাহী বাপ-দাদার আদি পেশা ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন।

জয়কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের সোনাবাজু এলাকার প্রবীণ শিল্পী মরন পাল জানান, ‘খুব ছোটবেলা থেকে এই মৃৎশিল্পে জড়িত ছিলাম। বয়সের ভারে ও আধুনিকতায় আমার পেশা থেকে সরে দাঁড়ালেও ছেলে তার পূর্ব বংশের ঐতিহ্য ধরে রাখতে এখনও এ পেশায় জড়িয়ে রয়েছেন। তবে আগে যে হারে এসব জিনিস ব্যবহার করতো মানুষ, বর্তমানে সেভাবে করে না। এসব থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে তারা। তাই ঋণ করে সংসার চালাতে হয়।’

খানেপুর গ্রামের নারায়ণ পাল বলেন, ‘এক সময় বাপ-দাদার পেশায় ভালো ছিলাম। মাটির তৈরি জিনিসপত্রের এখন কদর নেই। অনেকেই এ পেশা ছেড়ে দিচ্ছে।’

সংশ্লিষ্টরা জানান, নানামুখী সংকটের কারণে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী এ শিল্প। ফলে এর ওপর নির্ভরশীল পরিবারগুলোর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। স্টিল, চিনামাটি, মেলামাইন ও প্লাস্টিকের জিনিসপত্র বাজারে আসার পর মানুষ আর মাটির তৈরি হাঁড়ি, থালা, কলস, মসলা বাটার পাত্র, মাটির ব্যাংক ও খেলনা সামগ্রী ব্যবহার করছেন না। এখন শুধু গবাদিপশুর খাবারের জন্য গামলা, মাটির ব্যাংক, মাটির পাতিল ও সংখ্যালঘুদের পূজা-পার্বণের জন্য নির্মিত কিছু সামগ্রীর চাহিদা রয়েছে। গ্রামাঞ্চলের অনেক মানুষ অবশ্য এখনও দৈনন্দিন প্রয়োজনে কিছু মাটির তৈরি পাত্র ব্যবহার করেন। কিন্তু মাটির তৈরি সৌখিন জিনিসপত্রের বাজার চাহিদা তেমন একটা নেই বললেই চলে। এক সময় কম দামে মাটি সংগ্রহ করা গেলেও এখন মাটি কিনতে হয় অনেক বেশি দামে। এছাড়া মাটি ও জ্বালানির দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বাড়ছে উৎপাদন ব্যয়। ফলে কুমার সম্প্রদায়ের সদস্যরা বাধ্য হয়ে অন্য পেশায় জড়িয়ে পড়ছেন। 

বাংলাদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্যের অন্যতম ধারক মৃৎশিল্প। এ দেশের কুমার সম্প্রদায় যুগ যুগ ধরে টিকিয়ে রেখেছে। এ শিল্পের মালামাল, স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তেও সরবরাহ করা হতো। তাই বাংলার এই সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে সব ধরনের সহযোগিতা প্রত্যাশা করছেন এ পেশায় জড়িতরা।
 

বিভি/এনএ

মন্তব্য করুন: