• NEWS PORTAL

  • বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫

Drama: Jamai Bou Chor
Drama: Jamai Bou Chor

এক মালাই নৌকা

আহসানুল কবির রিপন

প্রকাশিত: ১২:৫৪, ২২ অক্টোবর ২০২২

আপডেট: ১৫:১১, ২২ অক্টোবর ২০২২

ফন্ট সাইজ
এক মালাই নৌকা

সংগৃহীত ছবি

লেদা মাঝির নৌকায় গ্রামের বাড়ি যেতাম....
একটা সময় দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের চলাচলের প্রধান বাহন ছিল এই নৌকাটি। পটুয়াখালী অঞ্চলে এই নৌকাটির নাম ছিল এক মালই আবার কারো কাছে ছিল কেরায় নৌকা, কোন কোন এলাকায় পানশি বা নাইওরি নৌকা নামেও পরিচিত। হয়তো এই নৌকায় মাঝি-মাল্লা একজনই থাকতো তাই এক মালাই নৌকা বলা হতো বরিশাল অঞ্চলে। কাছাকাছি যাওয়ার জন্য গণপরিবহন বা রিজার্ভ হিসেবে এই নৌকাটির প্রচলন ছিল খুব বেশী।

 

পটুয়াখালী শহরের মুরাদিয়া স্টোরস সংলগ্ন ঘাটে প্রতিদিন শতশত নৌকা যাত্রীর অপেক্ষায় থাকতো। এখান থেকে নৌকা জেলার শ্রীরামপুর,  লোহালিয়া,  মুরাদিয়া,  গাবতলী ও পীরতলা বাজার (দুমকি উপজেলার সদর) পর্যন্ত যেত। আমার শৈশব কৈশোর কেটেছে পুরান বাজার সওদাগর পট্টি, ব্যাংক রোড, চকবাজার এলাকায়। তখন গ্রামের বাড়ি মুরাদিয়া গ্রামে যাওয়ার একমাত্র পথ ছিল নদী পথ। একমাত্র বাহনও ছিল নৌকা। 

ডিসেম্বর মাস এলেই বার্ষিক পরীক্ষার পর স্বপরিবারে গ্রামে বেড়াতে যেতাম। বাসার কাছেই মুরাদিয়া স্টোর ঘাট থেকে এক মালই নৌকা রিজার্ভ করে বাড়ি যেতাম।  মা ভাই বোন মিলে লেদা মাঝির নৌকাতেই বেশিরভাগ সময় যাওয়া হতো। পটুয়াখালী ঘাট থেকে আমাদের দক্ষিণ মুরাদিয়া কল বাড়ি ঘাট পর্যন্ত পৌঁছতে দেড় ঘন্টা সময় লাগতো। তখনকার নৌকাভ্রমণে ছিল বিচিত্র অভিজ্ঞতা। নৌকায় মাখানো আলকাতরার গন্ধে মাথা ব্যথা ও বমি আসতো। কখনো কখনো নৌকার গলুইতে (সামনের প্রান্তে) গিয়ে বসতাম। 

লেদা মাঝে ছিল আমাদের বাড়ির কমন মাঝি। তার তিন ছেলে আলতু মাঝি,  জালাল মাঝি ও বারেক মাঝিসহ নাতিদেরকেও নৌকা বাইতে দেখেছি। অসম্ভব হাসিখুশি মানুষ ছিলেন লেদা মাঝি।  এর বাইরে তার অন্য কোন নাম ছিল কিনা সেটা জানা হয়নি কখনো। তবে তারা বংশে ছিলেন খান।

এক মালই নৌকোয় করে শৈশবের পরিবারের সাথে  মির্জাগঞ্জ মরহুম ইয়ার উদ্দিন খলিফার দরগাহ শারিফেও গিয়েছি। কখনো পায়রা নদী ছিল উত্তাল ও বিক্ষুব্ধ।  কঠিন ঢেউয়ের মুখেও পড়েছিলাম। পায়রা নদী কি!  তখনকার সময়ে যারা নৌকা পার হয়েছেন তারা টের পেয়েছেন। 
এছাড়াও তখনকার সময়ে এই নৌকা রিজার্ভ করে পারিবারিকভাবে আরেকটি জায়গায় যেতাম। কমলাপুর ইউনিয়নের শৌলা গ্রামের মুন্সির বাড়িতে বাৎসরিক মেলা হতো, সেখানে অংশ নিতাম। পথে জৈনকাঠী মীরা বাড়ির কাছে নৌকা ভীড়তো, সেখান থেকে বড় ফুফু, পারুল ফুপুকে নিয়ে নিতাম। প্রতিবছর ওই মেলায় যাওয়া হতো। 

বাংলাদেশের নৌকা

যা বলছিলাম এক মালই বা কেরায় নৌকার কথা, মুরাদিয়া স্টোর ঘাট ছাড়াও পুরান বাজার মসজিদ ঘাট, হেতালিয়া বাধঘাট,  নিউমার্কেট এলাকা থেকে বিভিন্ন গ্রামে এই নৌকাগুলো যাতায়াত করতো। নৌকায় কখনো গুনটানা হত(উল্লো স্রোত থাকলে মাল্লারা নৌকায় বড় রশি বেঁধে নদীর পাড়ে হেটে হেটে নৌকা এগিয়ে নিতো), আর বাতাস অনুকূলে থাকলে বাদাম (পাল)  টানানো হত।
সভ্যতার গতিতে অনেক কিছু হারিয়েছি,  হারিয়েছি নৌকাও,  একটা সময়ে এসে  হয়তো মনে হবে, এত গতির চেয়ে "এনালগ জীবনটাই ভালো ছিল"।

 

লেখক : সাংবাদিক

মন্তব্য করুন:

Drama Branding Details R2
Drama Branding Details R2