বিদায়ের বেদনাময় আলোয় স্মরণ : জনবান্ধব ইউএনও আবদুল কাইয়ূম
মঠবাড়িয়াবাসীর আপনজন হয়ে ওঠার গল্পে সদ্য সাবেক হওয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব আবদুল কাইয়ূম স্যারের মতো আর কেউ হতে পারেনি। আবার কেউ এসে তাঁর শূন্যতার উচ্চতা ছুঁয়ে যাক—আশা করতে পারি, তবে বাস্তবে কী হবে জানি না। জনবান্ধব সেবামনস্কতার প্রতিরূপে আবির্ভূত হওয়া মানুষটি কতটা সাধারণের মধ্যে কতখানি অসাধারণ ও অনন্য ছিলেন— সেটার সাক্ষী মঠবাড়িয়ার পাঁচ লক্ষ মানুষ। ভালোবাসলে গণমানুষের হৃদয়ের কতখানি গভীরে প্রবেশ করা যায়— তার নজির তিনি স্মৃতির প্রতিটি পৃষ্ঠায় এঁকে গেছেন।

যতগুলো গুণ মানুষের প্রতি মানুষকে আকর্ষণ করতে পারে—তার থেকে একটিও কম ছিল না এই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার। ক্ষমতার কেন্দ্রে থেকেও যে মানুষটিকে ক্ষমতা স্পর্শ করতে পারেনি, তাকে সম্মান করতে পারাও গৌরবের। হাজারো সুযোগেও অনৈতিকতার এক বিন্দুও যার উচ্চতাকে পরাজিত করতে পারেনি—এমন দৃষ্টান্ত বাংলাদেশের কয়টি উপজেলা দেখেছে, জানি না।

মঠবাড়িয়াবাসী কৃতজ্ঞতার সেই ঋণ শোধ করতে পারবে না। হাজারো সমস্যার সমাধান যার কাছে ছিল, যাকে যে-কোনো সময় পাওয়া যেত, সবখানে সব কথা বলা যেত— সেই মানুষটির সেবার নেয়ামত থেকে বঞ্চিত হওয়া দুর্ভাগ্যের বটে।

শতধাবিভক্ত এই জনপদে শান্তি ফিরিয়ে আনা কম চ্যালেঞ্জের ছিল না। তিনি পেরেছিলেন। পুষ্প ও পল্লবে সাজিয়েছিলেন এদিক-সেদিক। উপজেলা প্রশাসনের যে ফুলটি সবচেয়ে বেশি সৌরভ ছড়াতো— মঠবাড়িয়ার ইউএনও হিসেবে যে মানুষটিকে নিয়ে সর্বত্র গর্বে গল্প বলা যেত—সেই মানুষটির মঠবাড়িয়া থেকে চলে যাওয়া হৃদয়ছেঁড়া ব্যথার মতো অনুভূত হচ্ছে। যেতেই যদি হবে তবে এত তাড়াতাড়ি কেন? ভালোবাসার যে ঋণে মঠবাড়িয়ার প্রতিটি মানুষ জড়ানো—সেটা ছিন্ন করা কি এতই সহজ হবে?

কত মানুষের দোয়া, কতখানি চোখের পানি আর কত গভীর ভালোবাসার আকুতি ব্যক্তি আব্দুল কাইয়ূমের জন্য মঠবাড়িয়াবাসী পুষে রাখবে—তা কোনোদিন মাপা যাবে না। মঠবাড়িয়ার মানুষের সুদিনের নির্মাতা যিনি, তিনি বিবেকহীনদের শত্রু হননি; বরং ভালোবেসে আগলে রেখেছেন দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে বড় উপজেলার এমাথা থেকে ওমাথা। শিক্ষা, সংস্কৃতি এবং সৌহার্দ্যে যিনি আমূল বদলে দিয়েছেন প্রিয় মঠবাড়িয়াকে—তিনি যেন দুনিয়ার সব শান্তি এবং আখিরাতেও সম্মানজনক মুক্তি পান—কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা এই। যে মানুষটি নিরহংকার, বিনয়ী ও সৎ—তাকে দুনিয়া ও আখিরাতের কোনো দুর্ভোগ যেন স্পর্শ করতে না পারে।
লেখক: রাজু আহমেদ
ফেসবুক থেকে নেয়া
বিভি/এনএম




মন্তব্য করুন: