• NEWS PORTAL

  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

আবরার ফাহাদের ভাইয়ের বুয়েট নিয়ে লেখা স্ট্যাটাস ভাইরাল

প্রকাশিত: ১৯:২০, ২ জুলাই ২০২২

ফন্ট সাইজ
আবরার ফাহাদের ভাইয়ের বুয়েট নিয়ে লেখা স্ট্যাটাস ভাইরাল

আবরার ফাহাদের নাম আর বুযেট ক্যাম্পাস যেন এক সূত্রে গেঁথে গেছে। নতুন করে আবরারের ছোট ভাই বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ায় এই ইস্যু আবারও সামনে এসেছে।

গত বৃহস্পতিবার (৩০ জুন) রাতে বুয়েটের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ফলাফল থেকে জানা যায়, আবরার ফাহাদের ছোট ভাই আবরার ফাইয়াজ ৪৫০তম হয়ে যন্ত্রকৌশল বিভাগে চান্স পেয়েছেন। যদিও তার ভর্তি হওয়া নিযে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। কেননা তার মা চান না ফাইয়াজ এখানে পড়ুক।

এদিকে বুয়েটে ভর্তির সুযোগ পাওয়ার পর শুক্রবার (১ জুলাই) বিকেলে আবরার ফাইয়াজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন। সামাজিক মাধ্যমে ইতিমধ্যে ভাইরাল হয়েছে স্ট্যাটাসটি। স্ট্যাটাসটি পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-

‘আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহর ইচ্ছায় বুয়েটে মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তির সুযোগ লাভ করতে পেরেছি। আসলে এখন আমাদের অনেক খুশি হওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত বাড়ির কারও মুখে তেমন খুশির ছিটেফোঁটাও দেখতে পাইনি। গতকাল (বৃহস্পতিবার) যে সময় আমাদের রেজাল্ট দিয়েছে ২০১৭ সালেও ঠিক ওই একই সময়ে ভাইয়ার রেজাল্ট দিয়েছিল। তখন আমরা ৪ জনই একই ঘরে বসে ছিলাম। সঙ্গে চাচাও ছিল। ভাইয়ার এক বন্ধু ফোন দিয়ে বলেছিল যে বুয়েটের রেজাল্ট দিয়েছে। সেদিনের মতো খুশি ভাইয়াকে আর কখনো দেখিনি। ঠিক যেন চোখ-মুখ দিয়ে আনন্দ দেখা যাচ্ছিল। আমিও সেদিন অনেক অনেক বেশি খুশি হয়েছিলাম। সত্যি বলতে সেদিনের আনন্দের ১০ ভাগও গতকাল নিজের রেজাল্ট দেখে পাইনি।

এখন পর্যন্ত আমার পরিবারের একজনও বলেনি বুয়েটে ভর্তি হতে। আসলে কারও সেটা বলার মতো সাহস নেই। আমার দাদা, ভাইয়ার রেজাল্ট শুনে পুরো এলাকায় বলে বেড়িয়েছিল, সে কি না আমাকে বারবার বলছে, ‘তুই আর বুয়েটে যাস না। দরকার হলে রাজশাহী-খুলনা ভার্সিটিতে পড়। ওরা খুব খারাপ।’ কোথায় পড়ব জানি না এখনও। IUT-তে ৪১তম হয়েছিলাম CSE-তে ভর্তি আছি ওখানে।

আমাদের দুই ভাইয়ের বয়স আর ক্লাস গ্যাপ ৪ বছরের। তাই ভাইয়াকে ভর্তির দিনই বলছিলাম, ‘তাহলে ব্যাপারটা এমন যে তুই বের হবি আর আমাদের ব্যাচ ঢুকবে’। ভাইয়া একবার আম্মুকে বলেছিল, ‘এখানে দেখি যার বড় ভাইও পড়ে ছোট ভাইরাও বুয়েটেই আসে। তোমার ছেলে কী করবে?’

ভাইয়ার আসলে অনেক আশা ছিল যে আমিও ভালো কোথাও ভর্তি হব। ভাইয়ার এক বন্ধুর সঙ্গে দেখা হলে বলছিল, ‘তুমি তো সাব্বির? তুমি নাকি অনেক ভালো ছাত্র। তুমি কী বুয়েটে আসবা? তোমার ভাই তো বলে তোমারো নাকি বুয়েটে ইচ্ছা?’ আমি জানি না ভাইয়া সব সময় কেন আমাকে পড়ালেখায় ভালো ভাবত। যেখানে আমি ভাইয়া বেঁচে থাকতে তেমন কোনো ভালো রেজাল্টই করিনি, শুধুমাত্র স্কুলের পরীক্ষা বাদে। আসলে আমার থেকে ওরই আমার ওপর বেশি ভরসা ছিল।

ভাইয়া মারা যাওয়ার পরে ওর এক স্টুডেন্ট আর তার মা বাসায় এসে বলে, ‘তোমার ভাই কিন্তু তোমাকে নিয়ে অনেক চিন্তা করত। সব সময় বলতো তোমার কথা। তুমি কোথায় পড়বা এসব কথা সব সময় বলত।’

ভাইয়ার রেজাল্টের দিন ফেসবুকে একটা পোস্ট দিয়েছিল আলহামদুলিল্লাহ লিখে, আমি আবার তখন জোর করে বলেছিলাম, আমাকে ট্যাগ করতে। হয়তো আজ উল্টোটা হতো। প্রথমবারের মতো ভাইয়ার খুশি হওয়ার মতো কিছু হতে পারত এটা, কিন্তু সেটা আর হলো না। এরপর কী করব জানি না এখনও। এতদিন তো শুধু ভাইয়ার দেখানো পথেই এগিয়েছি। বলা যায় ভাইয়ার দেখানো পথ এখান পর্যন্তই ছিল। এরপরের দিনগুলো কেমন হবে সেটা আর আমাকে দেখিয়ে যাওয়ার সুযোগ সে পায়নি। জানি না ভাইয়া কী অবস্থায় আছে, কোথায় আছে কিন্তু এখন যতটা মিস করি ততটা আগে কখনো করিনি।

আপনারা সবাই আমাদের অভিনন্দন জানাচ্ছেন। এত ভালোবাসার যোগ্য আমরা কি না জানি না। আসলে আমার শিক্ষক, বন্ধু কিংবা তেমন চিনি না এমন অনেকেও আমাদের যেভাবে গত কয়েক বছর সাপোর্ট দিচ্ছেন এটা আমাদের কাছে কতটা মূল্যবান তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না। সকলের কাছে আমাদের কৃতজ্ঞতার কোনো শেষ নেই।’

২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের এক হলে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মীর নির্যাতনে মারা যান আবরার ফাহাদ। এ ঘটনায় ৭ অক্টোবর ১৯ শিক্ষার্থীকে আসামি করে মামলা করেন ফাহাদের বাবা। 

এরপর মামলা তদন্ত করে পুলিশ মোট ২৫ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেয়, যাদের সবাই বুয়েটের বিভিন্ন বর্ষের ছাত্র এবং ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত। গত বছরের ৮ ডিসেম্বর এই মামলায় রায়ে ২০ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও ৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয় আদালত।

বিভি/এজেড

মন্তব্য করুন: