ওষুধের দাম বৃদ্ধি নিয়ে বিএনপি’র স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদকের বিবৃতি

ছবি: ডা. রফিকুল ইসলাম
বিএনপি’র স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম মঙ্গলবার (৪ জুন) দেশে ওষুধের দাম বৃদ্ধি নিয়ে এক বিবৃতি প্রদান করেন। বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘গভীর উদ্বেগের সাথে দেখা যাচ্ছে যে, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে যখন দিশেহারা দেশের জনগণ তখন ওষুধের দাম বৃদ্ধি করে দেশের জনগণকে এক নির্মম পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে এই সরকার।’
তিনি বলেন, ন্যাশনাল হেলথ অ্যাকাউন্টের তথ্যমতে, চিকিৎসা ব্যয়ের ৭০% ব্যক্তির পকেট থেকে খরচ হয়, সেই ওষুধের দাম বৃদ্ধি করে যেন নির্মম এক প্রহসনের আয়োজন করলো জনবিচ্ছিন্ন এই সরকার।
২০২২ সালে কোনো ধরনের পূর্ব ঘোষণা ছাড়া শুধুমাত্র ঔষধ কোম্পানিগুলোর সুপারিশে ২০টি জেনেরিকের ৫৩টি ঔষধের দাম বৃদ্ধি করে ঔষধ প্রশাসন, যা ছিলো নজিরবিহীন। সেসময় প্যারাসিটামল, হৃদরোগ, ব্যাথানাশক ও গ্যাস্ট্রিকের ঔষধের দাম ৫০—১৩৪% শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। এরপর ২০২৩ সালে আরেক দফায় ২৩৪টি জীবন রক্ষাকারী ঔষধের দাম ১০ থেকে ৫০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছিল।
ওষুধের দাম বৃদ্ধির এই রেশ কাটতে না কাটতেই দৈনিক একটি পত্রিকাসূত্রে জানা যায় যে অতি স¤প্রতি পুনরায় কয়েকমাসের ব্যবধানে দু’ শতাধিক ওষুধের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে কমপক্ষে ২০ শতাংশ।
ডলারের মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে এই দাম বাড়িয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দাবি। ভঙ্গুর অর্থনীতি ও লুটপাটের রাজনীতির বলি হচ্ছে সাধারণ জনগণ। ঔষধ প্রশাসন এসব ক্ষেত্রে নীরব।
এভাবে হুট করে দামবৃদ্ধির কারণে অনেকেই মাঝপথে ঔষধ সেবন বন্ধ করে দিচ্ছে, ফলে নানা রকম স্বাস্থ্যঝুঁকি বৃদ্ধি পাচ্ছে। ডায়াবেটিস কিংবা উচ্চ রক্তচাপের ওষুধের দাম বাড়ার কারণে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো এইসব ওষুধ বন্ধ করে দেয়ার উপক্রম হয়েছে। ফলে স্ট্রোক, হৃদরোগসহ নানা অসংক্রামক রোগের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে।
দাম বৃদ্ধি পেয়েছে জীবন রক্ষাকারী এন্টিবায়োটিকেরও। কোর্স সম্পন্ন না করে এন্টিবায়োটিক বন্ধ করলে এন্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স তৈরি হচ্ছে যা শীর্ষ ১০টি জনস্বাস্থ্য হুমকির একটি। একই সাথে ডায়াবেটিস কিংবা হৃদরোগের ঔষধের দাম বৃদ্ধিতে মারাত্মক ঝুঁকি দেখা দিয়েছে। যারা দীর্ঘ মেয়াদি রোগে ভুগছেন নিয়মিত ঔষধ খাওয়ার জন্য তাদের মাসিক খরচ ২—৪ হাজার টাকা বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিত্যনৈমিত্তিক পণ্য কেনা নিয়ে যখন নাভিশ্বাস তখন জীবন রক্ষাকারী ঔষধ কেনাটা সাধারণ মানুষের জন্য বিলাসিতায় পরিণত হয়েছে।
১৯৮২ সালের ঔষধ নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ ১১ (১) ধারা অনুযায়ী স্পষ্ট বলা আছে ‘সরকার অফিসিয়াল গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে ঔষুধের দাম নির্ধারণ করতে পারবে।’ অথচ এই নিয়মের তোয়াক্কা না করে ২০২২ সালেই ঔষুধ প্রশাসন দাম বাড়িয়েছে ২ বার। এরপর ২০২৩ ও ২০২৪ সালে আরো ২ বার।
এভাবে দেশের প্রতিটি খাত ধ্বংসের সম্মুখীন। চিকিৎসা মৌলিক অধিকার তাও আজ ক্ষুন্ন হচ্ছে। নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত এই সরকার কোনভাবেই দেশের সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা না করে এক চরম দূর্যোগের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
বিবৃতিতে সবশেষে ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, এভাবে চলতে পারে না। অবিলম্বে স্বাস্থ্যখাতে এই বেহাল দশার সাথে জড়িত অবৈধ সরকারের কুশীলবদের জবাবদিহিতার মুখোমুখি করতে হবে।
বিভি/এমআর
মন্তব্য করুন: