• NEWS PORTAL

  • রবিবার, ০৫ মে ২০২৪

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

৩৮ চিকিৎসকের ১১ ঘণ্টার প্রচেষ্টায় আলাদা জোড়া শিশু লাবিবা-লামিসা (ভিডিও)

প্রকাশিত: ০৭:৫৮, ২২ মার্চ ২০২২

আপডেট: ১৯:৫১, ২২ মার্চ ২০২২

ফন্ট সাইজ

জোড়া লাগানো দেহ নিয়ে পৃথিবীতে এসেছিল জমজ দুই বোন লাবিবা ও লামিসা। তবে তাদের আর কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই। দু’বোনই এখন আলাদা শরীরের মালিক। লাবিবা ও লামিসার পৃথকীকরণ অস্ত্রোপচারটি সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। তাও আবার বাংলাদেশের হাসপাতালেই। সোমবার (২২ মার্চ) সকাল ৯টা থেকে শুরু হয়ে এ অপারেশন শেষ হয় রাত সাড়ে ৮টায়। ১১ ঘণ্টাব্যাপী এ জটিল অস্ত্রোপচারে অংশ নেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩৮ জন চিকিৎসক। 

শিশু সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. আশরাফুল উল হক কাজল জানান, লাবিবা-লামিসাকে আজ সকাল ৮টার দিকে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয়। এরপর সকাল ৯টায় তাদের অ্যানেসথেসিয়া দেওয়া হয়। আজ আমরা তাদের সফল অস্ত্রোপচার করেছি। অপারেশনটিকে আমরা সফল বলছি কারণ, অপারেশনের পর লাবিবা-লামিসা পা নাড়াতে পেরেছে। যদি তারা পা নাড়াতে ব্যর্থ হত তাহলে আমরা এটিতে সফল বলতে পারতাম না। 

তিনি আরও বলেন, চারটি বিভাগের সমন্বয়ে অস্ত্রোপচারটি করতে সক্ষম হয়েছি। এখন তারা ভালো আছে। মজার ব্যাপার হলো জ্ঞান ফেরার পর পরই লাবিবা বলে, 'ও কোথায়'?। জন্ম থেকে জোড়া লাগানো লামিসাকে দেখতে না পেয়ে এ কথা বলে। আমরা প্রথমে ভেবেছিলাম তাদের আইসিইউ লাগতে পারে। যেহেতু জ্ঞান ফেরার পর তারা পা নাড়াতে পেরেছে সেহেতু তাদের আর আইসিইউ লাগছে না। 

বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে ওই চিকিৎসক বলেন, দুজনই এখন আমাদের পর্যবেক্ষণে রয়েছে। যেহেতু লাবিবা-লামিসার যোনিপথ ও মলদ্বার জোড়া লাগানো ছিল সেটা আমরা আলাদা করেছি। তবে লামিসার যোনিপথ ও মলদ্বারে কিছু সমস্যা রয়েছে পরবর্তীতে আমরা সার্জারি করে এগুলো স্বাভাবিক করে দেব।

জানা যায়, চারটি বিভাগের সমন্বয়ে এই ঐতিহাসিক অস্ত্রোপচার সফল হয়েছে। সেখানে অ্যানেসথেসিয়া, পেডিয়াট্রিক সার্জারি, প্লাস্টিক সার্জারি ও নিউরো সার্জারি বিভাগের অভিজ্ঞ চিকিৎসকরা অংশ নেন। 

অ্যানেসথেসিয়া টিমে ছিলেন; অধ্যাপক ডা. সুব্রত কুমার, সহযোগী অধ্যাপক ডা. মুসলেমা বেগম, ডা.এম এ কাসেম, ড.মলয়, ডা. রেজাউল করিম, ডা.শিফা, ড.ওমর, ডা. সম্পদ ও কনসালটেন্ট ডা. আরিফ উদ্দিন।

পেডিয়াট্রিক সার্জারি টিমে ছিলেন; অধ্যাপক ডা. আশরাফুল উল হক কাজল, অধ্যাপক ডা. ছদরুল আলম, অধ্যাপক ডা সামিদুর রহমান, অধ্যাপক ডা শাহানুর ইসলাম,সহযোগী অধ্যাপক ডা তাহমিনা হোসেন,সহযোগী অধ্যাপক ডা মইনুল হক, সহকারী অধ্যাপক ডা বিপুল ভূষণ দাস, কনসালটেন্ট ডা. অমিতাভ বিশ্বাস, ডা মো আসিফ ইকবাল, ডা মো জিয়াউল হক জিয়া, ডা. নিয়াজ আনাম নীলাভ, ডা. মিথিলা, ডা. নাঈম, ডা. বিভাস ও ডা. রাশেদ।

প্লাস্টিক সার্জারি টিমে ছিলেন; অধ্যাপক ডা. নওশেজ আলী খান, অধ্যাপক ডা. আইয়ুব আলী, সহযোগী অধ্যাপক ডা. বিধান সরকার, সহযোগী অধ্যাপক ডা. তাহমিনা সত্তার শিমু ও সহযোগী অধ্যাপক ডা. প্রদীপ চন্দ্র দাস।

নিউরো সার্জারি টিমে ছিলেন; অধ্যাপক ডা. অসিত চন্দ্র সরকার, সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফজলে এলাহী মিলাদ, সহযোগী অধ্যাপক ডা রফিকুল ইসলাম, সহকারী অধ্যাপক ডা. কানিজ ফাতেমা ইশরাত জাহান রিফাত, ডা. মো. সাইফুল হক, ডা. ইসমি আজম জিকো, ডা. রাশেদুল হাসান, ডা. শাহনেওয়াজ, ডা. সালেহউদ্দিন ও ডা. তানভীর।

উল্লেখ্য, গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর প্রথম ধাপের অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয় এ দুই শিশুর। তখন মূল ধাপের অপারেশন শুরু করলে শিশু দুটিকে বিচ্ছিন্ন করার পর লামিসার কিছু জটিলতার আশঙ্কা ছিল। সে ক্ষেত্রে নারী হিসেবে তার পূর্ণতা পেতে সমস্যা হতো।

উল্লেখ্য যে, নীলফামারীর দরিদ্র পরিবারের সন্তান লাবিবা ও লামিসার বয়স প্রায় তিন বছর। ২০১৯ সালের ১৫ এপ্রিল তাদের জন্ম হয়। জন্মগতভাবে তারা জোড়া লাগানো ছিল। তাদের দুজনের মলদ্বার একটি। এর আগে সার্জারির মাধ্যমে পৃথক মলদ্বার তৈরি করা হয়। ঢামেক হাসপাতাল বিনামূল্যে এ দুই শিশুর চিকিৎসা করছে। দুজনকে আলাদা করার সফল এই অস্ত্রোপচারটি দেশের চিকিৎসাখাতের একটি মাইলফলক বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা।

বিভি/এজেড

মন্তব্য করুন: