অর্ধেকেরও বেশি ব্যাংক সাইবার-আক্রমণের উচ্চ ঝুঁকিতে: বিআইবিএম
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (BIBM)-এর একটি গবেষণায় জানা গেছে, নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদারে বিনিয়োগের ঘাটতি, দক্ষ জনবল এবং ব্যাংকার ও গ্রাহকদের মধ্যে সচেতনতার অভাবে দেশের ৩৬ শতাংশের বেশি ব্যাংকে সাইবার-আক্রমণের উচ্চ ঝুঁকি রয়েছে। এছাড়াও, ১৬ শতাংশ ব্যাংক অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে, যা বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে ভঙ্গুর সাইবার নিরাপত্তা পরিস্থিতির ইঙ্গিত দেয়।
সোমবার (১৩ জুন) ঢাকার একটি হোটেলে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) আয়োজিত সাইবার সিকিউরিটি সামিটে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (BIBM)-এর সহযোগী প্রফেসর মো. মাহবুবুর রহমান আলম এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, ক্ষেত্রভেদে মাত্র ১২ এবং ৪ শতাংশ ব্যাংক সাইবার আক্রমণের কম ঝুঁকিতে রয়েছে। বিআইবিএম ২০২০ সালের ব্যাংকিং খাতের ওপর ভিত্তি করে গবেষণাটি প্রকাশ করেছে।
তিনি বলেন, গবেষণাকালীন সময়ে সাইবার নিরাপত্তায় নাজুক পরিস্থিতি বিরাজ করলেও আইটি অবকাঠামোর উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। ২০২০ সাল পর্যন্ত আইটি অবকাঠামো নির্মাণ এবং পরিচালনা বাবদ ৪২,৬০৯ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়। সে সময় এই খাতে কর্মচারীর সংখ্যা দাঁড়ায় ১.৯৪ লাখ, যার মধ্যে ৫,৮৭৫ জনকে আইটি অবকাঠামো চালানোয় নিযুক্ত করা হয়।
তিনি আরও বলেন, "ঢাকা ইউনিভার্সিটি এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো শীর্ষ স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি আমাদের প্রয়োজনীয় বিশেষজ্ঞ তৈরি করতে অক্ষম,"।
ব্যাংকিং সেক্টরে আইটি বিশেষজ্ঞের অভাবের কারণে বেশিরভাগ ঋণদাতারা উচ্চ বেতনের প্রস্তাব দিয়ে লোক নিয়োগের চেষ্টা করছেন, কিন্তু তারা তাদের দাবি পূরণ করতে ব্যর্থ হচ্ছেন বলেও জানান তিনি।
"একটি সুনিশ্চিত ও সুরক্ষিত আইটি প্ল্যাটফর্ম প্রতিষ্ঠা করতে ব্যাঙ্কগুলিকে কমপক্ষে ৪ থেকে ৫ বছর মেয়াদি উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
প্রফেসর মো. মাহবুবুর রহমান আলম বলেন, দেশে ৬১টি ব্যাংকের মধ্যে মাত্র ১৮টি ব্যাংক সাইবার হুমকির নিরীক্ষণ, প্রতিরোধ, সনাক্তকরণ, তদন্ত এবং প্রতিক্রিয়া জানাতে নিরাপত্তা অপারেশন সেন্টার (SOC) তৈরি করেছে।
দেশের ব্যাংকগুলোতে সাইবার আক্রমনের একটি চিত্র তুলে ধরে প্রফেসর মো. মাহবুবুর রহমান আলম বলেন, দেশের ব্যাংকগুলি চীন থেকে সবচেয়ে বেশি ২৪ শতাংশ সাইবার আক্রমনের শিকার হয়, এরপর যথাক্রমে তালিকায় রয়েছে- উত্তর কোরিয়া ১৩ শতাংশ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র/পাকিস্তান ৭ শতাংশ।
ব্যাংকে সাইবার হামলায় মূলত কারা দায়ী এরকম একটি চার্টে প্রফেসর মো. মাহবুবুর রহমান আলম বলেন, ব্যাংকে সাইবার হামলার জন্য হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার সরবরাহ এবং সেট-আপে নিয়োজিত ব্যাক্তিরা সংযুক্ত। তিনি বলেন, ২৭ শতাংশ বিক্রেতাদের দ্বারা, ২৪ শতাংশ হ্যাকার এবং ১৬ শতাংশ ব্যাংকার বা অ্যাক্টিভিস্টদের দ্বারা সংঘটিত হয়।
তিনি বলেন, সাধারণত ব্যাংকারদের মধ্যে আইটি নিরাপত্তায় সচেতনতা কম, গবেষণা বলছে, ২৮ শতাংশের অবস্থা খুবই খারাপ, এবং ২২ শতাংশ খারাপ। গবেষণা অনুযায়ী, মাত্র ৪ শতাংশ ব্যাংকার এ বিষয়ে ভাল জ্ঞান রাখেন।
দেশের ব্যাংকগুলোকে আইটি খাতে শক্তিশালী করতে "বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ইলেকট্রনিক-ব্যাংকিং রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট" প্রতিষ্ঠার তাগিদ দেন প্রফেসর মো. মাহবুবুর রহমান আলম।
২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সাইবার-আক্রমণ ২৩৮ শতাংশ বেড়েছে এবং বিশ্বব্যাপী চারটি ব্যাংকের মধ্যে অন্তত একটি নিরাপত্তা লঙ্ঘনের সম্মুখীন হয়েছে। ২০২১ সালে সাইবার আক্রমণ এবং ডেটা লঙ্ঘনের গড় সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় ১৫.১ শতাংশ বেড়েছে।
আয়োজনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির বলেন, সংগঠিত জালিয়াতচক্র ব্যাংকের আইটি অবকাঠামোতে আঘাত হানে, তাই ঋণদাতাদের সাইবার নিরাপত্তায় প্রচুর বিনিয়োগ করতে হবে।
বিভিন্ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ব্যাংকিং শিল্পের দুই শতাধিক অংশগ্রহণকারী দু’দিনের এই সম্মেলেনে অংশ নেয়।
বিভি/এসআই/এমআর
মন্তব্য করুন: