সংকটে থাকা পাকিস্তানকে আরও ঋণ দিচ্ছে চীন, বন্ধুত্ব নাকি ফাঁদ?
রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক টানাপোড়েনে থাকা পাকিস্তানের পাশে দাঁড়িয়েছে বিশ্বের অন্যতম ক্ষমতাধর রাষ্ট্র চীন। কঠিন সংকটে পাকিস্তানকে ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঋণ দিয়েছে দেশটি। আপাতদৃষ্টিতে এটি বড় বন্ধুত্বের পরিচয় হলেও এর মধ্যেই রয়ে গেছে অনেক কিন্তু। পাকিস্তানের অর্থনৈতিক দুরাবস্থার সুযোগ চীন কাজে লাগাচ্ছে কিনা সেই প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজছেন এখন বিশেষজ্ঞরা।
পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম জিও নিউজ বলেছে, চীনের কাছ থেকে ৭ দশমিক ১ শতাংশ হারে সুদের বিনিময়ে আরও ২ বিলিয়ন ডলার ঋণ নিয়েছে পাকিস্তান। আগামী মার্চে এই ঋণ ছাড় করবে বেইজিং। গেলো বছরেই চীন, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতকে ২৬ দশমিক ৬ বিলিয়ন রুপি পরিশোধ করেছে পাকিস্তান। এখন নতুন করে চীনের কাছ থেকে ঋণ পাওয়ায় পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের বৈদেশিক রিজার্ভ বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে। তবে এই রিজার্ভ বৃদ্ধির পেছনে চীনা ঋণের ফাঁদই পাকিস্তানকে নিয়ে যেতে পারে অন্ধকার ভবিষ্যতের দিকে।
পাকিস্তানের দুঃসময়ে চীনের হাত বাড়িয়ে দেয়াটা নতুন কিছু নয়। গত বছরের মে মাসেও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ বেলআউট পাওয়ার লড়াইয়ের সময়ও পাকিস্তানকে সহায়তা করেছিল বেইজিং। ওই সময় চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং নেতৃত্বাধীন সরকার দেশটিকে ২ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি ঋণ দিয়েছিলো। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে খোলা চোখে চীনের এমন উদারতা বাস্তবতার নিরিখে কি আসলেই উপকার নিয়ে আসছে?
গত বছর বিশ্বব্যাপী চীনের ঋণ ফাঁদ নিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্রের কলেজ অব উইলিয়াম অ্যান্ড মেরির গবেষণা প্রতিষ্ঠান এইডডাটা। যেখানে উঠে আসে ঋণের নামে চীনের ব্যবসায়িক মানসিকতার চিত্র। রিপোর্টে বলা হয়, চীন ২০০০ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে ধার দিয়েছে ১ দশমিক ৩৪ ট্রিলিয়ন ডলার। মোট ঋণের প্রায় ৮০ শতাংশ পেয়েছে আর্থিক সংকটে থাকা বিভিন্ন দেশ, যা দেশটিকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ঋণ সংগ্রাহকে পরিণত করেছে।
মূলত ২০১৩ সালে শুরু হওয়া চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ বা বিআরআই বাস্তবায়নের পথে চীনা ঋণের ফাঁদে পড়েছে বেশ কয়েকটি দেশ। চীন একই পন্থা জাম্বিয়া, শ্রীলংকা এবং অন্যান্য দেশেও প্রয়োগ করেছে। এরইমধ্যে শ্রীলংকার হাম্বানটোটা বন্দরের মতো পাকিস্তানের গোয়াদর অঞ্চলের বেশ কিছু ভূমি দীর্ঘমেয়াদী দখলে নিয়েছে চীন, যার জন্য এখন ক্ষুব্ধ বেলুচিস্তানের জনগণ।
অথচ চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর পাকিস্তানের জন্য যতো না উপকারী তার চেয়ে অনেক বেশি সুফলদায়ক চীনের জন্য। ১৫ বছর মেয়াদী ৩০০০ কিলোমিটারের এই প্রকল্পের অধীনে পাকিস্তানের খাইবার পাখতুন, গিলগিট-বালতিস্তান থেকে শুরু হওয়া দীর্ঘ এক মহাসড়কের শেষ প্রান্তে রয়েছে বেলুচিস্তানের গোয়াদর সমুদ্র বন্দর। এর ফলে চীন সামরিক সরঞ্জামসহ অন্যান্য পণ্য গোয়াদর বন্দর হয়ে বিদেশে পাঠাতে পারবে অতি সহজে এবং দ্রুততার সাথে। ফলে হিসাব-নিকাশ শেষে লাভের ঝুরিটা ভারী হচ্ছে চীনেরই।
শুধু পাকিস্তান নয়, শ্রীলংকা, জিবুতি, কম্বোডিয়া, কেনিয়া এমনকি মালদ্বীপের মতো দেশেও চীন একই কৌশলের প্রয়োগ ঘটিয়েছে। তবে ২০২১ সালে আফ্রিকা মহাদেশে চীনা ঋণের পরিমাণ ১২ শতাংশে নেমে এসেছে যা আগে ছিল ৩১ শতাংশ। অন্যদিকে, চীন তার ঋণের লোভনীর ফাঁদ নিয়ে এখন এগোচ্ছে ইউরোপের দিকে। ২০২১ সালে ইউরোপের বিভিন্ন দেশকে দেওয়া চীনের ঋণের পরিমাণ বেড়েছে চার গুণ। আর চীনের এ ধরনের কার্যকলাপ বন্ধু হিসেবে চীনের গ্রহযোগ্যতাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে।
বিভি/এমএফআর
মন্তব্য করুন: