এবার ইসরাইলকে যেভাবে উচিৎ শিক্ষা দিল মুসলিম বিশ্ব
এ যেন পরের ধনেই পোদ্দারি। ফিলিস্তিনিদের ভূমি দখল করে সেখানেই করা হচ্ছে খেজুরের বাগান। আর সেই খেজুর বিক্রি করে বিশ্বে খেজুর রপ্তানিতে উপরের সারিতে ইসরায়েল।
সারা বিশ্বে যেসব দেশ খেজুর রপ্তানি করে তাদের বেশিরভাগই মধ্যপ্রাচ্যের। রমজানে ইফতারিতে রোজা ভাঙার প্রথম উপকরণ হিসেবে খেজুরই শীর্ষে। আকারে ছোট এই গ্রীষ্মমন্ডলীয় ফল আরব বিশ্বে সমৃদ্ধির প্রতীক হিসাবে বিবেচিত হয়। মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলোতে এর উৎপাদন সবচাইতে বেশি।
তবে অবাক করা বিষয় হলেও সত্যি, ২০২২ সালে বিশ্বে খেজুর রপ্তানিকারক দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষে ছিলো ইসরায়েল। ফিলিস্তিনিদের উপর নির্যাতন চালিয়ে, তাদেরই ভূমি দখল করে সেখানে খেজুরের বাগান করে দিব্যি ব্যবসা করে যাচ্ছে তারা। আর ইসরায়েলি বর্বরতায় চরম মানবিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি ফিলিস্তিনে আজ নেই রমজান ঘিরে কোনো উৎসব। খেজুর তো দূরে থাক, জীবন বাঁচানোর জন্য স্বাভাবিক খাবারই এখন জুটছেনা তাদের।
এশিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রপ্তানিতে শীর্ষে থাকে ইসরায়েলের বিশেষ জাতের মেডজুল খেজুর। পরিসংখ্যান বিষয়ক ওয়েবসাইট স্ট্যাটিস্টার তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে বিশ্বব্যাপী খেজুর রপ্তানিতে মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশকেই পেছনে ফেলে শীর্ষে উঠে এসেছে ইসরায়েল। দেশটির খেজুর রপ্তানির পরিমাণও ছিলো অন্যদের তুলনায় ঢের বেশি, ৩৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। তার আগের বছর শুধু অক্টোবরেই দেশটি খেজুর রপ্তানি করেছে ৫,৬৭২ মেট্রিক টন। ২০২০ সালে শুধু যুক্তরাষ্ট্রই ইসরায়েল থেকে তিন হাজার টন খেজুর আমদানি করেছে। যার মূল্য ৮.৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
তবে গত রমজানে বিষয়টি নিয়ে সোচ্চার হয়ে ওঠে মুসলিম বিশ্ব। ইসরায়েলি খেজুর বয়কটের ডাক দেয় ইউরোপীয় মুসলিমদের সংগঠন ফ্রেন্ডস অব আল-আকসা (এফএও)। ইউরোপের বিলাসবহুল শপিংমলগুলোতে ইসরায়েলি খেজুর অনেক দামে বিক্রি হয়ে থাকে। এ বয়কট কর্মসূচির ডাক দিয়ে বলা হয় ইহুদিবাদী ইসরায়েলিরা যুগের পর যুগ ধরে ফিলিস্তিনিদের জমি জবরদখল করে তাদের ঘরবাড়ি থেকে উচ্ছেদ করছে। সেই ইসরায়েলের খাদ্যপণ্য কিনে আমরা ফিলিস্তিনি ভাইদের প্রতি অবিচার করছি। জবাবে ভালো সাড়া দেয় মুসলিম বিশ্ব। একযোগে বিভিন্ন দেশ ইসরায়েলি খেজুর বয়কট করায় কমে আসে ইসরায়েলি খেজুরের রপ্তানি। বর্তমানে সারা বিশ্বে খেজুর উৎপাদনে শীর্ষে আছে মিশর, সৌদি আরব ও আলজেরিয়া।
চলতি বছরে বয়কটের জেড়ে ক্ষতির মুখে পরে ইসরায়েলের খেজুরের বাজার। আয় কমার পাশাপাশি বড় একটি বিজ্ঞাপনের কার্যক্রমও স্থগিত করে দেশটি। তবে সংবাদমাধ্যম মিডিল ইস্ট আই বলছে, এখন পুনরায় বাজার দখল করতে ভিন্ন পথে হাঁটছে দেশটি। খেজুরের প্যাকেট থেকে উৎপাদক দেশের নাম স্পষ্টভাবে উল্লেখ না করে ভিন্ন মোড়কে খেজুর বিক্রির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তারা।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি বিষয়ক সংস্থা এফএওর তথ্য মতে, ইসরায়েলি খেজুরের ৫০ শতাংশ ইউরোপে রপ্তানি হয়। আর এই মহাদেশে ইসরায়েলি খেজুরের দ্বিতীয় বৃহত্তম আমদানিকারক দেশ যুক্তরাজ্য। অন্যান্য দেশের মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, নেদারল্যান্ডস, ফ্রান্স, স্পেন ও ইতালি।
বিভি/এমএফআর
মন্তব্য করুন: