যে গোপন কৌশলে ইরানের তেল কিনছে চীন (ভিডিও)
যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা সহ নানা কারণে ইরানের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক রাখা অনেক ঝুঁকিপূর্ণ একটি বিষয়। কিন্তু এরপরও ইরানের পাঁশে দাঁড়িয়েছে চীন। কিন্তু কেনো? কেনো বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রেতা চীন এখনও ইরান থেকে তেল কেনে?
ইরানের বিরুদ্ধে নানা পদক্ষেপের পরও ২০২৪ সালের প্রথম চার মাসে দেশটির তেল রফতানি ছয় বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ মাত্রায় পৌঁছায়। কিন্তু এতো কিছুর পরও কীভাবে তেল রফতানির উপর নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে যাচ্ছে ইরান? এর মূলে রয়েছে ইরানের সবচেয়ে বড় ক্রেতা চীন ও তাদের বাণিজ্য কৌশল। ইরানের মোট তেল রফতানির ৮০ শতাংশই যায় চীনে।
চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে যে বিরাট খেলা চলছে ইরান তার একটা অংশ। ইরানের অর্থনীতিকে সহায়তার মাধ্যমে, চীন মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সামনে একটা ভূরাজনৈতিক ও সামরিক চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছে। এছাড়া ইরানের তেল মানে ভালো আর দামেও ঢেড় সস্তা। দেশে দেশে সংঘর্ষের কারণে বিশ্বে তেলের দাম বেড়েই চলেছে, কিন্তু নিষেধাজ্ঞায় থাকা ইরান যেহেতু তাদের তেল বিক্রিতে মরিয়া, তাই তারা অন্যদের চেয়ে বেশ কম দামেই তেল দিয়ে থাকে। ইরান তাদের ক্রুড তেল বৈশ্বিক মানদণ্ডের চেয়ে ব্যারেলপ্রতি পাঁচ ডলার কমে বিক্রি করছে। আর এই পুরো বিষয়টির ভূরাজনৈতিক দিক আছে বলে মনে করেন অনেক বিশেষজ্ঞ।
আটলান্টিক কাউন্সিলে ইকোনমিক স্টেটক্র্যাফটের সূত্র থেকে জানা যায়, তেলের ট্যাংকারগুলো বিশ্ব জুড়ে সমুদ্রে ট্র্যাক করা হয়। বিভিন্ন সফটওয়্যার তাদের অবস্থান, গতি ও রুট পর্যবেক্ষণ করে। এই ট্র্যাকিং এড়ানোর জন্য ইরান ও চীন একটা অস্পষ্ট মালিকানা ধরনের ট্যাংকার্স নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে, যেটা সঠিক অবস্থান দেখায় না। ফলে তাদের পশ্চিমা নীতি ও নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পড়তে হয় না। তেলের হাতবদলটা বেশি হয় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জলসীমায়। মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরের পূর্বদিকে এমন একটা অঞ্চল আছে, সেখানে অনেক ট্যাংকার চলাচল করে এবং নিজেদের মধ্যে কার্গো পরিবহন করে। ফলে তেলের ট্যাংকার যে ইরান থেকেই আসছে সেটি অনেকেই বুঝতে পারে না।
অর্থনৈতিক লেনদেনের ক্ষেত্রেও পশ্চিমাদের ফাঁকি দিতে সক্ষম চীন। চীন ও ইরানের লেনদেন হয় ক্ষুদ্র চাইনিজ ব্যাংকের মাধ্যমে। ইরানকে এই তেলের জন্য চাইনিজ মুদ্রায় অর্থ পরিশোধ করা হয় বলেও মনে করা হয়, যাতে ডলার নিয়ন্ত্রিত আর্থিক ব্যবস্থাকে পাশ কাটানো যায়। এই অর্থটা চাইনিজ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে দেওয়া হয় যাদের সঙ্গে ইরান কর্তৃপক্ষের সম্পর্ক রয়েছে। এরপর সেই অর্থ চাইনিজ পণ্য আমদানিতে কাজে লাগানো হয়। আর এভাবেই বাইডেন প্রশাসনের আর্থিক নজরদারিকে পাশ কাটিয়ে যায় চীন।
ইরানের কাস্টম প্রধানের হিসাব মতে তেল রফতানির পরিমাণ ৩৫ দশমিক ৮ বিলিয়ন ইউএস ডলার। মূলত তেলের ওপর নির্ভর করেই ঘুরছে দেশটির অর্থনীতির চাকা।
বিভি/এমএফআর
মন্তব্য করুন: