দুই সন্তানকে সাথে নিয়ে মেশিনকেই বানালেন ঘর (ভিডিও)
চারিদিকে থৈ থৈ করছে বন্যার পানি। আর এর মাঝেই হুইল লোডার নিয়ে উদ্ধারের কাজে বেরিয়েছেন এক ড্রাইভার। কোনো সংস্থা বা সরকারি উদ্ধারকর্মী না হয়েও নিজের গরজে তেল পুড়িয়ে আটকে পড়াদের সাহায্যে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি।
বলছি, দক্ষিণ ব্রাজিলের এলডোরাডো দো সুল রাজ্যের বাসিন্দা ড্যানিয়াল ফারিয়াসের কথা। সাম্প্রতিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার নিজের বাড়িও। তাই এই মিনি হুইল লোডারকেই বানিয়ে নিয়েছেন নিজের ঘর। দুই বাচ্চাকেও রেখেছেন পাশে। নিজের সব সম্পদ আর শক্তি ব্যয় করে দুর্গতদের পাশে দাড়াচ্ছেন তিনি।
ড্যানিয়েল তার হুইল লোডার নিয়ে ঘুড়ে বেড়ান এক এলাকা থেকে আরেক এলাকায়। যেসকল দুর্গম জায়গায় সরকারি সংস্থার উদ্ধারকর্মীরা পৌঁছাতে পারেনা সেখানেও হাজির হন তিনি। বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজ নেন কারও কোনো সাহায্য লাগবে কিনা।
ড্যানিয়েল বলেন, "শেষ ঘন্টা পর্যন্ত, শেষ সেকেন্ড পর্যন্ত, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আমি কাজ করে যাবো। আমি এই হুইল লোডারটি বন্ধ করব না। মানুষকে খুঁজতে এবং উদ্ধার করতে আমি প্রতিনিয়ত এখানে থাকবো। এটা একটানা পিঁপড়ার মত কাজ। দিন, রাত, ভোরে কোনো সময়সূচী নেই। ঠিকমত খাবারও খেতে পারছি না। কারণ আমাকে উদ্ধারের কাজ চালিয়ে যেতে হবে। আমি নিজেদেরকে অন্যদের জন্য বিলিয়ে দিচ্ছি। এটাতেই তো তৃপ্তি। যারা আটকা পড়ে আছে তাদের এক জায়গা থেকে আরেক জাগায় নিয়ে যাচ্ছি। এরপর আবার ফিরে আসছি। এভাবেই চলছে। কোনো বিশ্রাম নেই। আমরা এখানে যা করছি তা সাধারণের বাইরেও বেশি কিছু। আমার নিজের বাড়িও পানিতে ডুবে গেছে। আমি এই মেশিনে বাস করছি, এটিই আমার বাড়ি। ছেলেমেয়েদের নিয়ে এখানেই থাকতে হয় আমার। বিপর্যয় থেকে যে বেঁচে আছি সেটিই অনেক বড় ব্যাপার।"
ব্রাজিলের রিও গ্র্যান্ডে দো সুলের রাজ্যে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় চারশো'র বেশি পৌরসভা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যার কারণে অনেক মানুষ সুপেয় পানি এবং বিদ্যুৎ পাচ্ছে না। এমনকি ইন্টারনেট সংযোগ এবং টেলিফোনেও যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে অনেক এলাকায় নিখোঁজদের খুঁজে পেতে বেগ পেতে হচ্ছে। কে কোথায় আটকা পরে আছেন সেটিও ঠিকমত জানা যাচ্ছেনা।
রাজ্য সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বন্যায় ১২৬ জন নিখোঁজ রয়েছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার বাসিন্দাকে তাদের বাড়িঘর থেকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বন্যা কবলিত এলাকায় ত্রাণ তৎপরতা চালাতে ১ লাখ ৫০ হাজার সৈন্য, ফায়ারফাইটার, পুলিশসহ অন্যান্য সাহায্যকর্মীদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যদিও পর্যাপ্ত সাহায্য না পাওয়ার অভিযোগ করছেন বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তরা।
বিভি/এমএফআর
মন্তব্য করুন: