ফিলিস্তিনি শিশুদের চিৎকার পৃথিবী শুনতে পাচ্ছে?

ছবি: সংগৃহীত
ফিলিস্তিনি জনগণের সংগ্রাম, সংস্কৃতি ও স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষার কথা নিজের কবিতায় এক গভীর আবেগে ফুটিয়ে তুলতেন প্রখ্যাত ফিলিস্তিনি কবি মাহমুদ দারবিশ। তিনি তার কবিতায় লিখেছেন:
‘আজকের দিনটি আগামী দিনের থেকে হয়তো ভালো,
কেবল মৃত্যুগুলোই আজ নতুন।
প্রতিদিনই জন্ম নেয় যে নতুন শিশুরা,
তারা ঘুমোতে যাওয়ার আগেই ঘুমিয়ে পড়ে, মৃত্যুর মধ্যে।
তাদের গণনা করা মূল্যহীন।’
সব বাবা-মায়ের জন্যই পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন কাজ নিজের সন্তানের মরদেহ বহন করা। আর এই ভয়াবহ কাজটি প্রতিদিনই করতে হয় ফিলিস্তিনিদের। ইসরাইলি হামলার মূল টার্গেটই থাকে মূলত ফিলিস্তিনি শিশু, কিশোর ও তরুণেরা। সম্প্রতি, গাজায় ইসরাইলের যে হামলা হয়েছে, তাও এর ব্যতিক্রম নয়। আর তাদের কাছে তো এটি শুধুমাত্রই একটি অভিযান।
এবারের ইসরাইলি হামলায় পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতিক্রিয়া আগের মতোই ছিল। তারা বরাবরই ইসরাইলের প্রতি সমর্থন জানিয়ে হামলাগুলোকে যথাযথ বলার চেষ্টাই করে থাকে। সেইসাথে, যুদ্ধবিরতি বা শান্তির আহ্বান তুলতে তাদের থাকে অনীহা। এসব দেশ প্রায়ই মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি উপেক্ষা করে নিজেদের রাজনৈতিক ও কৌশলগত স্বার্থের জন্য এমন পরিস্থিতি অব্যাহত রাখতে চায়। ফলে, মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি স্থাপনের চেষ্টাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয় ও পাশবিকতা বাড়তেই থাকে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পবিত্র রমজান মাসের শেষের দিকে গাজায় ব্যাপক আক্রমণ চালিয়ে থাকে ইসরাইল। ইসরাইলি হামলায় পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায় গাজা শহর। এসব হামলায় প্রাণ হারিয়েছে হাজারো ফিলিস্তিনি। নিহতদের অধিকাংশই ছিল শিশু। ইসরাইলি হামলায় একসঙ্গে এত ফিলিস্তিনি শিশুর মৃত্যু স্মরণকালে আর ঘটেনি।
এদিকে, ইসরাইল যুদ্ধাপরাধ করছে এবং এটির তদন্ত হওয়া প্রয়োজন বলেও দাবি জানিয়ে আসছে বিশ্ব মানবাধিকার সংস্থা ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো। তবে, প্রশ্ন থেকে যায়, এমন এক বিশ্বে ইসরাইলের বিচার করবে আসলে কে? ইসরাইলি হামলার বিরুদ্ধে গাজাবাসীর প্রতি সমর্থন জানিয়ে বিশ্বজুড়ে অনেক মানুষই প্রতিবাদে নেমেছে। মুসলিম দেশগুলো ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, ডেনমার্ক ও ফ্রান্সের মতো দেশগুলোতে হাজারো বিবেকবান মানুষেরা রাস্তায় নেমে এসেছে। অনেকেই ইসরাইলি দূতাবাসের সামনে জমায়েতও করেছেন। তবে, বিশ্ব মোড়ল ও পশ্চিমাদের সুবিধাভোগীদের কাছ থেকে তেমন কোনো প্রতিবাদ দেখা যায়নি, শুধু উদ্বেগ প্রকাশ করা ছাড়া।
এবারও আরব দেশগুলোর প্রতিক্রিয়া খুব একটা চোখে পড়ার মত ছিল না। তবে, কেন ফিলিস্তিনিদের প্রতি এমন আচরণ করে থাকে আরব বিশ্ব? বেশ কিছু আরব দেশ এখন বাণিজ্যিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে ইসরাইলকে সরাসরি স্বীকৃতি দেওয়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রচেষ্টাতেই এটি শুরু হয়।
এদিকে, দীর্ঘদিন ধরে ফিলিস্তিনের ভূমিতে অবৈধ দখলদারি করছে ইসরাইল। ধীরে ধীরে ফিলিস্তিনের অধিকাংশ ভূখণ্ডই দখল করে নিয়েছে তারা। একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের উপর এমন দখলদারি ও আক্রমণ পৃথিবীজুড়ে কখনোই গ্রহণযোগ্য হয়নি।
এছাড়া, ফিলিস্তিন প্রসঙ্গে পশ্চিমা মিডিয়াগুলোর একপেশে মনোভাব নতুন কিছু নয়। যদিও ফিলিস্তিন ছাড়া অন্যান্য বিষয় নিয়ে পশ্চিমা মিডিয়াগুলো সাধারণত বেশ সোচ্চার থাকে, ফিলিস্তিনি শিশুদের বিষয়ে সেই ধরনের মানবিকতা খুব কমই দেখা যায়। ইসরাইলি হামলায় গাজায় এত বেশি শিশু নিহত হয়েছে, অথচ তাদের অধিকাংশেরই নাম জানা যায়নি। ভবিষ্যতে হয়তো ইসরাইলি আক্রমণে আরও ফিলিস্তিনি শিশুর রক্তে ভূমি সিঁথিয়ে যাবে।
একটি জাতির অস্তিত্ব শেষ করতে হলে, সেই জাতির শিশুদেরকেই প্রথম টার্গেট করা হয়, এটা সবারই জানা। তবে, ফিলিস্তিনি নারীরা তাদের সন্তানদের রক্ষার জন্য কতটা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, তা সবার কাছেই স্পষ্ট। যে ফিলিস্তিনি নারীরা নিজেদের সন্তানের মরদেহ কাঁধে বহন করে থাকেন, তারা এক একটি সাহসী ও অবিচল প্রজন্মই জন্ম দিয়ে থাকেন। মাহমুদ দারবিশও তার কবিতায় বলেছেন:
‘আমাদের এই ভূমি বন্ধ্যা নয়
প্রতিটি ভূমির রয়েছে একটি জন্মক্ষণ
প্রতিটি সকালেই রয়েছে বিপ্লবের জন্য প্রতিশ্রুতি।’
বিভি/আইজে
মন্তব্য করুন: