সৌদিতে এবার হাজিদের ওষুধ পৌঁছানো, নজরদারি ও অগ্নিনির্বাপণে ড্রোনের ব্যবহার

এবার হজের সময় ড্রোনের সাহায্যে ওষুধ সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছে সৌদি আরব। দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী ফাহাদ আল-জালাজেল ‘আরব নিউজ’-কে জানান, এটি দুই বছর ধরে চলা গবেষণা ও পরীক্ষার ফল। তিনি বলেন, এই উন্নত প্রযুক্তির মূল উদ্দেশ্য হলো হজ মৌসুমে দ্রুত ও কার্যকরভাবে ওষুধ পৌঁছানো। আগে যেখানে ওষুধ পৌঁছাতে গড়ে ৯০ মিনিট সময় লাগত, সেখানে এখন ড্রোন ব্যবহারে মাত্র ৬ মিনিটেই তা সম্ভব হচ্ছে।

লাখ লাখ হজ প্রত্যাশীর উপস্থিতিতে পবিত্র স্থানগুলোতে যানজট ও ভিড়ের কারণে আগে ওষুধ পৌঁছানো ছিলো চ্যালেঞ্জিং। এখন ড্রোন এই সমস্যাগুলো কাটিয়ে দ্রুত ও কার্যকরভাবে ওষুধ পৌঁছে দেবে।

এই ড্রোনগুলোতে একটি বিশেষ ধরনের কুলিং সিস্টেম সংযুক্ত রয়েছে, যা উচ্চ তাপমাত্রার পরিবেশে কাজ করতে সক্ষম। আল-জালাজেল জানিয়েছেন, গত দুই বছরে বিভিন্ন তাপমাত্রায় ব্যবহার করে এই প্রযুক্তির সফল পরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়েছে।

এই উদ্যোগটিও সৌদি ভিশন ২০৩০-এর অন্তর্ভুক্ত, যার উদ্দেশ্য হলো দেশের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার আধুনিকায়ন ও ডিজিটাল প্রযুক্তিতে রূপান্তর। রোবোটিক সার্জারি, স্ট্রোক ব্যবস্থাপনা ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবা চালু করে বিশ্বব্যাপী অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে উঠছে সৌদি আরব।

মন্ত্রী আরও জানান, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ভবিষ্যতেও বৈশ্বিক স্বাস্থ্য চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আরও উদ্ভাবনী সমাধান উপস্থাপন করবে। তিনি বলেন, হাজিরা আগামী বছরগুলোতেও হজের সময় আরও উন্নত প্রযুক্তির অভিজ্ঞতা পাবেন।

এদিকে চলতি বছর হজ পালন করতে অনুমতি ছাড়া মক্কায় প্রবেশ করতে চাওয়া ২ লাখ ৬৯ হাজারেরও বেশি মানুষকে আটকানো হয়েছে বলে জানিয়েছে সৌদি কর্তৃপক্ষ।  বার্তা সংস্থা এপির তথ্য অনুযায়ী, হজ মৌসুমে অবৈধ প্রবেশ ঠেকাতে এই কঠোর অভিযান পরিচালনা করা হয়।

এদিকে সৌদি সরকার জানিয়েছে, অনুমতি ছাড়া হজ পালন করলে সর্বোচ্চ ৫ হাজার মার্কিন ডলার পর্যন্ত জরিমানা ছাড়াও বিভিন্ন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এমনকি সৌদি নাগরিক ও সৌদিতে বসবাসকারী প্রবাসীরাও এই নিয়মের আওতায় পড়বেন। এছাড়া, হজ সংক্রান্ত নিয়ম ভঙ্গের কারণে ২৩ হাজারের বেশি সৌদি বাসিন্দার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ৪০০টি হজ কোম্পানির লাইসেন্সও বাতিল করা হয়।

সৌদি প্রশাসন জানায়, এই বছর প্রথমবারের মতো হজে ড্রোন ব্যবহার করা হচ্ছে। এগুলো নজরদারি, পর্যবেক্ষণ ও অগ্নিনির্বাপণ কার্যক্রমে ব্যবহৃত হচ্ছে। লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোহাম্মদ আল-ওমারি বলেন, হাজিদের ওপর তাদের দৃষ্টি রয়েছে। যারা নিয়ম ভঙ্গ করবে, তাদেরই আটকানো হবে।

শারীরিক ও আর্থিকভাবে সক্ষম প্রতিটি মুসলমানের জন্য জীবনে অন্তত একবার পালন করা ফরজ। তবে সাম্প্রতিক সময়ে তাপমাত্রা ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়ায় হজ পালনের সময় নানা ধরনের উদ্বেগ দেখা দেয়। হাজিদের খোলা আকাশের নিচে প্রচণ্ড গরমে হজের বিভিন্ন নিয়ম পালন করতে হয়।

প্রতি বছর বিপুলসংখ্যক মানুষ হজে অংশগ্রহণ করেন। ফলে অনেক সময়ই অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা যেমন—পদদলন এবং অন্যান্য কারণে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে থাকে।