ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদন
ইরানের বিপুল মিসাইল ভূপাতিত করার সামর্থ্য নেই যুক্তরাষ্ট্র-ইসরাইলের

সংঘাতের শুরু থেকেই বহুস্তর বিশিষ্ট আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দিয়ে, বলা চলে, অনেকটা সফলতার সাথেই ইরানের মিসাইলগুলো ভূপাতিত করছে ইসরাইল। তবে যুদ্ধ যতো দীর্ঘ হচ্ছে, তাদের এই সক্ষমতায় উদ্বেগজনক হারে টান পড়ছে। ফুরিয়ে আসছে মিসাইল ভূপাতিত করতে ব্যবহৃত ইন্টারসেপ্টরের মজুদ। ১৮ জুন মার্কিন কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বিস্ফোরক এক প্রতিবেদনে এ কথা জানিয়েছে প্রভাবশালী মার্কিন গণমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল।
ইরানের ব্যালিস্টিক মিসাইলগুলো ভূপাতিত করায় অন্যতম প্রধান ভূমিকা রাখছে ইসরাইলের অ্যারো ইন্টারসেপ্টর। কিন্তু ইসরাইলের কাছে এই ইন্টারসেপ্টরের সরবরাহ বেশি নেই বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মার্কিন কর্মকর্তা জানিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট মার্কিন কর্মকর্তা ও সমরাস্ত্র বিশ্লেষকরা জানাচ্ছেন, ইরানের কাছে যতো সংখ্যক মিসাইলের মজুদ আছে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের কাছে মিলিতভাবেও ততো সংখ্যক ইন্টারসেপ্টর নেই। এ প্রেক্ষাপটে দীর্ঘমেয়াদে ইসরাইলের প্রতিরক্ষা টিকিয়ে রাখার সক্ষমতা নিয়েই দেখা দিয়েছে উদ্বেগ।
আকাশসীমা ঝুঁকিমুক্ত রাখতে স্তরবিশেষে ভিন্ন ভিন্ন আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ব্যাবহার করে ইসরাইল। এর মাঝে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অ্যারো-থ্রি মিসাইল সিস্টেম। শত্রুপক্ষের লক্ষ্যবস্তু ভূপাতিত করতে এটি ১ হাজার ৫শ মাইল দূর পর্যন্ত কাজ করে। মূলত দূরপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, ও পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের ওপর দিয়ে ছুটে আসা ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকাতে কাজ করে এটি। ইরান ও ইয়েমেন থেকে ছোড়া মিসাইল ভূপাতিত করার প্রধান কারিগর অ্যারো-থ্রি। ইসরাইলের আকাশসীমায় ঢোকার আগেই ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করে এটি।
এর পুরনো মডেলটি হলো অ্যারো-টু। মধ্যম ও স্বল্প পাল্লার ব্যালিস্টিক মিসাইল ভূপাতিত করে এটি। এরপর আছে ডেভিড’স স্লিং। প্রধানত মধ্যম পাল্লার ব্যালিস্টিক মিসাইল ভূপাতিত করতে কাজে লাগানো হয় এর ইন্টারসেপ্টর। এছাড়া আছে বহুল প্রচারিত আয়রন ডোম। কিন্তু এটি কেবলমাত্র স্বল্পপাল্লার লক্ষ্যবস্তু, যেমন গাজা থেকে ছোড়া রকেট ভূপাতিত করতে ব্যবহৃত হয়। বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরানের সাথে চলমান সংঘাতে আয়রন ডোম বড় কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না। মূল ভূমিকায় আছে অ্যারো ও ডেভিড’স স্লিং প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।
ইসরাইলের মতে, প্রায় ৯০ শতাংশ পর্যন্ত ব্যালিস্টিক মিসাইল ভূপাতিত করতে পারে তাদের বহুস্তর বিশিষ্ট আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। ১৭ জুন পর্যন্ত ইরানের ছোড়া ৩৭০টি মিসাইলের মধ্যে মাত্র ৩০টি এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করতে সক্ষম হয়েছে।
কিন্তু সংঘাত দীর্ঘ হতে থাকলে ইসরাইলের এই সক্ষমতা থাকবে না। কারণ, অ্যারো মিসাইল সিস্টেমের ইন্টারসেপ্টরের ঘাটতি আছে তাদের। বর্তমানে কতোগুলো ইন্টারসেপ্টর আছে সেই তথ্য গোপন রেখেছে ইসরাইল। কেননা তা প্রকাশ পেলে শত্রুপক্ষ জেনে যাবে ইসরাইলকে কাবু করতে কতোগুলো মিসাইল ছুড়তে হবে।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানায়, চাইলেই দ্রুত অ্যারো মিসাইল সিস্টেমের ইন্টারসেপ্টর বা মিসাইল উৎপাদন করা সম্ভব না। একই সাথে উচ্চমূল্য এসব মিসাইল। এর একেকটি তৈরিতে ব্যয় হয় ২০ লাখ মার্কিন ডলার বা ২৪ থেকে ২৫ কোটি টাকা।
সমরাস্ত্র বিশ্লেষকদের মতে, আক্রমণাত্মক মিসাইলের চেয়ে প্রতিরক্ষামূলক মিসাইল তৈরি বেশি কঠিন ও ব্যয়বহুল। কারণ আক্রমণকারী মিসাইল ভূপাতিত করতে প্রয়োজন তারও চেয়ে বেশি অত্যাধুনিক ও কার্যকর মিসাইল। এছাড়া অনেকে সময়ই একটি মিসাইল ভূপাতিত করতে একাধিক ইন্টারসেপ্টর ছুড়তে হয়।
ইন্টারসেপ্টরের মজুদ কম থাকার কারণেই ইরানের মিসাইল ও ড্রোন সক্ষমতা ধ্বংস করার লক্ষ্যে ইসরাইল দেশটিতে ধারাবাহিক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরাইলি বাহিনীর দাবি, এরই মাঝে তারা ইরানের তিনভাগের এক ভাগ মিসাইল উৎক্ষেপণ ব্যবস্থা ধ্বংস করেছে।
কিন্তু এখনও ইরান ঝাঁকে ঝাঁকে মিসাইল ছুঁড়ে মারছে ইসরাইলের দিকে। এসব মিসাইলের একাংশ ভূপাতিত করতে সাহায্য করছে মধ্যপ্রাচ্যে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের থাড, যা ভূমিতে মোতায়েন করা এবং যুদ্ধজাহাজে মোতায়েন রাখা এসএম-টু, এসএম-থ্রি ও এসএম-সিক্স মিসাইল সিস্টেম। এছাড়া মার্কিন যুদ্ধবিমান থেকে ইন্টারসেপ্টর মিসাইল ছুড়েও ভূপাতিত করা হচ্ছে ইরানি মিসাইল ও ড্রোন।
কিন্তু মার্কিন ইন্টারসেপ্টরের মজুদও অনিঃশেষ নয়। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের পাওয়া সামরিক নথি অনুসারে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের থাকা থাড ইন্টারসেপ্টরের সংখ্যা মাত্র ৬শ’র মতো। পশ্চিমা বিশ্লেষকরা বলছেন, এ অবস্থায় দ্রুত এই যুদ্ধে ইতি টানতে হবে। যুদ্ধ দীর্ঘ হলে ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্র যৌথভাবেও ইরানের বিপুল মিসাইল ভূপাতিত করতে সক্ষম হবে না।
বিভি/এইচজে
মন্তব্য করুন: