হিজরি ১৪৪৭: নতুন গিলাফে আবৃত হলো পবিত্র কাবা শরিফ

প্রতি বছরের মতো এবারও হিজরি নতুন বছরকে ঘিরে কাবা শরিফের গিলাফ পরিবর্তন করা হয়েছে। সৌদি আরবের মক্কায় পয়লা মহররম কাবার গায়ে নতুন গিলাফ পরানো হয়। 

এই গিলাফটি তৈরি করা হয় রেশম ও তুলা দিয়ে এবং তাতে সুশোভিত থাকে কোরআনের আয়াত। ইসলামি নতুন বছরের চাঁদ দেখার সময় এই গিলাফ পরিবর্তনের আনুষ্ঠানিকতা পালন করা হয়। 

এই পবিত্র স্থাপনা নবী ইব্রাহিম (আঃ) ও তাঁর পুত্র ইসমাইল নির্মাণ করেছিলেন। বাবা ও ছেলের আন্তরিক আবেগের জায়গা এই পবিত্র কাবা ঘর, যেখানে প্রতি বছর মুসলিমরা হজের জন্য যাত্রা করেন। সময়ের পরিক্রমায় পবিত্র কাবা বহুবার সংস্কার করা হয়েছে।
 
মক্কা শহরের উম্মুদ জুদ নামক এলাকায় একটি বিশেষ কারখানায় কাবা শরিফের গিলাফের জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত উপকরণ তৈরি করা হয়। গিলাফ তৈরির কাজে ব্যবহৃত হয় ১২০ কেজি সোনার সুতা, ৭০০ কেজি রেশম সুতা এবং ২৫ কেজি রূপার সুতা। 

প্রায় ১১ মাস সময় নিয়ে নিখুঁত কারুকার্যে নতুন গিলাফটি তৈরি করা হয়েছে। গিলাফ তৈরির প্রক্রিয়াটি মোট ৭টি ধাপে সম্পন্ন হয়। প্রথমে পানি পরিশোধন করা হয়, তারপর রেশম পরিষ্কার করা হয়। এরপর কালো রঙে রঞ্জন করা ও বয়নের কাজ শুরু হয়। তারপর তৈরি করা হয় কোরআনের আয়াতের জ্যামিতিক নকশা। এবং পরে স্বর্ণ ও রূপার সুতার সূচিকর্মের চূড়ান্ত সংযোজন করা হয়। সবশেষে করা হয় পরীক্ষা নিরীক্ষা।

এই গিলাফটি ৪৭টি সূক্ষ্মভাবে বোনা রেশমের টুকরো নিয়ে গঠিত। এতে ৬৮টি কোরআনের আয়াত খোদাই করা হয়েছে। আয়াতগুলো রূপার সুতা এবং ২৪ ক্যারেট সোনার মোড়কে মোড়ানো সুতা দ্বারা তৈরি করা হয়েছে। নতুন গিলাফটির মোট ওজন প্রায় ১,৪১৫ কেজি।

বিশেষভাবে তৈরি এই গিলাফে প্রতি মিটারে ১০টি ধাপে মোট ৯৯০০টি সুতা বসানো হয়। গিলাফের বাইরের কালো কাপড়ের ওপর স্বর্ণালংকারিত রেশমের সুতার সাহায্যে দক্ষ কারিগররা ক্যালিগ্রাফি করেন। এরপর ঝারনিখ কালি দিয়ে প্রথমে কাপড়ের ওপর হরফের আউটলাইন তৈরি করা হয়। তারপর কারিগরদের নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় হরফের ভেতরে মোটা রেশমের লাইন বসানো হয় এবং স্বর্ণের সুতার সাহায্যে বিশেষ কৌশলে হরফগুলোকে উজ্জ্বল ও প্রাণবন্ত করা হয়।

আগের দিন আসরের নামাজের পর পুরানো গিলাফ সরানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়। নতুন গিলাফ সৌদি আরবে হিজরি বছরের প্রথম দিন, অর্থাৎ পহেলা মহররমের প্রথম প্রহরে কাবার গায়ে স্থাপন করা হয়। অতীতে এটি মূলত হজের দিন পরিবর্তন করা হতো। তবে বর্তমানে এটি হিজরি নতুন বছরের প্রথম প্রহরে করা হয়ে থাকে।